বরিশাল
বরিশালে আ’লীগের নিয়ন্ত্রণে থাকা বাজার-মাছঘাট বিএনপির দখলে
বরিশালের হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ইজারা নেওয়া বাজার, মাছঘাট, বালুমহালসহ অন্যান্য স্থাপনা দখলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। তবে বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি, সরকার পতনের পর তারা সেগুলো ফেলে আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় স্থানীয় লোকজন উন্মুক্তভাবে যে যার মতো ব্যবসা করছেন। বিএনপির কেউ দখল করেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫ আগস্ট শিক্ষার্থী-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এই সুযোগে তাদের ইজারা নেওয়া বাজার, মাছঘাট, বালুমহালসহ অন্যান্য স্থাপনা একে একে দখলে নিতে থাকেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা
এরই ধারাবাহিকতায় মেহেন্দীগঞ্জের লঞ্চঘাট, দক্ষিণপাড়ের খেয়াঘাট, তাজুলের খেয়াঘাট, পোত্তাখালী খেয়াঘাট, উলানিয়া লঞ্চঘাট, হিজলা লঞ্চঘাট, পুরান হিজলা খেয়াঘাট, হরিনাথপুর খেয়াঘাটসহ ছোট-বড় সব খেয়াঘাট নিয়ন্ত্রণে নেন বিএনপির নেতা ও তাদের অনুসারীরা। এছাড়া মেঘনা ও তেঁতুলিয়া তীরের শত শত মাছঘাটের দখলও এখন বিএনপি নেতা-কর্মীদের হাতে।
এমনকি হিজলা উপজেলা সদরের রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ও দখল করে ব্যক্তিগত কার্যালয় বানানোর অভিযোগ উঠেছে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনির দেওয়ানের বিরুদ্ধে।
এ অভিযোগ প্রসঙ্গে মনির দেওয়ান বলেন, ‘যে ভবনে আমার ব্যক্তিগত কার্যালয়, তার পাশের কক্ষটি স্থানীয় মিলন সরদার নামের একজন দখল করে রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যালয় খুলেছিলেন। এখন এর মালিক আমার চাচা হানিফ দেওয়ান সেটির দখল বুঝে নিয়েছেন। আমি দখল করিনি। যিনি মালিক, তিনি বেদখল ওই কক্ষটির দখল নিয়েছেন। এতে আমার সম্পৃক্ততা নেই।’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হিজলার বড় অংশের ঘাটের নিয়ন্ত্রণ নেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক গাফফার তালুকদার, সদস্য সচিব মনির দেওয়ান ও তাদের সমর্থকরা। এর মধ্যে গাফফার তালুকদার স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মেজবাহ উদ্দীন ফরহাদের অনুসারী। মনির দেওয়ান স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজীব হাসানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনির দেওয়ান বলেন, ‘আমি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। মাছঘাট, বালুমহাল দখল করবো কী কারণে? এসব মিথ্যা ও মনগড়া অভিযোগ।’
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক গাফফার তালুকদার বলেন, ‘এখানে বিএনপি তিন ধারায় বিভক্ত। তাই প্রতিপক্ষের লোকেরা আমার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা ও কাল্পনিক অভিযোগ তুলছেন।’
তিনি নিজেকে এই এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় সদস্য মেজবাহ উদ্দীন ফরহাদের পক্ষের দাবি করে বলেন, ‘দখল করবো কখন? আমিতো হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দির পাহারা দিতে দিতেই ক্লান্ত।’
অপরদিকে মেহেন্দীগঞ্জ অংশের মাছঘাটগুলোর দখল নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উত্তর জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক উলানিয়ার মিল্টন চৌধুরী ও গোবিন্দপুর ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি মিজান মাঝির বিরুদ্ধে। আগে এগুলো হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ওরফে মিলন, আওয়ামী লীগের নেতা জামাল মোল্লা ও বেল্লাল মোল্লা, জামাল ঢালী ও তারেক সরদারের দখলে ছিল।
তবে মিল্টন চৌধুরী এসব অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি মাছের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নই। আমার নামে দক্ষিণ উলানিয়ার এক বিএনপি নেতা আছেন। দুজনের নাম একই হওয়ায় আমার নাম আসছে।’
মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক গিয়াস উদ্দীন জমাদ্দার বলেন, ‘যুবদল নেতা মিল্টন চৌধুরী অনেক আগে থেকেই মাছের ব্যবসা করেন বলে আমি জানি। আওয়ামী লীগের আমলে তিনি নিজের নামে এ ব্যবসা করেননি, হয়তো অন্যদের দিয়ে করিয়েছেন। তবে এখন তিনি মাছঘাট দখল করেছেন, এমন তথ্য সত্য নয়।’
জানা যায়, মেহেন্দীগঞ্জের পাতারহাট লঞ্চঘাট ও খেয়াঘাটের ইজারা পেয়েছিলেন মেহেন্দীগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর মনির জমাদ্দার। লঞ্চঘাটটি ২০ লাখ টাকা এবং খেয়াঘাটের ইজারামূল্য ছিল ১২ লাখ টাকা।
মনির জমাদ্দার বলেন, ‘৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আমার দুটি ঘাটই বিএনপির লোকেরা দখলে নিয়েছে। আমি স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা বলেছেন, ওপরের নির্দেশে এসব তারা দখলে নিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগে আমার কোনো পদপদবি নেই। কখনো কোনো অন্যায়ও করিনি। এরপরও আমার বৈধ ঘাট দখল হয়ে গেছে। এখন এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছি।’
দলীয় নেতা-কর্মীদের এসব দখল প্রসঙ্গে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক গিয়াস উদ্দীন জমাদ্দার বলেন, ‘নৌযান ও ঘাটের ইজারাদারদের অনেকেই পালিয়েছেন। এজন্য ঘাটগুলোর শ্রমিকেরা ভাড়া আদায় করছেন। আমরা বলে দিয়েছি, যারা বৈধ ইজারাদার, তারাই এসব ঘাটের টোল তুলবেন, অন্য কেউ নয়।’
মাছঘাটের দখল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগে আওয়ামী লীগের লোকজন টংঘর তুলে মাছঘাটগুলো নিয়ন্ত্রণ করতেন। এখন তারা পালিয়েছেন, তাই স্থানীয় লোকজন উন্মুক্তভাবে যে যার মতো করে ব্যবসা করছেন। বিএনপির কেউ দখল করেননি।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের দখল, নৈরাজ্য, লুটপাট থেকে বিরত থাকতে কঠোর নির্দেশনা দেয় কেন্দ্র। কেন্দ্রের নির্দেশনা অমান্য করে এ ধরনের অভিযোগ ওঠায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) বিলকিস আক্তার জাহান শিরিনের দলীয় পদ স্থগিত করা হয়।