বরিশাল
বরিশালে আকস্মিক কালবৈশাখী ঝড়, ৬ জনের প্রাণহানি
নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশাল বিভাগে কালবৈশাখী ঝড়ে ৬ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ঝালকাঠিতে তিনজন, পটুয়াখালীর বাউফলে দুইজন ও পিরোজপুরে একজন নিহত হন। সংশ্লিষ্ট জেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রবিবার (৭এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পিরোজপুরে কালবৈশাখী শুরু হয়। এ সময় ঝোড়ো বাতাস ও বৃষ্টিতে গাছচাপায় রুবি বেগম (২৩) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।
রুবি বেগম পিরোজপুর পৌরসভার হুলারহাট এলাকার মিরাজ সরদারের স্ত্রী। এ ঘটনায় তার মেয়ে মেহজাবিনসহ (৬) ১৩ জন আহত হয়েছেন।
পিরোজপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক রমজান আলী বলেন, ‘ঝড়ের পরে রুবি বেগম নামে এক নারীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। মেহজাবিনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে ঝালকাঠির সদর উপজেলার শেখেরহাট, পোনাবালিয়া ইউনিয়ন ও কাঁঠালিয়া উপজেলার আওরাবুনিয়া ইউনিয়নে ঝড়ের সময়ে মাঠ থেকে গরু আনতে গিয়ে দুই নারী ও এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে।
তারা হলেন, শেখেরহাট এলাকার ফারুক হোসেনের স্ত্রী মিনারা বেগম, আওরাবুনিয়া ইউনিয়নের মৃত আলম গাজীর স্ত্রী হেলেনা বেগম ও পোনাবালিয়া এলাকার মো. বাচ্চুর ৬ষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে মাহিয়া আক্তার ঈশান।
ঝালকাঠির পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল বলেন, ‘ঝালকাঠিতে ঝড়ের সময় মাঠে গরু আনতে গিয়ে দুই উপজেলায় এক শিশু ও দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা হবে।’
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় ঝড়ে রাতুল (১৪) নামের এক কিশোর ও সুফিয়া বেগম (৮৫) নামের এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছেন।
রাতুল উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের রায় তাঁতের কাঠি গ্রামের জহির সিকদারের ছেলে। তাকে রাস্তায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে- বজ্রপাতের শব্দে হার্ট অ্যাটাক করে সে মারা গেছে।
আর সুফিয়া বেগম দাশপাড়া ইউনিয়নের চরআলগী গ্রামের মৃত আহম্মেদ প্যাদার স্ত্রী। ঘরের ওপর গাছ পড়ে তিনি মারা যান।
বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মারজান বলেন, ‘রাতুলকে হাসপাতালে আনার আগেই সে মারা গেছে। তার শরীরে বজ্রপাতে ঝলসানোর কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে বজ্রপাতের শব্দে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যেতে পারে।
দাশপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এনএম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘ঘরের ওপর গাছ ভেঙে পড়ে সুফিয়া বেগম মারা যান।’
তিনি জানান, ঝড়ে বিভিন্ন এলাকায় গাছ পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সেগুলো সরানো হচ্ছে। পুরো এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
বরিশাল বিভাগীয় আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ বশির আহম্মেদ বলেন, ‘বিভাগের উপকূলীয় এলাকা পটুয়াখালী, পিরোজপুর ও বরগুনার ওপর দিয়ে কালবৈশাখী বয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত বরিশাল জেলায় ১৫.২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। তবে পটুয়াখালী, বরগুনা ও পিরোজপুরে বৃষ্টি ও বাতাসের গতি অস্বাভাবিক ছিল। আমরা সেই রিপোর্ট এখনো পাইনি।’
অন্যদিকে ঝড়ে বিভিন্ন এলাকায় বৈদ্যুতিক তারের ওপর গাছ পড়ে লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এজন্য পিরোজপুর ও বরগুনার তথ্য অফিসের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি।
স্থানীয়রা বলছে, বিভাগের ৪২টি উপজেলার মধ্যে ৩০টিরও বেশি উপজেলায় কালবৈশাখী আঘাত হেনেছে। এসব এলাকায় কয়েক হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’