বরিশাল
বরিশালে অনলাইনে জুয়ার সাইট থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় কামরান, কিন্তু শেষরক্ষা হলো না
বিশোর্ধ্ব ইব্রাহিম ওরফে কামরান অনলাইন প্লাটফর্মে একটি বড় জুয়াড়ি সিন্ডিকেটের সাথে সম্পৃক্ত। এবং তিনি এই সিন্ডিকেটের পরিচালিত অ্যাপগুলোর বরিশাল তথা গোটা দক্ষিণাঞ্চলের নিয়ন্ত্রক ছিলেন। বরিশাল শহরের অন্তত ৪০/৫০ যুবককে তার নিয়ন্ত্রণাধীন অ্যাপে সংযুক্ত করে ইতিমধ্যে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা। শহরের ৯ নং ওয়ার্ডের জনপদ রসুলপুরের আবুল কালাম খানের ছেলে কামরানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আলোচনায় এসেছিল বছরখানেক আগে, চরকাউয়া খেয়াঘাটের হোটেল ব্যবসায়ী রুহুল আমিনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তখন কোতয়ালি পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারে উদ্যোগও নিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই যুবককে আর বাগে আনা সম্ভব হয়নি। বছরখানেক পরে এই কুখ্যাত জুয়াড়িকে গ্রেপ্তারে সফলতা পেয়েছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ইউনিট। শনিবার তাকে শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সারপট্টি থেকে গ্রেপ্তারে সক্ষ হয় পুলিশের চৌকশ টিমটি।
জুয়াড়ি এই যুবককে গ্রেপ্তার এবং পঞ্জিভুত অভিযোগ নিয়ে মিডিয়ায় বক্তব্য রেখেছেন উপ-পুলিশ কমিশনার আলী আশরাফ ভূঁইয়া। রোববার অপরাহ্নে কোতয়ালি মডেল থানায় আয়োজিত আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এই পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যুবক ইব্রাহিম একটি জুয়াড়ি সিন্ডিকেটের বরিশাল অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ বা পরিচালক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।
পুলিশের সাইবার ইউনিট সূত্র জানিয়েছে, ইব্রাহিম ওরফে কামরান অনলাইন প্লাটফর্মে বড় একটি জুয়া সিন্ডিকেটের সাথে সম্পৃক্ত, তা সম্প্রতি নজরে আসে পুলিশের। এরপর কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশের এসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তা শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে এসআই সাইফুল ইসলামসহ সাইবার ইউনিট তার লাগাম টানতে মাঠে নামে। এক পক্ষকাল ধরে বরিশালসহ বিভিন্ন স্থানে অনুসন্ধান চালিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় কামরান বরিশাল নগরীতে অবস্থান করছেন, তাও শহরের সারপট্টি এলাকার জনৈক লুৎফর রহমানের বাসায়। শনিবার সেই বাসায় হানা দিয়ে এই কুখ্যাত জুয়াড়িকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
একটি গোপন সূত্র জানিয়েছে, এই কামরান পোর্টরোডসংলগ্ন একটি খাবার চালাতেন এবং সেখানে খেতে আসা অনেক মানুষকে প্রলোভনে ফেলে তাদের মোবাইল ফোনে জুয়ার অ্যাপ ইনস্টল করে দিতেন। পাশাপাশি কোনো জুয়ার সাইটে কী ভাবে অর্থ বিনিয়োগ করতে হয় তাও শিখিয়ে দেন। সূত্রটি আরও জানায়, কামরান তার নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন সাইটে বরিশাল অঞ্চলের অন্তত ৫০০ বেশি মানুষকে সম্পৃক্ত করেছেন, তাদের হার-জিতের টাকার একটি অংশ কৌশলে তিনি হাতিয়ে নেন। উদাহরণস্বরুপ যদি কোনো জুয়াড়ি অস্বাভাবিক অর্থ জিতে যান, তার কাছ থেকে কম মূল্যে পয়েন্টগুলো কামরান কিনে নিতেন এবং তা পরবর্তীতে চড়া মূল্যে বিক্রি করতেন।
রুহুল আমিন নামের ওই হোটেল ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, কামারান বছর দুয়েক আগে তার দোকানে খেতে গিয়েছিলেন, তখন তাকে প্রলোভন দেখিয়ে মোবাইলে একটি জুয়ার অ্যাপ ইনস্টল করে দেন। এই অ্যাপের মাধ্যমে তিনিসহ অন্তত ২০ জনের অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন, যে অভিযোগটি বছরখানেক আগে কোতয়ালি মডেল থানা করেছিলেন। কিন্তু পুলিশ দেখি, দেখছি বলে তখন আর তার বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যায়নি।
তবে বছরখানেক পরে গত ১৭ মে জানা যায়, কোতয়ালি পুলিশ আলোচ্চ্য কামরানকে খুঁজছে এবং অনলাইন জুয়াড়িদের গ্রেপ্তারে নেমেছে। পরিশেষে গতকাল শনিবার (১৭ মে) কামরানকে গ্রেপ্তারের খবর দেয় পুলিশ। আজ রোববার এই কামরান এবং তার অপরাধ কর্মকান্ড নিয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশ।
ওই সংবাদ সম্মেলনে কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশের ওসি মো. আরিচুল হক, ওসি/তদন্ত বিপ্লব কুমার মিত্র এবং কামরানকে গ্রেপ্তার অভিযানে নেতৃত্বদানকারী এসআই শহিদুল ইসলাম উপস্থিত থাকলেও আদ্যপান্ত মিডিয়ায় তুলে ধরে উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি/দক্ষিণ) আলী আশরাফ ভূঁইয়া।
তিনি জানান, কামরান বিভিন্ন পরিচিত-অপরিচিত লোকের মোবাইলে অ্যাপ চালু করে জুয়া খেলতে সহায়তা করতেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এসব কথা স্বীকার করেছেন। এছাড়া জুয়ার সাইট থেকে তার বিকাশে আসা মোটা অংকের অর্থ লেনদেনের তথ্যও পাওয়া গেছে। এগুলো নিয়ে পুলিশের সাইবার ইউনিট আরও কাজ করছে।
এসআই শহিদুল ইসলাম জানান, ইব্রাহিমের কাছ থেকে তিনটি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়, যার নগদ এবং বিকাশ একাউন্টে প্রায় তিন লক্ষ টাকা আছে। এছাড়া শনিবার গ্রেপ্তারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তার মোবাইলে ৫৪ হাজার টাকা জমা হয়েছে। কামরানকে গ্রেপ্তার করা হলেও তাঁর সঙ্গী সোহেল, নুর ইসলামসহ আরও ৩৫/৪০ জন ধরাছোয়ার বাইরে আছেন। এই ঘটনায় একটি মামলা নথিভুক্ত পরবর্তী তাদের গ্রেপ্তারে সাইবার ইউনিট কাজ করে যাচ্ছে।
জানা গেছে, সেই হোটেল ব্যবসায়ী রুহুল আমিনই বাদী হয়ে জুয়াড়ি কামরানের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। সেই মামলায় রোববার পুলিশ তাকে আদালতে পাঠিয়েছে।’