বরিশাল
বরিশালের ২৩ খেয়াঘাটে নিয়ম না মেনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ জেলার ২৩ খেয়াঘাটে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে চলছে স্বেচ্ছাচারিতা। নগরীর চরকাউয়া, বেলতলা ও চাঁদমারী খেয়াঘাটসহ জেলার অন্য ঘাটগুলোতে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। যাত্রী-মাঝিমল্লার মধ্যে প্রতিনিয়তই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে।
যাত্রীরা ঘাটে ঘাটে শারীরিক হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মানসিক ও আর্থিকভাবে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বেচ্ছাচারিতা বাড়তে থাকে।
চলে ভাড়া আদায়ের প্রতিযোগিতা। করোনাকালে জেলা প্রশাসনের নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে অতিরিক্ত যাত্রী পারাপার হচ্ছে।
‘নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা’ টাঙানোর কয়েক দিনের মধ্যেই এ তালিকা উধাও করে দেয় ঘাটের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রকরা।
এতে নদী পারাপারে প্রকৃত ভাড়ার অংক অগোচরেই থেকে যায় যাত্রীদের। তাই জনদুর্ভোগ লাঘবে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
সরেজমিনে নগরীর চরকাউয়া, বেলতলা ও চাঁদমারী খেয়াঘাটের যাত্রীদের কাছ থেকে মাঝিরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেছেন বলে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘাটগুলোতে জেলা পরিষদ থেকে টাঙানো ভাড়ার তালিকা উধাও হয়ে গেছে।
করোনাকালেও মাঝি-মল্লার গাদাগাদি করে যাত্রী বহনের ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন মানুষ। তারপরও অতিরিক্ত ভাড়ার ফাঁদে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের।
নগরীর চরকাউয়া ও বেলতলা খেয়াঘাটে প্রতি মোটরসাইকেল চালকসহ ৫০ টাকা, বাইসাইকেল ১৫ ও জনপ্রতি ১০ টাকা হারে ভাড়া আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে, যা রাতের বেলা আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
একই অবস্থা নগরীর চরকাউয়া, চাঁদমারী খেয়াঘাট, শায়েস্তাবাদ, দপদপিয়া খেয়াঘাট, মীরগঞ্জ খেয়াঘাট, বানারীপাড়া খেয়াঘাট, বাকেগঞ্জের পেয়ারপুর খেয়াঘাট, গোমা খেয়াঘাটসহ জেলার ২৩ খেয়াঘাটে।
এই ঘাটগুলোতে নির্ধারিত ভাড়া তিন থেকে দশ টাকা হলেও সময়ভেদে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া আদায় করা এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে।
মাঝিদের দাবি অনুযায়ী অর্থ না দিলে প্রতিনিয়ত তর্ক-হাতাহাতি ও মারধরের শিকার হচ্ছেন যাত্রী সাধারণ। এতে চলাচলকারীরা আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
নগরীর ধান গবেষণা রোডের বাসিন্দা রিসাদ জাহান জানান, ব্যবসার কাছে প্রতিদিন চরকাউয়া খেয়াঘাট থেকে কীর্তনখোলা নদী পার হতে হয়। এতে প্রায়শই টাকা খুচরা না থাকার অজুহাতে অতিরিক্ত অর্থ নিয়ে নেন মাঝিরা।
চরমোনাইর বাসিন্দা শাওন হাওলাদার জানান, যুগ যুগ ধরে তারা দুর্ভোগ সহ্য করেই বেলতলা খেয়াঘাট থেকে যাতায়াত করেন।
এ ঘাটে মোটরসাইকেল চালকসহ ৫০ টাকা, বাইসাইকেল ১৫ ও জনপ্রতি ১০ টাকা হারে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে, যা রাতের বেলা আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
জনদুর্ভোগ কমাতে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
চরকাউয়া খেয়াঘাটের মাঝি রাকিব হাওলাদার জানান, তারা অতিরিক্ত ভাড়া নেন না। তবে রাতের বেলা যাত্রীসংখ্যা কম হওয়ায় ভাড়ার অংক ঠিক থাকে না। এ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে তর্কের ঘটনাও ঘটে বলে জানান তিনি।
পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন পরিষদের আহ্বায়ক মানুওয়ারুল ইসলাম অলি জানান, খেয়াঘাটে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।
মাঝি-মল্লারা প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে বিভিন্ন বাহানায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে নিচ্ছে। জনদুর্ভোগ দূর করতে স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর অবস্থান নেওয়া উচিত।