বরিশাল
বরিশালের বেনজির নাসির উদ্দিন মল্লিকের সম্পদের পাহাড়, দুদকে অভিযোগ
সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদকে নিয়ে চলছে সর্বত্র আলোচনা। এমন সময় বরিশালে আলোচনায় উঠে এসেছেন অঢেল সম্পদের মালিক পুলিশ কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন মল্লিক। এসআই হিসেবে যোগদানকারী পুলিশের এই কর্মকর্তা বর্তমানে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে সিআইডিতে ভোলায় কর্মরত। এই পুলিশ কর্মকর্তার বাড়ি বাকেরগঞ্জে। এদিকে অনেকেই মনে করেন, সহায় সম্পদে বেনজির কিংবা মতিউরের কাছাকাছি রয়েছেন তিনি। পুলিশ কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন মল্লিকের রয়েছে সম্পদের পাহাড়।
এমনকি খোদ বরিশাল শহরের বাণিজ্যিক এলাকা বাংলা বাজারে করেছেন ১০ তলা ভবন। অন্যদিকে বর্তমানে বানাচ্ছেন দৃষ্টিনন্দন রাজবাড়ী তুল্য বাড়ি।
সম্প্রতি নাসির উদ্দিন মল্লিক ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমার বরিশালে জন্ম, বরিশালে বেড়ে ওঠা। বরিশালেই কেঁটেছে শিশু ও কিশোরকাল। পড়াশোনা ও চাকুরির জন্য কিছুকাল দেশ-বিদেশে কাটলেও চাকরির অনেকটা সময়ই কেঁটেছে বরিশাল অঞ্চলে।’
শেষাংশে লিখেছেন, “আমার নামে অসত্য রটনার চেষ্টা করবেন না। কারণ আপনাদের মত অশুভ শক্তির মোকাবেলা করার মতো সামর্থ্য, সৎসাহস ইনশাআল্লাহ আমার আছে।” মনে করা হয়, তিনি এভাবেই সাংবাদিকদের হুমকী দিয়েছেন। সাংবাদিকরা দুদকের কাছে তানভির আহমেদের লিখিত অভিযোগের কপি পেয়ে নাসির উদ্দিন মল্লিকের সহায় সম্পদের খোঁজ খবর নিতে গেলে একের পর এক সম্পদের বিবরণ চলে আসে। এরপরই তিনি তার ফেসবুক আইডিতে হুমকি হিসেবে এই পোস্টটি দেন।
বরিশাল নগরীর বাংলাবাজারে জমি ক্রয় করে দশ তলা ভবন নির্মাণ করেছেন নাসির উদ্দিন মল্লিক। ভবনটি ভাড়া দিয়েছেন পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কাছে।
সূত্র জানায়, জমি ক্রয় করে তিনি যখন ভবনের নবম তলার কাজ সম্পন্ন করেন তখন পপুলার ডায়াগনস্টিক থেকে অগ্রীম ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা নেন। এছাড়া তিনি বরিশাল নগরীর সাগরদীতে তার মেয়ের নামে তিনতলা ডুপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করছেন। এ বাংলো বাড়িটি দেখতে মনে হয় কোন রাজবাড়ী। দশ শতাংশ জমির ওপর পাঁচ শতাংশ জমিতে ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। এটি বানাচ্ছেন মেয়ের নামে। এ বাড়ির এক তলা ভবনের ছাদের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। গেটের সাথে দুটো গোল ঘর।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছে, এটি জনাব নাসির উদ্দিন মল্লিকের ভবন। কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে বাস ভবন নির্মাণ করতেছেন। তাদের মধ্যে একজন প্রশ্ন করলেন, ‘নাসির মল্লিক স্যার কি বেনজিরের কোন আত্মীয়। নির্মাণ কাজে জড়িতরা জানিয়েছেন স্যার দু হাতে খরচ করে ভবন নির্মাণ কাজ করছেন। স্যারের আয় রোজগার অনেক ভালো।’
তবে নাসির উদ্দিন মল্লিক এসআই হিসেবে যোগদান করে বর্তমানে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত থেকে এতো সম্পদের মালিক হয় কিভাবে, এমন প্রশ্ন জনমেন।
নাসির উদ্দিন মল্লিক কেবল বরিশালেই নয়, সহায় সম্পদ গড়েছেন নলছিটির শশুর বাড়ি তিমিরকাঠি এলাকায়ও। এছাড়া বাকেরগঞ্জের চরাদী -চরামদ্দিতে নামে বেনামে সহায় সম্পদ গড়েছেন। সম্প্রতি নাসির উদ্দিন মল্লিকের নামে দুর্নীতি দমন কমিশনে তানভির আহমেদ নামের একজন লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এতে উল্লেখ করা হয়, নাসির উদ্দিন মল্লিক বরিশালের সন্নিকটে বাড়ি হওয়ায় ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশে, রাঙ্গাবালী থানা, মঠবাড়িয়া, নাজিরপুরে কর্মরত থাকা অবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ ভাবে জ্ঞাত আয় বহির্ভুত সম্পদ অর্জন করেছেন।
লিখিত অভিযোগে জানানো হয়, অসৎ ও দুর্নীতির মাধ্যমে বরিশালের বাংলাবাজারে আকাশ ছোয়া ভবন নির্মান করে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন। সাগরদিতে মেয়ের নামে নাহিরীন ভ্যালী নামক একটি বাড়ি নির্মান করতেছেন কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করে। শশুর বাড়ি নলছিটির দপদপিয়া তিমিরকাঠী নামক গ্রামে ও নিজ এলাকা বাকেরগঞ্জে জমি ক্রয় করেছেন। এছাড়া নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিয়ার, জমি ও টাকা গড়েছেন। এছাড়া তিনি ব্যাপক টাকা খরচ করে চারটি বই প্রকাশ করেছেন।’
দুদকের নিকট আবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, কর্মস্থলে আলোচিত বেশ কিছু মামলায় কামিয়েছেন মোটা অংকের টাকা। অনেককে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগ ছিল এই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তখন ভয়ভীতি দেখিয়ে কামিয়েছেন বিপুল সম্পদ।
অভিযোগ রয়েছে- ওসি থাকার সময়ে রাজনৈতিক, ব্যবসায়ীসহ অনেককে আসামি করার ভয় দেখিয়ে টাকা কামাতেন। পরে তাদের কাছ থেকে নেন মোটা অংকের টাকা। সেসব টাকায় গড়েছেন অঢেল সম্পদ।
দুদকের একটি সুত্র জানিয়েছে- নাসির উদ্দিন মল্লিকের সহায় সম্পদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।
তদন্ত করলেই নাসির উদ্দিন মল্লিকের থলের বেড়াল বেড়িয়ে আসবে বলে দাবি স্থানীয়দের।