আমতলি
বরগুনা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতিকে কোপালো ছাত্রলীগ
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরগুনার আমতলীতে উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন খানকে কুপিয়ে গুরুত্বর আহত করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের পাঁচ নেতা ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে পৌর শহরের সাকিব প্লাজার সামনে ঘটেছে এ ঘটনা।
গুরুত্বর আহত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে।
আহত ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, দলীয় সব কর্মসূচিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মো. মতিয়ার রহমান এবং তার বড় ভাই পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মো. মজিবুর রহমানকে সাবেক বিএনপি নেতা ও হাইব্রিড উল্লেখ করে মোয়াজ্জেম হোসেন খান ব্যাপক সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছিলেন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও অনেক লেখালেখি করেন তিনি।
সর্বশেষ ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসটি আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের বিদ্যমান দুই গ্রুপ পৃথকভাবে পালন করে। ওই দিনের দলীয় শোকসভাতে আবারও সমালোচনা ও কুটুক্তি করে বক্তব্য দেন মোয়াজ্জেম হোসেন। এ কারণে রাত ৮টার দিকে পৌর শহরের তিন রাস্তার মোড়ে সাকিব প্লাজার সামনে মেয়র অনুসারী ছাত্রলীগ নেতা সবুজ মালাকার, ইসফাক আহমেদ তোহা, রাহাত মৃধা, সজীব প্যাদা ও সাহাবুদ্দিন শিহাবসহ তাদের ১০ থেকে ১৫ জন অনুসারী দেশিয় অস্ত্র দিয়ে মোয়াজ্জেম হোসেনকে ধাওয়া করে এলোপাথারী কোপাতে থাকেন। পরে তার মাথায় ও হাতে মারাত্মক জখম করে আহত অবস্থায় ফেলে রেখে তারা পালিয়ে যান।
এর পর স্বজন ও স্থানীয়রা মোয়াজ্জেম খানকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। কিন্তু অবস্থা গুরুত্বর হওয়ায় হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠান। বর্তমানে সেখানেই তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে তাৎক্ষনিক রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমতলী চৌরান্তার গোল চত্বরে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে আমতলী-কুয়াকাটা আঞ্চলিক মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ করেন। এতে সড়কের উভয় পাশে যানবাহনের দীর্ঘলাইন পড়ে যায়।
খবর পেয়ে আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম মিজানুর রহমান পুলিশ নিয়ে বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীদের অবরোধ তুলে নিতে অনুরোধ করে। সেখানে তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করার আশ্বাস দিলে তারা অবরোধ তুলে নেন। পরে চৌরাস্তায় পথসভা করেন বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় পুলিশের টহল বাড়ানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সেখানে বক্তব্য দেওয়ার সময় উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জিএম ওসমানী হাসান বলেন, এ ঘটনার মাধ্যমে উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র এবং তার ভাই ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবর রহমান তাদের অনুসারীদের দিয়ে আমতলী পৌর শহরকে একটি সন্ত্রাসী জনপথ ও নরকের শহরে পরিণত করেছেন। এছাড়া তাদের দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে কথা বলায় দলীয় নেতাকর্মীদের নামে একটা মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তাদের পালিত সন্ত্রাসী দিয়ে মোয়াজ্জেম হোসেন খানকে হত্যার উদ্দেশে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করিয়েছেন। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ প্রশাসন আমাদের কথা দিয়েছেন আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ ঘটনায় জড়িতদের আটক করবেন। যদি তারা তাদের কথা রাখতে ব্যর্থ হন তাহলে বুধবার (১৭ আগস্ট) বিকেলে এ ঘটনার প্রতিবাদে হরতালসহ আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষনা করা হবে।
প্রত্যক্ষদর্শী মো. সেলিম বলেন, মেয়র অনুসারী সন্ত্রাসী সবুজ মালাকার, ইসফাক আহমেদ তোহা, রাহাত মৃধা, সজীব প্যাদা ও সাহাবুদ্দিন শিহাবসহ তাদের অনুসারী ১০ থেকে ১৫ জন সন্ত্রাসী দেশিয় অস্ত্র দিয়ে মোয়াজ্জেম খানকে কুপিয়ে আহত করেছেন। পরে তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাই।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডাঃ সুমন বিশ্বাস বলেন, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহতের হাতে ও মাথায় মারাত্মক জখম হয়েছে। অবস্থা গুরুত্বর হওয়ায় তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আহত স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন হাসপাতাল থেকে বলেন, আমি কেন মতিয়ার রহমান ও তার ভাই মজিবর রহমানের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছি এবং ফেইসবুকে লেখালেখি করেছি এ জন্য আমার ওপর হামলা করা হয়েছে। মেয়র অনুসারী সন্ত্রাসী সবুজ মালাকার, ইসফাক আহমেদ তোহা, রাহাত মৃধা, সজীব প্যাদা ও সাহাবুদ্দিন শিহাবসহ তাদের অনুসারী ১০ থেকে ১৫ জন সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আমাকে খুন করার উদ্দেশে মাথায় ও হাতে কুপিয়ে জখম করে। এর আগেও তারা একইভাবে মেয়র ও তার ভাইয়ের নির্দেশে আমাকে একাধিকবার শারিরীক লাঞ্চিত করেন।
আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মো. মতিয়ার রহমান ফোনে বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে আমি ও আমার বড় ভাই কোনো অবস্থাতেই জড়িত না। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের গ্রেফতার করার জন্য আমি প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি।
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম মিজানুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক না কেন, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। জড়িতদের গ্রেফতার করতে পুলিশের বেশ কয়েকটি টিম মাঠে কাজ করছে।