বরগুনা
বরগুনায় মৎস্য আহরণের নামে চলছে পোনা নিধন!
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সাগর উপকূলীয় জেলা বরগুনার বুড়ীশ্বর (পায়রা), বিষখালী ও বলেশ্বর এই তিনটি নদ-নদীতে ছোট ফাঁসের গড়া জাল, বেড় জাল, ভাসা জাল ও বেহেন্দি জালের মাধ্যমে বছরের পর বছর অবাধে নিধন করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির রেণু পোনা।
এই তিনটি নদ-নদীতে ছোট ফাঁসের জাল দিয়ে চলছে অবৈধভাবে মাছ ধরা। মৎস্য সংরক্ষণ আইনে সোয়া চার ইঞ্চির কম ফাঁসের জাল ব্যবহার করা দন্ডনীয় অপরাধ জেনেও নিবিঘ্নে বছরের পর বছর এক শ্রেণীর সংঘবদ্ধ চক্র এভাবে মাছের পোনা নিধন করে যাচ্ছে।
বরগুনার এই তিনটি নদীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বুড়ীশ্বর, বিষখালী ও বলেশ্বর নদের শতাধিক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে খুঁটি গেড়ে ছোট ফাঁসের গড়া জাল, বেড় জাল, ভাসা জাল ও বেহেন্দি জাল পেতে অবাধে মাছ ধরা হচ্ছে।
বরগুনা সদরের বড়ইতলা ফেরীঘাটের দক্ষিণ পার্শ্বে গিয়ে দেখা গেছে, সন্ধ্যার পরে চলে পোনা নিধনের মহোৎসব।
এছাড়াও বিষখালী নদীর দু’পাড়ে জেলেরা বাগদা-গলদা চিংড়ি, পোয়া মাছ ধরার নামে নিধন করছে বিভিন্ন প্রজাতির পোনা মাছ।
বরগুনা সদরের চালিতাতলী থেকে সোনাতলা বুড়ীশ্বর নদীর দুই পাড়, বিষখালী নদীর বড়ইতলা-নলী থেকে গোড়াপদ্মা পর্যন্ত, তালতলী থেকে তেঁতুলবাড়িয়া হয়ে বঙ্গোপসাগরের মোহনা পর্যন্ত এবং বলেশ্বর নদের মোহনা থেকে পশ্চিমে চরদুয়ানি পর্যন্ত এলাকাজুড়ে এসব জাল পেতে রাখা হয়।
সম্প্রতি রাত সাড়ে আটটার দিকে বরগুনা সদরের ঢলুয়া ইউনিয়নের বড়ইতলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিশখালী নদীতে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ৩৫ জন জেলে বেহেন্দি, বেড় ও গড়া জাল পেতে দিয়ে মাছ ধরছেন।
এ সকল জেলেরা সাধারণত পোয়া, টেংরা, গুলিশাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরলেও এদের জালে এসব মাছের পাশাপাশি অসংখ্য মাছের পোনা আটকা পড়ে।
এসব ক্ষুদ্রাকৃতির পোনা কোনো কাজে লাগে না বলে তারা ফেলে দেয়। কেউ কেউ হাঁস-মুরগীর খাবারের জন্য বাড়ি নিয়ে যায়।
জাটকা ইলিশ বিরোধী অভিযানের মুখে দক্ষিণাঞ্চলের মৎস শিকারীরা নদ-নদীতে পোনা মাছ ধরার মহোৎসবে বেশী মেতে উঠে।
পোনা মাছ মারার জাল হিসেবে পরিচিত বেহেন্দি ও মশারি জাল দিয়ে জাটকার চেয়েও ছোট সাইজের ইলিশ, রিঠা, আইর, পাঙ্গাস, কাচকি, চাপিলা, চাপিদা, ভাটা, বায়লা, পুঁটি, বাইন ও চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নির্বিচারে শিকার করছে।
এসব মাছ কোনটা কোন জাতের তা দেখে চেনা মুশকিল। অধিকাংশই গুঁড়া মাছ হিসাবে কেজি দরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। একটু বড়গুলো নানা প্রজাতির হলেও তা মিলিয়ে ‘সাচরা মাছ’ হিসাবে ভাগ দিয়ে বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
বিষখালী নদীতে গিয়ে দেখা যায়, বেহেন্দি জাল দিয়ে মাছ ধরছেন অনেকে। এক জেলে বলেন, ‘সবাই ধরে, আমিও হেইতে ধরি। কেউ তো কিছু কয় না।
আমাগো এলাকায় এই রহম তিন -চার’শর বেশি নৌকায় ভাসা জাল দিয়া মাছ ধরে।’ কয়েকজন জেলে বলেন, জালে জাটকা, পোয়া, তপসি, টেংরাসহ অন্য প্রজাতির অনেক মাছ আর পোনা ধরা পড়ে। যেসব পোনা বিক্রি করে লাভ নেই, তারা সেগুলো ফেলে দেন।
বন বিভাগের পাথরঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা সোলায়মান হাওলাদার বলেন, ‘এসব জাল উচ্ছেদের ব্যাপারে তারা স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ দেব বলেন, ‘ছোট ফাঁসের এসব জাল বন্ধে তারা অভিযান চালাচ্ছেন। এর মধ্যে অনেক জাল ধরে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।’