বরগুনা
বরগুনায় ভোট দেওয়ার শর্তে সাহায্যের তালিকা ভুক্তির অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক : বরগুনার তালতলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নির্দিষ্ট প্রতীকে ভোট দেওয়ার শর্তে ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ পাওয়া গেছে। পচাকোড়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার ও নিশানবাড়িয়া চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান বাচ্চুর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে।
৫ জুন হতে যাওয়া নির্বাচনে ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী রেজবি-উল কবির জমাদ্দারকে সমর্থক করছেন অভিযুক্ত দুই ইউপি চেয়ারম্যান। তাঁদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। ভোটসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেছেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমাল উপকূলীয় অঞ্চল তালতলীতে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। এতে বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়। পরে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করতে নির্দেশ দেয় বরগুনা জেলা প্রশাসন। এ সুযোগে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান রেজবি-উল কবিরের আস্থাভাজন ইউপি চেয়ারম্যান রাজ্জাক ও কামরুজ্জামান ভোট দেওয়ার শর্তে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করছেন। এমন ঘটনা নির্বাচনী আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এটি প্রকাশ পেয়ে যাওয়ায় ভোটারদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তাঁরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি করেছেন।
কলারং গ্রামের ভোটার সামসুল হক বয়াতি বলেন, ‘পচাঁকোড়ালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক ঘোড়া প্রতীকে ভোট দেওয়ার শর্তে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করছেন। ঘোড়ায় ভোট দিলেই তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করবেন, না হলে না। আর নাম অন্তর্ভুক্ত না হলে সরকারি সহায়তা পাব না।’
রুবেল হাওলাদার ও শাহ আলম তালুকদার নামের দুজন জানান, চেয়ারম্যান রাজ্জাক তাঁর লোক পাঠিয়ে জানিয়েছেন, যদি ঘোড়ায় ভোট দেন তাহলে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় তাঁদের নাম দেবেন। না হলে নাম লেখা হবে না। এ বিষয়ে কথা হলে চেয়ারম্যান রাজ্জাক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে।’ অন্যদিকে নিশানবাড়িয়া গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, চেয়ারম্যান বলেছেন, যদি ঘোড়ায় ভোট দেন তাহলে তালিকায় নাম দেওয়া হবে। তাই তাঁরা ভয়ে এ শর্তে রাজি হয়েছেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জাহেদ খান বলেন, ‘চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান বাচ্চু ঘোড়ায় ভোট দেওয়ার শর্তে রিমালে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় ভোটারদের নাম অন্তর্ভুক্ত করছেন। যাঁরা তাঁর শর্ত মানেননি তাঁদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেননি। আমি আনারস প্রতীকের প্রার্থী মনিরুজ্জামান মিন্টুকে সমর্থন দিয়েছে বলে জেলেদের চাল আমাকে বিতরণ করতে দেননি। যাঁরা ঘোড়ার সমর্থন করেন, তাঁদের দিয়ে বিতরণ করেছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চেয়ারম্যান কামরুজ্জামানের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। যোগাযোগ করা হলে নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী রেজবি-উল কবির বলেন, ‘দুই চেয়ারম্যান আমার সমর্থক; কিন্তু তাঁরা ভোটারদের কী শর্ত দিয়েছেন, তা আমি জানি না।’
অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত আনোয়ার তুমপা বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে যাঁরা এমন অপকর্ম করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।