বরিশাল
বন কর্মকর্তার যোগসাজশে সরকারি গাছ কর্তণ
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ কর্মস্থলে দায়িত্ব ফিরে পাওয়ার পরই আবারো অনিয়ম দুর্নীতিতে মেতে উঠেছে বরিশাল সদর বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা আবু সুফিয়ান সাকিব। সম্প্রতি তার নির্দেশে পুরাতন দরপত্র দিয়ে এক ঠিকাদার কেটে নিয়েছে রাস্তার পাশের লাখ লাখ টাকা মূল্যের সরকারি গাছ। ঘটনাটি ঘটেছে বাকেরগঞ্জ উপজেলার ভরপাশা ইউনিয়নের ১, ২ ও ৬ নং ওয়ার্ড কানকি ও কৃষ্ণকাঠি গ্রামে।
এ বিষয়ে আবু সুফিয়ান সাকিব বলেন, আমি গত ছয় মাসে বাকেরগঞ্জে যাইনি। তাছাড়া প্রেক্ষাপট গুরুতর হলে নিজেই সরেজমিন পরিদর্শন করবো । আর ঠিকাদার জয় কে আমি চিনি না। সেখানে ঠিকাদারের সাথে ম্যানেজ হবার প্রশ্নই উঠে না।
বাকেরগঞ্জ উপজেলা বন কর্মকর্তা মনীন্দ্র নাথ হালদার বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নেয়া হয়েছে। ঝড়ে পড়ে যাওয়া ৩/৪টি গাছ ঠিকাদারের ছিল। কিন্তু সেই গাছ কাটার সময় ঠিকাদারের লোকজন দরপত্র ছাড়াও রাস্তার পাশের অন্য গাছ কেটে ফেলেছে। স্থানীয় এক সভাপতির নির্দেশে নাকি ওই গাছগুলো কর্তন করা হয়েছে। কেটে ফেলা গাছ বন বিভাগের আওতায় রাখা হয়েছে। সেগুলো পরবর্তীতে হয়তো দরপত্রের মাধ্যমে কাউকে দেয়া হতে পারে।
ঠিকাদার জয় বলেন, সাবেক এমপির ভাইয়ের ছেলে অপুর খালু শাহাদাত হলেন ওই এলাকার একটি কমিটির সভাপতি। তার নির্দেশে শ্রমিকরা রাস্তার পাশের গাছ কেটে ফেলেছে। পরবর্তীতে সে গাছ বন বিভাগ তাদের জিম্মায় নিয়ে গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা আবু সুফিয়ান সাকিব অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে কর্মরত অফিসে ওএসডি হয়েছিল। পরে রহস্যজনকভাবে তাকে পুনরায় দায়িত্ব দেয়া হয়। গত বছর জুন মাসে ভরপাশা ইউনিয়নের মুনির হাওলাদারের বাড়ি থেকে আকন বাড়ি পর্যন্ত স্থানীয় ফরিদ মিয়ার জিম্মায় থাকা ১৫ টুকরা গাছ এবং ভরপাশা বটতলা চর লক্ষিপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শাহজাহান এর বাড়ি পর্যন্ত স্থানীয় মোঃ মাইনুল ইসলামের জিম্মায় থাকা ৭১ টুকরা গাছ সহ ঝড়ে ভেঙ্গে যাওয়া কয়েকটি সরকারী গাছ দরপত্রের নিয়মানুযায়ী ঠিকাদার জয় কাজটি পায়।
প্রথম দফায় নিয়ম মেনে ওই দুই জনের জিম্মায় থাকা গাছের টুকরোগুলো নিয়ে যাওয়া হয়। এক বছর পর বরিশাল সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা আবু সুফিয়ান সাকিব এর যোগসাজশে পুরাতন দরপত্রের কাগজপত্র নিয়ে রাস্তার পাশের প্রায় শতাধিক শিশু, মেহগনি, চাম্পল ও রেইনট্রি গাছ কেটে নিয়ে যায় ঠিকাদার জয়। স্থানীয়ভাবে বিষয়টি আলোচনায় আসলে কয়েকটি গাছ নাটকীয়ভাবে উপজেলা বন বিভাগের জিম্মায় দেয়া হয়।
সূত্রটি নিশ্চিত করে বলেন, ঠিকাদার জয় বন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সরকারী গাছ কর্তন করেছে। উপায়ন্ত না পেয়ে বাকেরগঞ্জের সাবেক এমপি মো. আবুল হোসেন খান এর ভাইয়ের ছেলে জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি অপু খানের নাম ব্যবহার করে সরকারী গাছ কর্তনের বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালানো হয়।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি অপু খান জানান, আমি বিষয়টি আপনাদের কাছেই শুনলাম। আমি ঠিকাদার জয় কে চিনি না, কেউ যদি আমার নাম ব্যবহার করে কোন অন্যায় করে তাকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। স্থানীয়ভাবে জেনেছি ঠিকাদার জয় প্রায় শতাধিক গাছ কেটে নিয়েছে আমি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে গাছ কাটার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের বিচার চাচ্ছি।