বরগুনা
বদলি হলেও পুরনো কর্মকর্তার নাম বাতায়নে!
রিপোর্ট দেশ জনপদ ॥ জাতীয় তথ্য বাতায়নে দেওয়া বেতাগী উপজেলার তথ্যে ভুল রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওয়েবসাইটে তথ্য হালনাগাদ করতে কর্মী ও ইন্টারনেট সেবা থাকলেও কাজের কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। পুরনো তথ্য দিয়েই চলছে সরকারি ডিজিটাল সেবার তথ্য বাতায়ন। এ অবস্থায় তথ্যের অসঙ্গতির কারণে বিভ্রান্তিতে পড়ছেন সেবা গ্রহিতারা। আগ্রহ কমছে তথ্য বাতায়ন ওয়েবসাইট ভিজিটে। নিয়মিত তথ্য হালনাগাদ না থাকার ফলে ডিজিটাল সেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সুবিধাভোগীরা।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তত্ত্বাবধানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের আওতায় পরিচালিত হয় জাতীয় তথ্য বাতায়ন। জনগণের তথ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিতকরণ ও সরকারি দফতর থেকে প্রদেয় সেবাসমূহ প্রাপ্তির নিশ্চয়তায় লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় তথ্য বাতায়ন। দেশের সব ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ, অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়সহ প্রায় ২৫ হাজার সরকারি দফতরের রয়েছে নিজস্ব ওয়েবপোর্টাল। জাতীয় তথ্য বাতায়নের অধীনে বরগুনা বেতাগী উপজেলার ২৮টি দফতরের তথ্য রয়েছে। তবে দুই-একটি দফতর ছাড়া বাকি সব দফতরের তথ্যে রয়েছে বিস্তর গড়মিল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় তথ্য বাতায়নে বেতাগী উপজেলা প্রশাসনের তথ্যে খুঁজতে গিয়ে দেখা যায় সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ক্যাটাগরিতে সর্বশেষ ইউএনও হিসেবে এম.এম মাহমুদুর রহমানের নাম রয়েছে। কিন্তু মাহমুদুর রহমানের বদলির পর মো. রাজীব আহসান ইউএনও হিসেবে প্রায় তিন বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনিও বদলি হয়ে গেছেন। নতুন ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সুহৃদ সালেহীন। একের পর এক কর্মকর্তা বদলি হলেও হালনাগাদ হয়নি তথ্য।
এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের ডিজিটাল সেবাসমূহ প্রাপ্তিতে পুরনো তথ্য থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবা গ্রহিতারা।
বেতাগী থানার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু। তিনি যোগদান করেন তিনি ২০২০ সালের ১৩ মার্চ। অথচ বাতায়নে তার কোনও তথ্য নেই। বাতায়নে কর্মকর্তার তালিকায় অফিস প্রধান (পরিদর্শক) হিসেবে আছেন মো. কামরুজ্জামান মিয়া। যিনি ২০২০ সালে বদলি হয়ে তালতলী থানায় চলে যান। পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুস সালাম দায়িত্ব পালন করলেও বাতায়নে দেখাচ্ছে (তদন্ত) মো. নজরুল ইসলাম এবং মো. হুমায়ুন কবিরের নাম। যারা অনেক আগেই বদলি হয়ে চলে গেছেন।
বাতায়নে নেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বর্তমান কর্মকর্তাদের কোনও তথ্য। ঝুলছে ডা. মো. জাহিদ হাসানের নাম। যিনি এখান থেকে অনেক আগেই বদলি হয়ে গেছেন। একই অবস্থা পরিবার-পরিকল্পনা অফিসেরও। সেখানে কর্মকর্তা হিসাবে দেখা যাচ্ছে প্রদীপ চন্দ্র রায়ের নাম। তিনিও অনেক আগেই বদলি হয়েছেন।
একই অবস্থা সাব রেজিস্ট্রার দফতরের। বর্তমান সাব রেজিস্ট্রার মো. নূরে আলম শিকদার। তবে বাাতয়নে নেই তার কোনও তথ্য।
উপজেলা সমাজসেবা অফিসের কর্মকর্তার তালিকায় নাম রয়েছে শুধু মো. শাহিনুর রহমানের। কিন্তু তিনি বদলি হয়েছেন বহু আগেই। গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ভূমি অফিসের তথ্যে যেন ডিজিটালের কোনও ছোঁয়া লাগেনি। পোর্টালে নেই কোনও কর্মকর্তার তথ্য। বর্তমান সহকারী কমিশনারের নাম হালনাগাদ থাকলেও ভূমি অফিসের নোটিশ বোর্ডে ঝুলছে ২০১৮ সালের সর্বশেষ নোটিশ।
উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অফিসের পোর্টালে অফিস প্রধান, কর্মকর্তা/কর্মচারীদের কোনও তথ্যই পাওয়া যায়নি। উপজেলা নির্বাচন অফিস, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার অফিস, পানি উন্নয়ন অফিস, তথ্য অফিস, জনস্বাস্থ্য অফিস, সমিতিসহ অনেক অফিসেরই তথ্য নেই এই পোর্টালে। যুব উন্নয়ন অধিদফতরের পোর্টালে কর্মকর্তা/কর্মচারী বিষয় তথ্য থাকলেও তথ্য নেই যোগাযোগের বিষয়ে।
উপজেলা সমাজসেবা অধিদফতরের সাইটে উল্লেখ নেই সরকারিভাবে কতজন বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। নেই বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণের তথ্য।
উপজেলা তথ্য অফিসের সাইটে প্রবেশ করে দেখা যায়, হালনাগাদ কোনও তথ্য সেখানে নেই। উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসের সাইটেও নেই বিভিন্ন সেবার তালিকা ও উপকারভোগীর সংখ্যা।
বেতাগী ডিগ্রি কলেজের ছাত্রী মিতা আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমারা অনেক তথ্য জানি না। তথ্য জানতে প্রয়োজনের সময় তথ্য বাতায়ন থেকে যে তথ্যটি পাচ্ছি, তা যদি ভুল হয়, তাহলে তথ্য বাতায়ন থেকেই বা লাভ কী?’