বরিশাল
বউ নয়, তালাক দিলেন বউয়ের বড় বোন!
বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় বিয়ে হয়েছে ছোট বোনের সঙ্গে আর কাগজেকলমে তালাক দিয়েছেন বড় বোন। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় চলছে সমালোচনা। উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের মে মাসে ওই ইউনিয়নের এক যুবকের সঙ্গে এক কিশোরীর বিয়ে হয়। কিন্তু গত ৯ জুন একটি তালাকনামা সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। যা দেখে রীতিমতো মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে যুবকের। কারণ তালাকনামায় তিনি দেখেন স্ত্রী তালাক দেননি, দিয়েছেন স্ত্রীর বড় বোন।
তালাকনামায় স্ত্রীর স্থলে কেন বড় বোনের নাম? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেলো, কাগজেকলমে বড় বোনের সঙ্গেই কাবিন হয়েছে যুবকের। অথচ ছোট বোনের সঙ্গে এতদিন সংসার করেছেন। বিয়ের বয়স ১৮ না হওয়ায় বড় বোনের জন্মনিবন্ধন দিয়েই কাবিন করা হয়েছিল ছোট বোনের। ফলে তালাকনামাও বড় বোনের নামেই এসেছে। বিষয়টি নিয়ে এখন দুই পরিবার একে-অন্যের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। তবে কাজী বলছেন, তিনি ছোট বোনেরই কাবিন করেছেন। কীভাবে বড় বোন তালাকনামা পাঠিয়েছেন, তা জানা নেই।
এ বিষয়ে ওই যুবক বলেন, ‘পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়েছিল আমাদের। তিন-চার মাস আগে থেকে স্ত্রীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এ কারণে বাবার বাড়িতে চলে যায়। এরপর একাধিকবার আনতে গেলেও সে না আসায় দূরত্ব বাড়তে থাকে। সম্প্রতি স্ত্রীর বড় বোনের স্বাক্ষরিত তালাকনামা আমার বাড়িতে পাঠানো হয়। তাতে স্ত্রীর স্থলে নাম এবং স্বাক্ষর রয়েছে বড় বোনের। তবে আমি তার ছোট বোনকেই বিয়ে করেছি। বিয়ের পর তার সঙ্গে ঘর-সংসারও করেছি। বিষয়টি নিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে জালিয়াতি করেছে তারা। পরিবারসহ আমার মানসম্মান নষ্ট হয়েছে। সেইসঙ্গে আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমি এর বিচার চাই।’
কীভাবে এই ভুল হলো জানতে চাইলে ওই যুবক বলেন, ‘এটা মেয়ের পরিবারের জালিয়াতি। তার বয়স ১৮ না হওয়ায় বড় বোনের জন্মনিবন্ধন দিয়ে কাবিন করা হয়েছিল।’ মেয়ের পরিবার বলছে বিষয়টি আপনিও জানতেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, আমি জানতাম না। তারা ভুল করেছিল।’
ওই যুবকের বাবা বলেন, ‘বিয়ের সময় কাজীকে যে জন্মনিবন্ধন দেওয়া হয়েছিল, তিনি তা দেখেই লিখেছেন, আমরা তো আর যাচাই-বাছাই করে দেখিনি। আমার ছেলের সঙ্গে ওই পরিবারের ছোট মেয়ের বিয়ে হয়েছিল। ছেলের সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় পুত্রবধূ বাবার বাড়ি চলে যায়। আমি কয়েকবার আনতে গেলেও তারা মেয়েকে দেয়নি। এখন কাবিননামা তুলে দেখি, পুত্রবধূর বড় বোনের নাম লেখা।’
ছোট বোনের বয়স ১৮ বছর না হওয়ায় বড় বোনের জন্মনিবন্ধন দিয়ে কাবিন করা হয়েছিল, মেয়ের পরিবার বলছে বিষয়টি আপনিও জানতেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে কিছুই জানতাম না। ছোট বোনকে পছন্দ করে ছেলেকে বিয়ে করিয়েছিলাম। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে তালাকনামায়। সেখানে ছোট বোনের পরিবর্তে বড় বোনের নাম লেখা আছে। আমার মনে হয়, কাজী এ সমস্যা তৈরি করেছেন।’
মেয়ের অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছোট মেয়ের সঙ্গেই বিয়ে হয়েছিল। এখন তালাকনামা তৈরি করতে গিয়ে দেখা যায়, বড় মেয়ের নামে কাবিন হয়েছে। এ কারণে বড় মেয়ের নাম দিয়ে তালাকনামা পাঠানো হয়েছে।’
যার নামে কাবিন হয়েছে তিনি বলেন, ‘আসলে আমার ছোট বোনের সঙ্গেই বিয়ে হয়েছিল ওই যুবকের। তার অনেক আগেই আমার বিয়ে হয়েছে। আমার সংসারে দুটি সন্তানও আছে।’
আগে থেকেই বিষয়টি আপনারা জানতেন এমন দাবি করেছে ছেলেপক্ষ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দুই পক্ষের অভিভাবকরা বিষয়টি জানতেন। দুই পরিবারের সম্মতিতেই আমার জন্মনিবন্ধন দিয়ে কাবিন করা হয়েছিল ছোট বোনের। পরে এটি সংশোধনের কথা থাকলেও কাজী করেননি। এজন্য তালাকনামা আমার নামেই তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমি মানসিক যন্ত্রণায় আছি।’
এই বিয়ের কাবিননামা তৈরি করেছেন জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের কাজী নুরুল ইসলাম। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ছোট মেয়ের নামেই কাবিননামা তৈরি করেছি। সেখানে কোনও ধরনের ভুলত্রুটি হয়নি। বিয়েতে মেয়ে এবং ছেলেপক্ষের ২৫-৩০ জন লোক উপস্থিত ছিলেন। তারাও বিষয়টি দেখেছেন। এখন শুনতে পাচ্ছি, বড় বোন তালাকনামা পাঠিয়েছেন। এখানে আমার কী করার আছে। আমি জন্মনিবন্ধন দেখেই বিয়ের নিবন্ধন (রেজিস্টার) খাতায় নাম অন্তর্ভুক্ত করেছি। পরবর্তীতে কাজী একেএম সিরাজুল ইসলাম তা রেজিস্ট্রি করেছেন।’
ছোট বোনের বয়স না হওয়ায় বড় বোনের জন্মনিবন্ধন দিয়ে আপনি কাবিন করেছেন বলে দুই পরিবার অভিযোগ করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল ইসলাম বলেন, ‘তাদের অভিযোগ সত্য নয়।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে একই ইউনিয়নের কাজী একেএম সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এই বিয়ের কাবিন আমি করিনি। কাজেই এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’
জাঙ্গালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের ফরাজী বলেন, ‘দুই পরিবারের লোকজনই বলছে ছোট বোনের বয়স না হওয়ায় বড় বোনের জন্মনিবন্ধন দিয়ে কাবিন করা হয়েছিল। এ কারণে তালাকনামায় বড় বোনের নাম এসেছে। এখানে আমার কিছুই করার নেই।’
নোট: দুই পরিবারের সামাজিক সম্মানের কথা বিবেচনা করে তাদের নাম-পরিচয় সংবাদে প্রকাশ করা হয়নি।