বরিশাল
মামলা দায়ের
বিসিসি’র প্ল্যান পাশের নামে চাঁদাবাজি করায় ভুয়া প্রকৌশলী আটক
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) প্রকৌশলী পরিচয়ে প্ল্যান পাশ করিয়ে দেবার নামে ভবন মালিকদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে আকাশ চন্দ্র দাস নামে এক প্রতারকের বিরুদ্ধে। গতকাল ফেসবুক লাইভে এসে সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ওই প্রতারককে চোর বলে অ্যাখ্যা দিয়ে ক্ষোভ ঝাড়েন এবং তার বিরুদ্ধে মামলা সহ গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। পরে রাতেই তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃত আকাশ চন্দ্র দাস বরিশাল মেট্রোপলিটনের এয়ারপোর্ট থানাধীন ইছাকাঠী এলাকার বাবুল চন্দ্র দাসের ছেলে।
ওই লাইভে নগরবাসীর উদ্দেশ্যে মেয়র আরো বলেন, নগরের যারা সচেতন নাগরিক আছেন তাদের বুজতে হবে আমি কি বলতেছি, টাকা দিয়ে খালিখালি বদনাম করতেছে। টাকা তো এখানে কেউ নেয় না। টাকা বাহির থেকে বাটপাররা নিয়ে যাচ্ছে, প্লানের নাম করে খালিখালি টাকা দিচ্ছেন। এখানে সিটি করপোরেশনে নট এ সিঙ্গেল পেনি নেয়া হয়না। আর যারা নেয় তারা সাথে সাথে ধরা পড়বে। এসময় প্রতারক আকাশকে উদ্দেশ্যে করে মেয়র আরো বলেন, এ তো আজকে জেলে যাবে। বরিশালের জনগনকে যারা হয়রানি করে, সিটি করপোরেশনের ভাবমূর্তি যারা নষ্ট করে তাদের জেল জরিমানা তো আছেই, জেল নির্ঘাত এবং ছবি টানিয়ে দেব সিটি করপোরেশনে, যে এসব চোরদের সাথে প্লানিং’র ব্যাপারে কেউ আলাপ করবেন না। এরা আর্কিটেক না, এরা চোর।
এরপর তিনি ওসি আসার ব্যাপারে জানতে চান। পরে তিনি নগরবাসীর উদ্দেশ্যে পত্রিকায় সতর্কমূলক বিজ্ঞপ্তি দেয়ার কথা ব্যক্ত করে বলেন, কাউকে প্ল্যান পাশের নামে কোন টাকা দিলে সিটি করপোরেশন কোন দায় থাকবে না। সিটি করপোরেশন যদি তাদের ধরতে পারে সাথে সাথে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবে।
এদিকে প্রতারনার দায়ে মামলার বাদী সিটি কর্পোরেশনের স্থপতি মোঃ হাসিব মাহমুদ টিপুর দায়ের করা মামলা সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতার আকাশ চন্দ্র দাস “নীড় ডিজাইন” নামক ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মের নাম ব্যবহার করে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন হতে বাড়ি নির্মাণের প্লান পাশের কাজ করে থাকে। যার ধারাবাহিকতায় আকাশ চন্দ্র দাস বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে ল্যান্ড ইউজার সার্টিফিকেট (এলইউসি) এবং বাড়ি নির্মানের প্লান পাশ করানোর কথা বলে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে নির্ধারিত ফি’র থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের লক্ষ্যে প্রতারণা করে আসছে।
রোববার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে সিটি কর্পোরেশনের এনেক্স ভবনের তৃতীয় তলার প্লান শাখায় বরিশাল নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ডের নজরুল সড়কের বাসিন্দা নিয়াজ খান তার বাবা ও মায়ের নামে যৌথ বাড়ির প্লান পাশ ও এলইউসির জন্য আসেন। ওই সময় প্রতারক আকাশ চন্দ্র দাস প্লান ও এলইউসি পাশ করিয়ে দেয়ার জন্য নিয়াজ খানের কাছ থেকে নির্ধারিত ফি’র অতিরিক্ত ২৭ হাজার টাকা নেয়। যে টাকা মামলার বাদী, টাউন প্লানার, সার্ভেয়ার, সিটি করপোরেশনের মেয়রের একান্ত সচিব মোস্তফা জামানকে দিতে হবে বলে জানায়। বিষয়টিতে নিয়াজ খানের সাথে সন্দেহ হলে তিনি মামলার বাদী স্থপতি শাখার মোঃ হাসিব মাহমুদ টিপুকে জানায়। তাৎক্ষনিক বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে আকাশ চন্দ্র দাসকে আটক করেন স্থপতি শাখার কর্মকর্তরা।
স্থপতি শাখার কর্মকর্তারা জানান, আটকের পর আকাশ চন্দ্র দাসকে মেয়র মহোদয়ের সামনে হাজির করা হয়। তখন সে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে, অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে প্রতারণাপূর্বক অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি। আর এর মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশন ও মেয়র সেরনিয়বাত সাদিক আব্দুল্লাহ্’র ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করাসহ মানহানি করে আসছিলো প্রতারক আকাশ। পরবর্তীতে আকাশকে থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয় এবং মামলার জন্য লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, প্রতারনা মামলার আসামী “নীড় ডিজাইন” নামক ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মের প্রকৌশলী পরিচয় দেয়া আকাশ চন্দ্র দাস (৩০) কে গ্রেফতার দেখিয়ে সোমবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেলা হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য বিসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আহমেদের ব্যবহৃত মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আকাশ নগরের বিভিন্ন এলাকায় নিজেকে বিসিসির তালিকাভুক্ত প্রকৌশলী দাবি করে প্রতারণার মাধ্যমে ভবন মালিকদের নানাভাবে হয়রানি করে আসছিলেন। ভবন মালিকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্ল্যান পাস করিয়ে দেওয়াসহ নানা ত্রুটির কারণে আটকে থাকা প্ল্যান ছাড়িয়ে দেওয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নিতেন প্রতারক আকাশ। যা আপনারা মেয়রের লাইভে দেখেছেন। গতকাল রাতে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বর্তমানে সে পুলিশের হাতে আটক রয়েছে।