সারাদেশ
প্রেমের ফাঁদে ফেলে মুন্সীগঞ্জের মেয়েকে নিয়ে উধাও বরিশালের মেয়ে : অতঃপর
ফেসবুকে পরিচয়। অতঃপর একে অপরের ভালোলাগা ভালোবাসা। দেড় বছর সম্পর্কের একপর্যায় দু’জন সিদ্ধান্ত নেন বাড়ি ছেড়ে দূর অজানায় পালাবেন তারা। যেই কথা সেই কাজ। তবে বাড়ি ছাড়ার পর একপর্যায়ে প্রেমিকা মেয়েটি বুঝতে পারলেন যার সঙ্গে ঘর বাঁধার স্বপ্নে বিভোর হয়ে ছেড়েছেন স্বজন সে মানুষটি আসলে তারমতই আরেকটি মেয়ে!
শুনতে অবাক লাগলেও ঘটনাটি ঘটেছে মুন্সীগঞ্জের এক মেয়ের সঙ্গে। তবে পরিবারের প্রচেষ্টায় মুন্সীগঞ্জের রাদিয়া ও বরিশালের ফাতেমা জান্নাত আফরিন নামের দুই মেয়েকেই বুধবার ভোরে ফিরেয়ে আনা হয়েছে অবশেষে। এমন কণ্ডে এলাকায় তৈরি হয় চাঞ্চল্যের।
জানা যায়, প্রায় ২ বছর আগে মুন্সীগঞ্জ সদরের কাঁশিপুর এলাকার স্কুলছাত্রী রাদিয়ার সঙ্গে ফেসবুকে বরিশালের আফরান আহমেদ নামের ফেসবুক আইডির একজনের সঙ্গে পরিচয় হয়। আফরান আহমেদ নামে মূলত ছেলে সেজে প্রেমের ফাঁদ পাতেন বরিশালের ফাতেমা জান্নাতুল আফরিন। রাদিয়া বুঝতে না পেরে ছেলেরূপী ঐ মেয়ের সঙ্গেই চালিয়ে যান প্রেমের সম্পর্ক।
ফাতেমার কথায় তিনদিন আগে গত ১২ মে বাড়ি ছেড়ে যান রাদিয়া। বরিশাল থেকে লঞ্চে ঢাকায় আসেন ফাতেমা। তারপর দু’জনের দেখা হয় রাজধানীর সায়দাবাদ এলাকায়। এ সময় চুল কেটে বুকের ওপর স্কচটেপ পেঁচিয়ে অপেক্ষারত আফনান ওরফে ফাতেমাকে ছেলেই মনে করেন রাদিয়া। ঘর বাঁধার স্বপ্নে প্রথমে লঞ্চে ওঠার চেষ্টার করলেও লঞ্চ না পেয়ে পরে বরিশালের বাসে ওঠেন তারা। এরপর দু’জন বাসে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন , আমরা ঘটনটি শুনেছি। তবে ঐ পরিবারে থেকে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যাত্রায় ফাতেমা কৌশলে তার পরিচয় গোপন রাখলেও একপর্যায়ে রাদিয়া বুঝতে পারে আফনান আসলে ছেলে না মেয়েই। বাসে ঘুরাঘুরির একপর্যায়ে তিনদিনের মাথায় টাকা শেষ হয়ে গেলে রাদিয়ার এক আত্মীয়র বাসায় দু’জন যান। পরে তাদের ধরে ফেলেন রাদিয়ার বাড়ির লোকজন। এ সময় আফনান যে নারী সেটি বেরিয়ে আসে। বুধবার সকাল পৌনে ৫টার তাদের দুজনকে মুন্সীগঞ্জে নিয়ে আসে রাদিয়ার পরিবার।
এদিকে, রাদিয়ার বাড়ির লোকজন ফাতেমা ওরফে আফনানকে বুধবার সকালে তল্লাশি করে ৫টি সিম ও ১০টি ফেসবুক একাউন্ট দেখতে পান। এতে ফাতেমা পুরুষ সেজে নারী পাচারে জড়িত কিনা তা নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
রাদিয়ার দাদা চাঁন মিয়া জানান, দুজনকে যখন ধরা হয় তখন ফাতেমার ওরফে আফরানের নাকে ব্যান্ডেজ করা ছিলো। সেটি খোলার পড় নাকে রিং পড়ার ছিদ্র দেখে তাদের সন্দেহ হয়। পরে তারা বুজতে পারেন আফনান আসলে মেয়ে। এ সময় জানতে চাইলে ফাতেমা নিজের আসল পরিচয় দিয়ে তার বাড়ির ঠিকানা দেন। তবে তার কাছ থেকে অনেকগুলো সিম পাওয়ায় তাদের সন্দেহ হচ্ছে যে, তিনি নারী পাচারকারী।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ফাতেমা বলেন, ফেসবুকে একটি গ্রুপে তাদের পরিচয়। প্রথমে বন্ধুর মতই কথা বলি সিরিয়াস কিছুই ছিল না। হয়তো আমার মধ্যে কোনো একটা প্রবলেম আছে। কথা বলতে বলতে বন্ধুত্ব এরপরে সম্পর্কে জড়িয়েছিলাম।
ফাতেমা আরো বলেন, আমরা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছিলাম, ঠিকঠাক মতো খাওয়া-দাওয়া হচ্ছিল না। তখন আমি ওকে বলেছিলাম মুন্সীগঞ্জ চলে যাও। কিন্তু আমার একটা ভুল হয়েছে আমি ওকে বলিনি আমি ছেলে না মেয়ে।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা ঘটনটি শুনেছি। তবে ঐ পরিবারে থেকে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।