বরিশাল সদর
প্রধান শিক্ষকদের মাধ্যমে বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাত করলেন এটিও
এম.এস.আই লিমন।। সরকারি বরাদ্দের ৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা অভিনব কৌশলে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এটিও মেহেদী মাসুদের বিরুদ্ধে। বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুইটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত একটি ক্লাসটারের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। তার নির্দেশে ওই ক্লাসটারের আওতায় ৩২টি প্রাইমারী স্কুলের সরকারের বরাদ্দকৃত টাকা উত্তোলন করার তথ্য পাওয়া গেছে। আর ওই টাকা উত্তোলন করা হয় দুই ইউনিয়নের দুজন প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে।
সূত্র মতে, গত অর্থবছরে স্লিপের মাধ্যমে প্রাইমারি স্কুলের প্রয়োজনীয় যাবতীয় মালামালের চাহিদা অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ দেয় গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং ম্যানেজিং কমিটির অনুমোদনক্রমে যৌথ স্বাক্ষরের মাধ্যমে স্কুলের ব্যাংক এ্যাকাউন্ট থেকে বরাদ্দকৃত টাকা উত্তোলন করে ভাউচারের মাধ্যমে ব্যবহার করতে পারবে। এবং স্কুলের যাবতীয় মালামাল ক্রয়ের জন্য খরচের ভাউচার মাধ্যমে ব্যয় দেখাতে হবে৷ আর এর তদারকির দায়িত্বে থাকেন একজন এটিও। তিনি সরকারের ওই বরাদ্দকৃত অর্থের খরচের যথাযথ ভাউচার মিলিয়ে ব্যায়ের বিষয়টি উপজেলা টিও বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করে থাকেন।
তবে অভিযোগ পাওয়া গেছে, দুই ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা এটিও মেহেদী মাসুদ দুই প্রধান শিক্ষককে দায়িত্ব দেয় ৩২টি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের থেকে ২২ হাজার টাকা করে উত্তোলন করার। এটিওর নির্দেশ মোতাবেক গত তিন মাস পূর্বে চরামদ্দী ইউনিয়নের ১৫টি সরকারি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে ২২ হাজার টাকা করে উত্তোলন করে চরামদ্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুন । তিনি ওই ১৫টি প্রাইমারি স্কুলের মালামাল ক্রয় করে দেওয়ার কথা বলেন।
একইভাবে চরাদি ইউনিয়নে থাকা ১৭টি সরকারি প্রাইমারি স্কুলের মধ্যে ১৬টি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের নিকট থেকে ২২ হাজার টাকা করে উত্তোলন করে হলতাহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাফর ডাকুয়া।নিয়ম-বহির্ভূত এমন প্রস্তাবে প্রথমে কেউ রাজি না থাকলেও এটিওর ভয়ভীতি দেখিয়ে আদায় করে ওই দুই প্রধান শিক্ষক। এর মধ্যে চরাদী ইউনিয়নের একটি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিয়ম-বহির্ভূতভাবে টাকা না দেয়ায় ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে সরকারি গাছ কাটার মামলায় ফাঁসানো হয় বলেও সূত্র জানায়।
এ ব্যাপারে চরাদী ইউনিয়নের হলতাহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাফর ডাকুয়ার মুঠোফোনে প্রতিবেদককে স্বীকার করে বলেন, এটিও মেহেদী স্যারের নির্দেশে স্কুলের মালামাল ক্রয়ের জন্য ২০ হাজার টাকা করে ১৬টি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের থেকে উত্তোলন করি। এবং মালামাল কিনে প্রতিটি স্কুলে পাঠিয়ে দেই। তিনি আরো বলেন, গত বছর স্কুলের প্রয়োজনীয় মালামাল ক্রয় করার জন্য স্লিপের মাধ্যমে সরকার থেকে টাকা দেয়া হয়। আমরা প্রধান শিক্ষকরা মিলিত হয়ে একত্রিতভাবে স্কুলের মালামাল ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নিয়ে টাকা উঠাই। এ বিষয়ে এটিও স্যার অবহিত আছেন বলেও জানান।
সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থ স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের নিকট থেকে আদায় করার নিয়ম রয়েছে কিনা জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি এই প্রধান শিক্ষক। অপরদিকে, চরামদ্দী ইউনিয়নের ১৫ টি সরকারি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকেও একইভাবে সরকারি বরাদ্দকৃত টাকা উত্তোলন করে চরামদ্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুন। উপরোক্ত অভিযোগের বিষয় তার কাছে জানতে চাওয়া হলে টাকা উত্তোলনের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তিনি নয় তার এর সহকর্মী ওইসব স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করে এটিওর কাছে জমা দিয়েছে।
এদিকে সরকারি কর্মকর্তা হয়ে প্রধান শিক্ষকদের জিম্মি করে অভিনব কৌশলে সরকারি বরাদ্দকৃত টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন এটিও মেহেদী। তবে তিনি প্রশ্নের জবাবে কৌশলেই নিজেকে নির্দোষ দাবী করেন। অথচ তার নির্দেশনার কথা দুই ইউনিয়নের দুই প্রধান শিক্ষক অকপটে স্বীকার করেন।
২২ হাজার টাকা করে দুই ইউনিয়নের ৩১টি সরকারি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে সরকারি বরাদ্দকৃত স্লিপে আসা অর্থ থেকে মোট ৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা আদায় করে নেয় এটিও মেহেদী মাসুদ। এ ব্যাপারে বাকেরগঞ্জ উপজেলার টিও জসিম আহমেদ এর কাছে গত বৃহস্পতিবার (১৪) জানুয়ারি তারিখে অভিযোগ করে ওই ক্লাসটারের আওতার একটি সরকারি প্রাইমারি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির এক সভপতি। এরপর পরই হঠাৎ করে এটিও কয়েকজন প্রধান শিক্ষকদের গতকাল শনিবার তলব করেছে বলে সূত্র নিশ্চিত করে। এ বিষয়ে বাকেরগঞ্জ উপজেলার টিও জসিম আহমেদ এর সাথে কথা বললে তিনি জানায়, লিখিতভাবে অভিযোগ পাওয়া গেলে তিনি অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।