পটুয়াখালী
প্রথম স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যা, আসামি আট
নিজস্ব প্রতিবেদক॥ সাত বছর আগে দুমকী উপজেলার পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের আবদুল মান্নানের মেয়ে ইতিকে বিয়ে করেছিলেন কুষ্টিয়ার জলিল। ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতে গিয়ে তাদের পরিচয়। আগুনে পুড়িয়ে প্রথম স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে স্বামী আবদুল জলিলকে ১২ ঘণ্টার মধ্যেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার রাত পৌনে ৮টার দিকে কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা এলাকা থেকে কুষ্টিয়া পুলিশের সহায়তায় পটুয়াখালীর পুলিশ জলিলকে গ্রেপ্তার করে।
পটুয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বাউফল সার্কেল) সাহেদ চৌধুরী এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রথম স্ত্রী ইতি বেগমের শরীর ও তার কক্ষে আগুন দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন আবদুল জলিল। তাকে কুষ্টিয়া থেকে পটুয়াখালীর দুমকী থানায় নিয়ে আসা হচ্ছে।
পুলিশ সুপার বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে আমরা জাল পেতেছিলাম। সেই জালে ১২ ঘণ্টার আগেই প্রধান আসামি জলিল আটকা পড়েছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে স্ত্রীর শরীরে আগুন দেয়ার পরপরই পটুয়াখালীর দুমকীর পাঙ্গাশিয়া এলাকা ত্যাগ করেন জলিল। পরে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে রাখা হয়। ভোরবেলায় তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ নিশ্চিত হয়, জলিল বরিশালের রূপাতলী এলাকায় অবস্থান করছেন।
এ সময় পুলিশ এটাও বুঝতে পারে যে, রূপাতলী থেকে জলিলের পরবর্তী গন্তব্য কুষ্টিয়া। কারণ সেখানে তার দ্বিতীয় স্ত্রী থাকেন। এরপরই পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহীদুল্লার নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহেদ চৌধুরী কুষ্টিয়ায় একটি টিম পাঠান। সাহেদ চৌধুরী জানান, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা এলাকায় জলিল তার দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে অবস্থান করার সময় খুব সহজেই তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়।
এর আগে সন্ধ্যায় নিহত ইতির বাবা আবদুল মান্নান বাদী হয়ে জলিলকে প্রধান আসামি করে দুমকী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। দুমকী থানার ওসি আবদুস সালাম জানান, ইতির মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সাত বছর আগে দুমকী উপজেলার পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের আবদুল মান্নানের মেয়ে ইতিকে বিয়ে করেছিলেন কুষ্টিয়ার জলিল। ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতে গিয়ে তাদের পরিচয়।
গত দুই বছর ধরে যৌতুকের দাবিতে, এরপর গত দুই বছর ধরে যৌতুকের দাবিতে ইতিকে খুব মারধর করতেন জলিল। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে এক সপ্তাহ আগে পরিবারের কাউকে কিছু না জানিয়ে স্বামীর কাছে ডিভোর্স লেটার পাঠান ইতি। এতে ক্ষুব্ধ জলিল মোবাইল ফোনে ইতিকে আগুনে পুড়িয়ে মারার হুমকি দেন।
এ ঘটনার ৪ দিন পর গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে ইতির বাবার বাড়ি এসে ঘুমন্ত অবস্থায় ইতির শরীর ও তার কক্ষে আগুন লাগিয়ে দেন জলিল। পরে ইতির চিৎকারে তার বাবা-মা এগিয়ে এলে তারা জলিলকে পালিয়ে যেতে দেখেন। এ সময় ইতিকে উদ্ধার করে পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে বরিশালে পাঠানো হয়। শুক্রবার বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়ার পথে সকাল ৭টার দিকে ইতি মারা যান।