বরিশাল
প্রতিমন্ত্রী জহিদ ফারুকের ব্যক্তিগত সহকারি হাদিস মীরকে ডিবি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ
বরিশাল সদর আসনের সাংসদ, পানিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল (অবঃ) জহিদ ফারুক শামীমের ব্যক্তিগত সহকারি ( পিও) হাসিদ মীরকে তার পদ থেকে অব্যহতি দেয়ার একদিনের মাথায় ঢাকা ডিবি পুলিশের একটি টিম তাকে আটক করেছে। বরিশাল শহরের উত্তর কউনিয়ার ভাড়া বাসা থেকে বুধবার (১৭জুন) রাতে আটকের পর সংশ্লিস্ট কাউনিয়া থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। থানার ওসি আজিমুল করিম এই তথ্য নিশ্চিত করলেও কি কারনে তাকে আটক করা হয়েছে সে বিষয় বিস্তারিত জানাতে অপরোগতা প্রকাশ করেন। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকারের উপর মহলের নির্দেশে হাদিস মীরের কাছ থেকে দুর্নীতি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ন তথ্য উৎঘাটনের জন্য তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে আটক করা হবে কিনা সে বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোন ঘোষনা দেওয়া হয়নি। উল্লেখ্য, প্রতিমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করে ব্যাপক দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে বির্তকিত হাসিদ মীরকে নিয়ে সাম্প্রতিকালে বরিশালের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে বেশ ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বিশেষ করে তার নিজ এলাকা চরবাড়িয়া ইউনিয়নের সাপানিয়া গ্রামে অন্যের জমি দখল করতে পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে মিডিয়ায় খবরের শিরোনাম হলে তার দুর্নীতির বহুমুখি রুপ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। সেই সাথে প্রতিমন্ত্রীর নিজ ঘরোনায় অনুসারিদের মধ্যে বিভাজন সৃস্টির অভিযোগ উঠে। এই নিয়ে বরিশালে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার মাঝে গত বুধবার (১৬জুন) বিকেলে হাদিস মীরকে প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারির পদ থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনলায়ের একজন সিনিয়র সচিব স্বাক্ষরিত ওই অব্যহতি পত্রে হাদিস মীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ কি তার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। ধারনা করা হচ্ছে, বির্তক সৃস্টিতে অনুঘটকের ভুমিকায় অবর্তীন হওয়া হাদিস মীরকে নিয়ে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম নিজেই বিব্রত এবং অনুসারিদের চাপের মুখে তাকে অব্যহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। অবশ্য ওই অব্যহতি পত্রে দেখানো হয় গত ১জুন থেকে এই আদেশ কার্যকর হয়েছে। অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হয়েও মন্ত্রীর আস্থাভাজন হাদিস মীর ব্যাপক ক্ষমতার অধিকারী থেকে অবশেষে পিও’র পদ হারানো নিয়ে নতুন আলোচনার জন্ম নেওয়ার ২৪ঘন্টার ব্যাবধানে ঢাকার ডিবি পুলিশ তাদের হেফাজতে নিল। বুধবার(১৭জুন) রাত ৯টার পর এ খবর বরিশাল শহরে ছড়িয়ে পরলে মিডিয়ার কর্মীরা এ তথ্য নিশ্চিত হতে কাউনিয়া থানায় ভিড় করে। এদিকে থানা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, সন্ধ্যার কিছু পরেই মেট্টোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে উত্তর কাউনিয়া এলাকায় দায়ীত্বরত একজন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাকে হাদিস মীরের বাস ভবনের সামনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে সাদা পোষাকের একটি দল হাদিস মীরকে তার বাসা থেকে নিয়ে এসে ওই মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তার গাড়িতে তুলে থানায় নিয়ে যায়। থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কক্ষের পাশের একটি রুমে তাকে একাকি রেখে সেখানে অন্য কোন পুলিশ সদস্য সহ তার পরিবার-পরিচিত কাউকে প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ওই সূত্রটি জানায়, হাদিস মীরকে ঢাকা থেকে আগত ডিবি পুলিশের একটি টিম প্রাথমিক একদফা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ওই কক্ষে রেখে তারা বেরিয়ে গেছেন। পুনরায় রাতে জিজ্ঞাসাবাদের কথা রয়েছে। প্রতিমন্ত্রীর সাবেক ব্যক্তিগত সহকারিকে থানায় নিয়ে আসার বিষয় শুধুমাত্র মেট্রপলিটন পুলিশের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা অবগত, এমনকি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকেও এ সংক্রান্তে বিস্তারিত জানানো থেকে বিরত রাখা হয়েছে। বিষয়টি স্বীকার করে কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিমুল করিম জানান, ঢাকা ডিবি পুলিশের একটি টিম হাদিস মীরকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজনে থানা অবস্থান নিয়েছেন। এদিকে একাধিক সূত্র জানায়, দুর্নীতির সম্পৃক্ততা পেলে হাদিস মীরকে আটক দেখানো সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে কাবিখার চাল আত্মসাৎ এবং অল্পদিনে বিপুল পরিমান অর্থের মালিক হওয়ার রহস্যের উৎস নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। উল্লখ্য, নিজ গ্রাম সাপানিয়ার জামাল শরিফ নামক এক পড়শির জমি জোরপূর্বক দখল এবং পুলিশ ব্যবহার করে হয়রানির ঘটনা পত্রিকায় শিরোনাম হলে হাসিদ মীরের পতন তরান্নিত হয়। সেই সাথে বেরিয়ে আসছে যুবক হাদিস মীর মন্ত্রীর নাম ব্যবহার করে ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে বরিশালে কোটি পতিদের তালিকায় এখন একজন।