বরিশাল
দীর্ঘ দেড় যুগের প্রভাব খর্ব, শিল্পী আটক—পলাতক সুমনের খোঁজে অভিযান জোরদার
বরিশালে মাদক দম্পতির ‘সাম্রাজ্যে’ পুলিশের অভিযান
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল নগরীর পলাশপুর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় মাদক চক্রের ‘অঘোষিত সাম্রাজ্য’ শিল্পী–সুমন দম্পতির আস্তানায় বিশেষ অভিযান চালিয়েছে কাউনিয়া থানা পুলিশ। শুক্রবার (৭ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পরিচালিত এই অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে চক্রের অন্যতম নেতৃত্বধারী শিল্পী বেগমকে। তবে তার স্বামী মান্না ওরফে সুমন পালিয়ে যায় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেড় দশকের বেশি সময় ধরে পলাশপুর–মোহাম্মদপুর এলাকায় ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ দখলে রেখেছিলেন এই দম্পতি। এলাকায় তাদের প্রভাব এমন পর্যায়ে গিয়েছিল যে, অনেকে প্রকাশ্যে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতেও সাহস পেতেন না। মাদক ব্যবসার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাড়ির আশপাশে স্থাপন করা হয় অসংখ্য সিসিটিভি ক্যামেরা। পুলিশের কোনো গাড়ি বা অপরিচিত ব্যক্তির আগমন টের পেলেই তারা সতর্ক হয়ে পড়তেন।
পুলিশের সহকারী কমিশনার পবিত্র কুমার হালদারের নেতৃত্বে একটি বিশেষ টিম শুক্রবার সকালে মোহাম্মদপুর এলাকায় প্রবেশ করে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দম্পতি পালানোর চেষ্টা করলে শিল্পীকে ধাওয়া করে আটক করা হয়। তবে মান্নাসুমন দ্রুত পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
অভিযানে অংশ নেন কাউনিয়া থানার ওসি ইসমাইল হোসেন, সেকেন্ড অফিসার হরসিদ মন্ডলসহ থানা পুলিশের একাধিক সদস্য। পরে স্থানীয়দের উপস্থিতিতে দম্পতির বসতঘরে তল্লাশি চালানো হয়। তল্লাশিতে ১০২ পিস ইয়াবা, মাদক বিক্রির নগদ ২০ লক্ষাধিক টাকা ও বেশ কয়েকটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
কাউনিয়া থানার ওসি ইসমাইল হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সংগৃহীত তথ্য ও নজরদারির ভিত্তিতে এ অভিযান পরিচালিত হয়েছে। আটক শিল্পীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও অস্ত্র আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। পলাতক মান্নাসুমনকে ধরতে এলাকায় ও আশপাশের বেশ কিছু পয়েন্টে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) নতুন কমিশনার শফিকুল ইসলাম দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নগরজুড়ে মাদকচক্র শনাক্তে গোয়েন্দা ও থানা পুলিশকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিএমপির একাধিক সূত্র বলছে, পলাশপুর এলাকায় শিল্পী–সুমন দম্পতির বিরুদ্ধে অভিযানটি সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের পরিচালিত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অভিযান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা দেশ জনপদকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই দম্পতির কারণে এলাকাটি মাদক ব্যবসার অন্যতম সক্রিয় পয়েন্টে পরিণত হয়। বারবার অভিযোগ দিলেও তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন। পুলিশের এই অভিযান এলাকায় স্বস্তির পরিবেশ তৈরি করেছে বলে জানান তারা।
পুলিশ বলছে, শুধু শিল্পী–সুমন দম্পতি নয়, বরিশাল নগরীর অন্যান্য মাদক গডফাদারদের টার্গেট করে আরও বিশেষ অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি রয়েছে।



