পটুয়াখালী
পদ্মা-পায়রা ঘিরে কুয়াকাটায় ৫০ লাখ পর্যটক ভ্রমণের সম্ভাবনা
পদ্মা সেতু আর পায়রা বন্দরের দিকে তাকিয়ে আছেন বরিশালের পর্যটন খাতের বিনিয়োগকারীরা। বিশেষ করে সাগরকন্যা কুয়াকাটাকে ঘিরে জেগে উঠতে যাচ্ছে এ অঞ্চলের পর্যটন সেক্টর এমনটাই ধারণা বিশেষজ্ঞদের। কুয়াকাটার একাধিক বিনিয়োগকারী ধারণা করছেন, পদ্মা আর পায়রা চালু হলে কুয়াকাটায় ৫০ লাখের মতো পর্যটক বছরে ভ্রমণ করতে পারবে। আর দেশ-বিদেশের এসব পর্যটককের ঘিরে পাল্টে যেতে পারে বরিশালের অর্থনৈতিক চিত্র। যদিও এজন্য প্যাকেজ পরিকল্পনা গ্রহণেরও পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
একই স্থান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার জন্য পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার মতো সমুদ্র সৈকত বিশ্বের আর কোথাও নেই। কুয়াকাটার আরও যেসব বৈশিষ্ট্য তার মধ্যে অন্যতম এখান থেকে চাইলেই বিশ্বের অন্যতম ম্যানগ্রভ বন সুন্দরবনসহ বিভিন্ন অপরূপ দর্শনীয় স্থান ঘুরে আসা যাবে। যে কারণে সাগরকন্যা কুয়াকাটা ঘিরে বিনিয়োগকারীদেরও দৃষ্টি। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিনিয়োগকারীরা কেবল চেয়ে আছেন পদ্মা ও পায়রা পুরোপুরি চালু হওয়ার অপেক্ষায়। কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোতালেব শরিফ বলেন, পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু হলে আর পায়রা বন্দর চালু হলে কুয়াকাটায় পর্যটক বাড়বে কয়েকগুণ। বিনিয়োগ হবে ব্যাপক। গড়ে উঠবে উন্নতমানের হোটেল-মোটেল। কিন্তু এ জন্য তিনি কুয়াকাটার মাস্টার প্লান বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে বছরে ১০ লাখ পর্যটক কুয়াকাটায় আসে। পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু হলে বছরে ৫০ লাখের মতো পর্যটক আসবে। আর এজন্য কুয়াকাটা থেকেই সুন্দরবন, পায়রা বন্দর ভ্রমণের ব্যবস্থা করতে হবে। মেরিন ড্রাইভ সম্পন্ন করতে হবে। গড়তে হবে দেশি-বিদেশি পর্যটকবান্ধব পরিবেশ। তিনি বলেন, কুয়াকাটায় বিনিয়োগে বহু উদ্যোক্তা অপেক্ষায় আছেন।
কুয়াকাটা ইনভেস্টর ফোরামের মুখপাত্র হাসানুল ইকবাল বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে পর্যটক বাড়বে কুয়াকাটায় কয়েকগুণ। কুয়াকাটা আসার পথে অনেক জমি কিনে ফেলেছে বিনিয়োগকারীরা। এসব স্থানে থ্রি-স্টার, ফোর-স্টার হোটেল হবে। দেশ-বিদেশের পর্যটক অতি স্বল্প সময়ে কুয়াকাটায় আসতে পারবে। তিনি বলেন, এখন থেকেই বিনিয়োগ করার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। কুয়াকাটা মাস্টার প্লান বাস্তবায়ন
করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে ঘুরে দাঁড়াবে এ অঞ্চলের পর্যটন খাত। কুয়াকাটার বাসিন্দা প্রভাষক আ. রাজ্জাক বলেন, পদ্মা সেতু আর পায়রা বন্দর চালু হলে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার গুরুত্ব বাড়বে। এখনই হাজার হাজার পর্যটক আসে কুয়াকাটায়। পদ্মা সেতু চালু হলে পর্যটকরা ঢাকা থেকে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টায় কুয়াকাটা আসতে পারবে। কুয়াকাটাকে ঘিরে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। এজন্য আশায় বুক বেঁধেছে এখানকার উদ্যোক্তারা। তবে তিনি এজন্য কুয়াকাটার উন্নয়নের ওপর জোর দিয়ে বলেন, কুয়াকাটার চলমান পৌর নির্বাচনের ফলের ওপর পর্যটক বান্ধব পরিবেশ নির্ভর করবে। কুয়াকাটার উন্নয়ন চাইলে যোগ্য ব্যক্তিকে ভোট দিতে হবে। রাজধানীতে একটি বেসরকারি বিমান সংস্থায় কর্মরত ফ্রিল্যান্সার মো. জুয়েল বলেন, পর্যটকরা কুয়াকাটায় আসতে চান। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ এবং ভালো হোটেল না থাকায় আগ্রহ হারাচ্ছেন। তবে আশার কথা হলো পদ্মা সেতু চালু হলে বিদেশি পর্যটকরা কুয়াকাটামুখী হবেন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সদস্য সহযোগী অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান খান বলেন, পদ্মা সেতুতে যাতায়াত শুরু হলে কুয়াকাটায় রাজধানী থেকে পর্যটক আসবে ব্যাপক। যার একাংশ হবে বিদেশি পর্যটক। পায়রা পোর্ট এলাকা ঘিরেও পর্যটন শিল্প গড়ে উঠবে। তিনি বলেন, কুয়াকাটা বিশ্বের এমন সমুদ্র সৈকত যেখানে সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত একই সময় দেখা যায়, সুন্দরবন বিশ্বের সেরা ম্যানগ্রোভ বন। সম্ভাবনাময় এ পর্যটন শিল্পকে জাগিয়ে তুলতে পারলে দেশের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। এসব বাস্তবায়নে কুয়াকাটাসহ গোটা বরিশাল বিভাগের উন্নয়নে একটি পরিকল্পনা নেওয়া দরকার বলে জানান অর্থনীতিবিদ আখতারুজ্জামান।
সূত্র: আলোকিত বাংলাদেশ