জাতীয়
নাসিমের আসনে মনোনয়ন তুলেছেন মনসুর আলীর দুই নাতি
রিপোর্ট দেশ জনপদ ॥ কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জ সদরের পাঁচ ইউনিয়ন নিয়ে সিরাজগঞ্জ-১ আসন। শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর সন্তান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ১৪ দলের সমন্বয়ক সাবেক স্বরাষ্ট্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুর পর নিয়ম অনুযায়ী আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এরই মধ্যে উপ-নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এ আসনে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য ১৭ আগস্ট থেকে ধানমন্ডির দলীয় কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনয়ন বিক্রি ও জমা নেয়ার কাজ শুরু করেছে। ১৯ আগস্ট নাসিমপুত্র কাজিপুরের সাবেক এমপি তানভীর শাকিল জয় দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। আবার ২০ আগস্ট একই আসনে মোহাম্মদ নাসিমের বড় ভাই ড. মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে ব্যারিস্টার রিপন দলীয় মনোনয়ন তুলেছেন। ফলে কাজিপুরের রাজনীতি মাঠ এখন বেশ সরব। তবে শুরুর দিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাদের বেশ কয়েকজন প্রার্থিতার সুর তুললেও এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে কাউকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে নাম ঘোষণা করতে দেখা যায়নি। এ কারণে বাবার আসনে সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়ের নামই আসছে ঘুরেফিরে। কয়েকদিন ধরে যুক্ত হচ্ছে শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর পরিবারের আরেক সদস্যের নাম। চাচা প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমের এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান শেহেরিন সেলিম রিপনও। রিপন ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর নাতি ও আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতিমণ্ডলী ও উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য প্রয়াত ড. মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে। অন্যদিকে, কাজিপুরে বিএনপির অস্তিত্ব সঙ্কট এখনও কাটেনি। নির্বাচনকে সামনে রেখে দল গোছানোর কার্যক্রম শুরু হয়নি তাদের। মেয়াদোত্তীর্ণ উপজেলা কমিটি ভেঙে ২১ সদস্যের এডহক কমিটি গঠন করেছে তারা। দলটির নেই হালনাগাদ ইউনিয়ন কমিটি। বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, এমনকি দুই ঈদে নেতাকর্মীদের দেখা মেলে না। মনোনয়ন প্রত্যাশার বিষয়ে ড. মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে শেহেরিন সেলিম রিপন বলেন, আমি মনোনয়ন চাচ্ছি, কারণ কাজিপুরের মানুষ নেতৃত্বের পরিবর্তন চায়। এলাকার মানুষ চাচ্ছে আমি যেন এখানে এসে তাদের পাশে দাঁড়াই। আমার বাবাও এমপি ছিলেন। বাবার পথ ধরে আমি মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয়, তবে আমি নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করব। অন্যদিকে আমার চাচাতো ভাই জয়ও একই আসনে মনোনয়ন চাচ্ছেন। চাইতে পারেন। তবে দলের সিদ্ধান্তের প্রতি আমার আস্থা ও শ্রদ্ধা আছে, থাকবে। নাসিমপুত্র সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয় বলেন, সিরাজগঞ্জ-১ আসন শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর পুণ্যভূমি। সেখানে তিনি এমপি ছিলেন। তার সন্তান এবং আমার বাবা মোহাম্মদ নাসিম বারবার নির্বাচিত হয়েছেন। একই আসনে আমিও এমপি নির্বাচিত হয়েছি। বাবা আমৃত্যু কাজিপুর তথা সিরাজগঞ্জবাসীর পাশে থেকেছেন। করোনাভাইরাস মহামারিতেও তিনি মানুষের পাশে ছিলেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেছেন। সেই আসনে উপ-নির্বাচনে আমি একজন প্রার্থী। দল যদি যোগ্য মনে করে এবং নির্বাচিত হই, তবে দাদা ও বাবার মতোই মানুষের জন্য কাজ করে যাব। কাজিপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির উপদেষ্টা টিএম তহজিবুল এনাম তুষার বলেন, আমরা কমিটি গঠন ও দলকে চাঙা করতে কাজ শুরু করেছি। উপ-নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত হলে আমরা মাঠে নামব। ২৩ আগস্ট আমাদের এ সংক্রান্ত মিটিং রয়েছে। কাজিপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক রহমতুল্লাহ আইয়ুব বলেন, ইতোমধ্যে এই আসনে প্রার্থী হওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন কাজিপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সেলিম রেজা, যুগ্ম আহ্বায়ক টিএম তহযিবুল এনাম তুষার, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান রানা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি বিএনপি নেতা এসএম শামীর আকতার তামিম। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি আমরা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী সংগীতশিল্পী কনক চাপা সম্পর্কে যুগ্ম আহ্বায়ক তহযিবুল এনাম তুষার বলেন, তিনি (কনক চাপা) বিগত নির্বাচনের পর থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি। এমনকি তার মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ। তার সম্পর্কে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ভালো বলতে পারবেন। তবে বাংলাদেশ জাসদের ঢাকা উত্তরের সভাপতি আলমগীর হোসেন এ আসনে প্রার্থী হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আসন্ন উপ-নির্বাচন উপলক্ষে এখনও খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ হয়নি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাজিপুরে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল তিন লাখ ৪৮ হাজার ১৬৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা এক লাখ ৭৩ হাজার ২০১ জন, মহিলা ভোটার এক লাখ ৭৪ হাজার ৯৬৫ জন। পুরুষের চেয়ে মহিলা ভোটার সংখ্যা বেশি মোট ১ হাজার ৭৬৪ জন।