বরিশাল সদর
রাজস্ব হাড়াচ্ছে বিসিসি, হাড়িয়েছে যাত্রীবান্ধব পরিবেশ
নথুল্লাবাদ বাসটার্মিনালে লিটন মোল্লার রমরমা তোলাবাজি
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদে সিটি কর্পোরেশনের জায়গা দখল করে রমরমা তোলাবাজি কায়েম করেছে লিটন মোল্লা। ক্ষমতাসীন দলীয় শ্রমীক-কর্মচারী কল্যান তহবিলের সভাপতি ও বাস মালিক গ্র“প সমিতির সদস্য এবং কাশিপুর ইউপি চেয়ারম্যান লিটন মোল্লা ছোট-বড় অন্তত শতাধিক স্থাপনা নির্মান করে মাসোয়ারা হাতিয়ে নিচ্ছে বছরজুড়ে। এনিয়ে ভাড়া নেয়া দোকান মালিকরা কোন প্রকার মুখ খুলতে রাজি হয়না মোল্লা গংদের ত্রাসের ভয়ে। অনুসন্ধানসূত্রে জানা গেছে, নগরীর সেবা পরিবহণে গণধর্ষনের আসামিদের নিয়ে লিটন মোল্লা বাস টার্মিনালে গড়ে তুলেছে মোল্লা গ্যাং বাহিনী। সম্প্রতি ঢাকা ও মাওয়াগামী বাস মালিকদের কাউন্টারেও চলছে তার নেতৃত্বে চাঁদাবাজি। এনিয়ে মোল্লা গ্যাংদের সাথে এক বাস কাউন্টার ম্যানেজারের সাথে মারামারির ঘটনায় মামলা হয়। আর এই মামলায় লিটন মোল্লা এখন পলাতক রয়েছে। পুরো বাসটার্মিনাল জুড়ে বিসিসি’র বিভিন্নস্থানে জায়গা দখল করে চায়ের দোকান, ফাস্টফুটের দোকান, ফলের দোকানসহ রয়েছে অসংখ্য ভাসমান দোকান। স্টল উঠিয়ে পজেশন বাবদ এসব দোকান থেকে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। এরপর প্রত্যেক মাসেই ব্যবসায়ীদের গুনতে হচ্ছে ভাড়ার নামে মাসিক চাঁদা। এধরণের প্রায় শতাধিক দোকান থেকে প্রতিমাসে লিটন গ্যাংরা হাতিয়ে নিচ্ছে দৈনিক ও মাসিক ভিত্তিতে লক্ষ লক্ষ টাকা। শুধু তাই নয়, বাসের কোন কাউন্টার এই গ্যাংদের চাঁদা না দিয়ে বাস চলাচল করতে পারে না। প্রতি মাসে কাউন্টারগুলো থেকে প্রায় ২০/৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় হয়। লিটন মোল্লার এহেন কর্মকান্ডের পালে হাওয়া দিচ্ছে চালক বাচ্চু, বাসে ধর্ষন মামলার আসামি দেবা ও শ্রমিক সালাউদ্দিন গংরা। বাসটার্মিনাল এলাকার প্রবেশদ্বার থেকে শুরু করে চারদিক গ্রাস করে নিত্য নতুন প্রতিষ্ঠান কিংবা স্থাপনা উঠিয়ে পজেশন বিক্রিসহ সাবলিজ দেয়া হচ্ছে। অথচ ভাড়াটিয়া কিংবা ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞেস করলে বলেন, আমরা বিসিসি’কে ভাড়া দেই। কিন্তু বিসিসি তো এইরকম ভাসমান টিনের ঘর তৈরী করে দেয়না তাহলে বিসিসিকে ভাড়া কিভাবে দিচ্ছেন? এরকোন সদুত্তর না দিয়ে চুপসে যায় সবাই। দিনের পর দিন বিসিসি’র জমি অবৈধভাবে দখল হয়ে যাওয়ায় মোটা অংকের রাজস্ব হাড়াচ্ছে বিসিসি। এনিয়ে অত্র এলাকায় দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এ ব্যাপারে একাধিক ভুক্তভোগী যাত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, একসময় বাসষ্টান্ডের প্রবেশের দু’ধারে ব্যাপক খালি জায়গা ছিল, এখন সেসব জায়গা অবৈধভাবে দখল করে বিভিন্ন নিত্য নতুন দোকান বসিয়ে বাসস্টান্ডের সৌন্দর্য নষ্টতো করছেই পাশাপাশি নারী যাত্রীদের অনিরাপত্তা তৈরী হয়েছে। বাসস্ট্যান্ডটির মধ্যে টিকেট সংগ্রহ করতে যাওয়ার স্বাভাবিক কোন পরিবেশ নেই। এছাড়া ট্রাফিক আইল্যান্ড সোজাসজি সড়ক সংলগ্ন ফুটওয়ার্ক স্লাবের পাশে দোকান বসিয়ে অগ্রিম পজেশন ভাড়া ও দৈনিক চাঁদা হাতানো হচ্ছে। তবে এনিয়ে দোকানিরা সহজে মুখ খুলতে রাজি হয়না কারন লিটন গ্যাংরা ওঁতপেতে থাকে এবং পরে দোকানিদের ধরে নিয়ে গিয়ে মারধর করে। এহেন কর্মকান্ড বাসস্ট্যান্ডে হরহামেশাই ঘটতে থাকায় দোকানিদের মধ্যে একটি গুমোট পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নাম অপ্রকাশের শর্তে অনেকেই বলেন, আমরা যদি সত্য কথা বলি, তাহলে আমাদের দোকান ছেড়ে দিতে হবে। শুধু তাই নয়, মোল্লা বাহিনী জানলে মারধরও করে। আর এদের বিরুদ্ধে মামলা বা প্রতিবাদ করা বৃথা কারণ তাদের দলতো ক্ষমতায়। অপরদিকে মোল্লা গ্যাংদের এহেন কর্মকান্ডের ব্যাপারে নথুল্লাবাদ বাস মালিক গ্র“পের সাধারন সম্পাদক গোলাম মাসরেক বাবলু বলেন, কেউ যদি বাসষ্টান্ডের সামনের দু’প্রান্তে বিসিসি’র জায়গা দখল করে বিভিন্ন দোকান-পাটসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বসিয়ে ভাড়া আদায় করে তবে তা সিটি কর্পোরেশনের দেখার বিষয়। তিনি আরো বলেন, ইতিপূর্বে এখানে কেউ অবৈধভাবে বাসষ্টান্ডের জমি দখল করে বেচা-কেনা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বসিয়ে ভাড়া তুলতে পারে নাই। কিন্তু বাসস্ট্যান্ড জুড়ে যে অবৈধ স্থাপনাগুলো গড়ে উঠছে তাতে কি যাত্রীবান্ধব পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে না? আর আপনাদের কি কোন ভুমিকা রাখার সামর্থ্য নেই জানতে চাইলে এরকোন সদুত্তর মেলেনি। এসময় তিনি আরো বলেন, এখন সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ তাদের জমি যদি উদ্ধার না করে সেখানে মালিক সমিতির কোন কিছুই বলার নেই। এক কথায় বলা যায় বিসিসি ইচ্ছাকৃতভাবে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইসরাইল হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি আমাদের স্টেট অফিসারকে দিয়ে খোঁজ নিবো এবং অবৈধ দখলদাদের বিরুদ্ধে আইনগত ও জমি উদ্ধারের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন বরিশাল নতুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টারমিনাল মালিক গ্র“প সমিতি সাবেক সভাপতি ও বরিশাল মহানগর শ্রমীকলীগ সভাপতি আফতাব আহমেদকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে অদৃশ্য এক ছায়া শক্তির বলে বর্তমান অঘোষিত শ্রমীক নেতা ও কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ কামাল হোসেন লিটন মোল্লা শ্রমীক আন্দোলনের মাধ্যমে আফতাব আহমেদকে হটিয়ে ২০১৬ সালের সেবা পরিবহনের গণধর্ষনকারী কয়েকজন সদস্যকে সাথে নিয়ে বাস টারমিনাল দখল নেয়। এরপর থেকেই তিনি তার বাসষ্টান্ডের রাজত্ব পাকাপোক্ত করতে সেইসব ধর্ষনকারীদের সামনে রেখে শুরু করে দূরপাল্লার বাস কাউন্টারে প্রতিমাসে ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে বাধ্যতামুলক চাঁদা আদায়। এনিয়ে ভুক্তভুগী সূত্র জানায়, কয়েকদিন আগে বরিশাল বাস টার্মিনালের গোল্ডেন লাইন পরিবহনের দক্ষিণবঙ্গের ম্যানেজার, একাউন্টস ইনচার্জ মোঃ শহিদুল ইসলামকে মারধর করে প্রায় আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং এঘটনার চাঁদাবাজি মামলায় পলাতক রয়েছে লিটন মোল্লা। নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে এহেন কর্মকান্ডের ব্যাপারে এবিষয়ে লিটন মোল্লার মুঠো ফোনে একাধিকবার কল করা হলে তার নম্বরটি বন্ধ থাকায় তার কোন বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।