বরিশাল
নগরীর পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্র গুলোর বেহালদশা
নিজস্ব প্রতিনিধি।। বরিশালে পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্র গুলো দিন,দিন পরিনিত হচ্ছে পরিত্যক্ত ভাগারে, সংস্কার ও মেরামতের অভাবে পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্র গুলোর বেহালদশা প্লানেট ওয়াল্ড শিশু পার্কে দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ নেই কোন পশু-পাখি পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্র গুলোতে দেখা যায়না নতুন কোন গাছপালা দিন,দিন কমে যাচ্ছে পার্ক গুলোতে বিনোদন শিশু-কিশোর ও পরিবেশ প্রেমীদের সমাগম, সিটি মেয়র ও প্রশাসনের সু-দৃষ্টি চায় বিনোদন প্রেমিরা
মেহেদী তামিম।। বরিশালের নাম শুনলেই ভেনিস কথাটা চলে আসে,বাংলার ভেনিস নামেই পরিচিত বরিশাল।দুঃখের বিষয় হলো ভেনিস খ্যাত বরিশাল শহরের সাজানো,গোছানো বিনোদন পার্ক গুলো দিন,দিন সংস্কার ও অযন্ত অবহেলার কারনে পরিত্যক্ত ভাগারে পরিনিত হচ্ছে।বরিশালে পার্ক বা বিনোদন কেন্দ্র গুলোর কথা বললেই প্রথমে চলে আসে প্লানেট ওয়াল্ড শিশু পার্কের কথা,পার্কটি প্রতিষ্ঠিত করা হয় ২০০২ সালের ৩ রা জানুয়ারী।পার্কটি প্রতিষ্ঠা করার পর থেকেই বেশ ঝাঁকঝমক পুর্নভাবে চলছিল,এবং সব সময় মুখরিত ছিলো বিনোদন প্রেমি ও দর্শনার্থীদের,কিন্তু দিন,দিন সংস্কার ও অযন্ত অবহেলায় হারাতে বসেছে পার্কটির সৌন্দর্য, আগের মত নেই দর্শনার্থী, থাকবেই বা কি করে, যে পার্কটির ভিতরে ছিল,দর্শনার্থীদের আনন্দ দেয়ার জন্য হরিন,বানর,ভাল্লুক,উটপাখি,মদনটাক পাখি সহ আরও অনেক পশু, পাখি।
কিন্তু দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ পার্কটিতে নেই কোন পশু,পাখি।সুধু তাই নয় পার্কের অধিকাংশ দেয়ালের উপরে লোহার কাঁটাতারের বেড়াগুলো নেই,আবার কোন জায়গার দেয়াল ভাংগা।শিশু পার্কে ঘুরতে আশা দর্শনার্থী রহিম জানান,ছোট ছেলে শুভ কে নিয়ে একটু ঘুরতে আসলাম এসে দেখি দেখার মত তেমন কিছুই নেই, আগে কয়েকটা পশু,পাখি ছিল এখনতো তাও নেই।এবং পার্কের পরিবেশটাও তেমন ভালোনা।সর্বস্তরের মানুষের হাঁটা, চলাচল ও বিনোদনের জন্য যদি একটি পার্ক ধরা হয় সেটা হল বরিশাল বেলসপার্ক ( বঙ্গবন্ধু উদ্যান)।
যুবক,যুবতী বৃদ্ধ থেকে শুরু করে প্রায় সব বয়সের মানুষই উন্মুক্ত ভাবে দৌড় ও হাঁটা চলার জন্য আসে এই পার্কটিতে।মুলত কোন একটা শহরের পরিচয় হয় তার বিনোদন কেন্দ্র গুলোর সৌন্দর্য, উন্মুক্ত হাঁটা জায়গা খেলাধুলার মাঠ এগুলোর বিন্যাসের উপর।বঙ্গবন্ধু উদ্যানটি যে সুধু একটা উন্মুক্ত পার্ক বা সব বয়সী মানুষের যে সুধু হাঁটা চলার জায়গা সেটা না।বরিশাল শহরের যত বড়,বড় অনুষ্ঠান সম্পুন্য হয় এই বেলসপার্কে।কিন্তু সেখানে দেখা যায়,অবাধে চরে বেড়াচ্ছে ঘরু,ছাগল। মনে হয় যেন কোন অজপরা গ্রামের ধানক্ষেত।সুধু তাই নয় ঘাষগুলো বড় হওয়ার কারনে বেড়েছে মশা, মাছির উপদ্রব, এবং মাঠে জমে থাকে পানি।যার কারনে যারা হাঁটতে আসে তারা হাঁটার পরে যে একটু মাঠে বসে বিশ্রাম নিবে তার কোন সুযোগ নেই,আর এমনিতেই বর্ষাকাল।
পার্কটিতে দৈনিক বিকালে হাঁটতে আসা শামিম হাসান জানান, প্রথম দিগে পার্কটির সৌন্দর্য ভালোই ছিল কিন্তু এখন দিন,দিন পার্কটির সৌন্দর্য হারাতে বসেছে,যেমন হয়েছে ঘাষগুলো বড় তেমনি পার্কের মাঠে অবাধে বিচরন গরু,ছাগলের, এবং টোকাই ও বহিরাগতদের উৎপাত বেশি,মাঝে মধ্যেতো মারামারির মত ঘটনাও ঘটে।এবং পার্কের চারপাশে অনেক লোহার গ্রিল দিয়ে যে বেড়া দেয়া তাও ভাংঙ্গা।তাই আমরা সাধারন দর্শনার্থীরা মনে করি আমাদের মেয়র মহোদয়ের পার্কটির দিগে সু – দৃষ্টি দেয়া উচিত,এবং প্রশাষনের নজরদারী বাড়ানো উচিত।
কীর্তনখোলা নদীর পাশের একটা অন্যতম বিনোদন পার্ক বলতে আমরা মুক্তিযোদ্ধা পার্ককেই বুঝি,এই উন্মুক্ত পার্কটিতে মানুষ সারাদিন পরিশ্রম করার পরে একটু বিকেলে বা সন্ধায় আসে কীর্তনখোলার মুগ্ধ বাতাস খেতে আর নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে,দুঃখের বিষয় হলো সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বিনোদন প্রেমীর চেয়ে ছাগল আর গরুর বিচরনটাই বেশী,মনে হয় যেন ছাগল,গরু,আর হাঁসের জন্যই পার্কটি তৈরি করা হয়েছে,এবং সুধু তাই নয় পার্কের অধিকাংশ বেড়াই ভাংঙ্গাচুরা।পার্কটিতে ঘুরতে আসা কলেজ ছাত্র সুমন জানান,একটু মনটা ভালো করার জন্য এই নদীর পাড়ে আসি,কিন্তু এখন যে এখানের পরিবেশ এতে পার্কের সৌন্দর্যতো দুরের কথা এগানে এখন ছাগল আর গরুর বিচরন,প্রসাবের গন্ধে একটু বসা যায়না,কিছু খাবার খাওয়া যায়না।
স্হানীয় বাসিন্দা রহিম জানান, এখানে স্কুল, কলেজে পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের বিচরন বেশী,স্কুল কলেজ ফাঁকি দিয়ে এখানে আড্ডা মারতে আসে এবং টিকটক করে।তাই আমরা মনে করি প্রশাষনের নজরদারী বাড়ানো উচিত।সিটির ভিতরে আরকটি বিনোদন মুলক পার্ক হলো শহীদ,শুক্কুর গফুর পার্ক,সেই পার্কটির অবস্সাও অন্যান্য পার্কের মতই পার্কটিতে ঢুকতেই মুল ফটকের গেটই ভাঙ্গা,সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বাঁশ দিয়ে বেধে দেয়া হয়েছে গেট,আর দেয়ালও রয়েছে কিছু জায়গার ভাঙ্গা। স্হানীয় বাসিন্দা সালাম জানান, এই পার্কটি আমাদের এখানের গর্ব, তাই মেয়র মহোদয়ের কাছে দাবি এই পার্কটি যেন সে সংস্কার করে।প্লানেট ওয়াল্ড শিশু পার্কের দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার সোরাব হোসেন জানান,পার্কটিতে দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ কোন পশু,পাখি নেই এটা সত্য, কারন হলো পশু,পাখির জন্য অনেক জায়গার দরকার এবং দেখবাল করার জন্য আলাদা মানুষের দরকার।
আবার অনেক সময় পশু,পাখি গুলো মারা যায় তাই এখানে এখন কোন পশু,পাখি রাখা হয়না,আর পার্কটিতে সংস্কারের চিন্তা, ভাবনা আমাদেরও আছে।বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি), আজিমুল করিম জানান,সব পার্ক গুলোতেই আমাদের প্রশাষনের নজরদারী রয়েছে,এবং নজরদারী অব্যাহত থাকবে।
এই বিষয়ে বরিশাল সিটিকর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকতা, সৈয়দ ফারুক আহম্মেদ জানান,বরিশাল সিটির ভিতরে যত পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্র গুলো রয়েছে সব পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্র গুলো সংস্কারের জন্য সিটিকর্পোরেশন থেকে এই বছর বাজেট ঘোষনা করা হয়েছে,এবং পার্কের ভিতরে নতুন গাছপালা লাগানেরও পরিকল্পনা রয়েছে,তাই আমরা অচিরেই পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোর সংস্কারের কাজ শুরু করবো।