বরিশাল
নগরীতে সক্রিয় হলুদ অটো’র অবৈধ টোকেন সিন্ডিকেট, মুল হোতা নিজাম
নিজস্ব প্রতিবেদক ।। মরনঘাতী করোনা ভাইরাস দুর্যোগকালীন সময়ও নগরীতে চলছে হলুদ অটো মালিক সমিতি সিন্ডিকেটের অবৈধ টোকেন বানিজ্য। আর এই সিন্ডিকেটের অবৈধ টোকেন বানিজ্যে এখন দিশেহারা সাধারণ অটোচালকরা। কোন ক্রমেই যেন এই রক্তচোষা সিন্ডিকেট এর ভয়ঙ্কর থাবা থেকে মুক্তি মিলছেনা সাধারন অটো চালকদের। অভিযোগ রয়েছে, এই অবৈধ টোকেন সিন্ডিকেট বানিজ্যের সদস্যরা কিছু অসাধু ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে আঁতাত করে সাধারন অটোচালকদের ফাঁদে ফেলে টোকেন নিতে বাধ্য করছে। আর মাস শেষে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
তবে ট্রাফিক বিভাগের এক কর্মকর্তা (টি.আই) এ অভিযোগকে অস্বীকার করে জানান, ট্রাফিক বিভাগ সবসময় সর্বপ্রকার চাঁদা তোলার বিরুদ্ধে রয়েছে। উপযুক্ত প্রমানসহ কারো বিরুদ্ধে কোনপ্রকার চাঁদা তোলার অভিযোগ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি। জানাগেছে, হলুদ অটো মালিক ও অবৈধ টোকেন সিন্ডিকেট বানিজ্যের সভাপতি দাবিদার নিজামুল হক ওরফে মিজান এই সিন্ডিকেট বানিজ্যের মূলহোতা। মূলত এই মিজানের নেতৃত্বেই সুধী মিলন, রিপন, দুলাল, সোহরাব, জসিম, রনি, নিলয়, হানিফ, হারুন, মোসারেফ, নুরেআলমসহ অবৈধ টোকেন মালিক সমিতি একটি সিন্ডিকেট তৈরী করে মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
আর ভুক্তভোগী সাধারন অটোচালকরা একপ্রকার অসহায়ত্ব বরন করেন। অবৈধ টোকেন বানিজ্যের বিষয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের যানবাহন লাইসেন্স শাখার সুপারিনটেনডেন্ট কবির হোসেন বলেন, যেহেতু দীর্ঘদিন পূর্বেই সিটি কর্পোরেশন হলুদ অটোর টোকেনের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে সেহেতু সেই টোকেন ভাড়া দিয়ে টাকা নেয়া সম্পূর্ন অবৈধ। আর বর্তমানেও সিটি কর্পোরেশনে হলুদ অটোর টোকোনের কোন কার্যক্রম চলমান নেই। তাই এটা অবৈধ। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে।
সূত্রে জানাগেছে, এই অবৈধ টোকেন সিন্ডিকেট বানিজ্যের মূলহোতা নিজামুল হক ওরফে মিজান এবং মোর্শেদসহ কতিপয় ব্যক্তি বিগত ২০১৯ সালে হলুদ অটো মালিক সমিতির ব্যানারে অবৈধভাবে স্টিকার বানিজ্য শুরু করেন। তখন বরিশালের বিভিন্ন পত্রিকায় এ ব্যাপারে সংবাদ প্রকাশ হলে কাউনিয়া থানা পুলিশ ২০১৯ সালের ৯ মার্চ স্টিকার দিয়ে অবৈধভাবে চাঁদাবাজির অভিযোগে মিজানকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে মিজান জেল থেকে বের হয়ে এই অবৈধ কার্যক্রম থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। কিন্তু হঠাৎ করে কিছুদিন পূর্বে মিজান পুনরায় অবৈধ টোকেন মালিক সমিতির ব্যানারে সিন্ডিকেট তৈরী করেন এবং সাধারন অটোচালকদের নিকট মূর্তমান আতঙ্কে পরিণত হন।
হিসাব মতে, বরিশাল নগরীতে বর্তমানে ১৮’শ অবৈধ টোকেন রয়েছে। যার এক একটি টোকেন মাসিক ২৫শ থেকে ৩ হাজার টাকায় ভাড়া হয়। এতে প্রতিমাসে অবৈধভাবে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা এবং বছরে প্রায় ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এই মিজান বাহিনী। অটোচালক সোহেল, রানা, সজল ও মোস্তফা জানান, আমরা প্রতি টোকেন ২৫শ থেকে ৩ হাজার টাকায় ভাড়া নেই। আমাদের টোকেন মালিকরা জানান টোকেন থাকলে ট্রাফিক পুলিশ ধরবেনা, গাড়ি আটক করবেনা। তাই আমরা এই করোনাকালীন সময়ও শত কষ্ট হলেও টোকেন ভাড়া নেই। অবৈধ টোকেন বানিজ্যের মূলহোতা নিজামুল হক ওরফে মিজান টোকেন ভাড়া দেয়ার সত্যতা স্বীকার করে জানান, আমরা অনেক টাকার বিনিময় টোকেন কিনেছিলাম তাই ভাড়া দেই।
তবে কিছু টাকা কম নেই। এখন টোকেন বানিজ্য অবৈধ কিন্তু কেন টোকেন ভাড়া দেন একথা জিজ্ঞাসা করিলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। এছাড়াও অবৈধ টোকেন মালিক সুধী মিলন, দুলাল, রিপন, সোহরাব, নিলয়সহ সকলেই টোকেন ভাড়া দেয়ার কথা স্বীকার করেন। এ বিষয়ে উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) জাকির হোসেন মজুমদার বলেন, নগরীর পরিবহনখাতের সবরকমের চাঁদা আদায় নিষেধ করা হয়েছে। নগরীতে চলাচলরত হলুদ অটোর অবৈধ টোকেন ভাড়া না নেয়ার জন্য সকলকে সচেতন করা হচ্ছে এবং এ বিষয়ে ট্রাফিক বিভাগ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। যদি কোন ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন অবশ্যই দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।