বরিশাল সদর
নগরীতে রোগীর দালাল শামিমের ত্রাস
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল নগরীতে দিন দিন দালালদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলছে। দালাল সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও এই সিন্ডিকেটের কাছে অনেকটা অসহায়। মাঝে মধ্যে দালাল চক্রের সদস্যদের আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে তুলে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর কিছুদিন দালালরা হাসপাতাল ছেড়ে গেলেও কিছুদিনের মধ্যে তারা আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই দালাল চক্রের নেপথ্যে রয়েছে নগরীর বিভিন্ন ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ব্লাড সেন্টার ও ফার্মেসি মালিকরা। সম্প্রীতি নগরীতে রোগীর দালাল শামিমের সিন্ডিকেটে অসহায় হয়ে পড়েছে রোগী ও তাদের স্বজনরা। নগরীর জর্ডান রোড এলাকায় আল ইসলামিয়া মেডিকেল সার্ভিসেস সাইনবোর্ডর আড়ালে আতিকুর রহমান শামিম ওরফে প্যাথ শামিম রোগী ধরার টর্চার শেল খুলে বসেছে। নগরজুড়ে এই প্যাথ শামিম রোগীর দালালের ভয়ংকর সিন্ডিকেট তৈরী করছে তার মাদকের চাহিদা পুরণের জন্য। এনিয়ে একাধিক ভুক্তভুগী সুত্র জানায়, দখিন জনপদের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা রোগী ও স্বজনদের ফুসলিয়ে বাগে নিয়ে জর্ডন রোডস্থ সাইনবোর্ড সর্বস্ব এই ডায়গনস্টিক সেন্টারটিতে নিয়ে যায়। এরপর ভুয়া রিপোর্ট ও ভুয়া প্রেসক্রিপশন দিয়ে রোগী প্রতি অত্যন্ত ৩/৫হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। আর খপ্পরে যদি কেউ ধরা না দিতে চায় তাহলে ঔ ডায়গনস্টিক সেন্টারটিতে আটকিয়ে রেখে মারধর করা হয়। প্যাথ শামিমের এহেন কর্মকান্ডের অন্যতম কারণ হলো দৈনন্দিন মাদকের খায়েস পুরণ করা। আর একারণেই নগরীতে শামিমের তিন স্তরের দালালি নেটওয়ার্ক রয়েছে। এরমধ্যে শেবাচিম ও সদর হাসপাতালের সামনে রোগী ও স্বজন কিংবা ঔষধ বিক্রয় প্রতিনিধি বেশে ওৎপেতে থাকা, রুপাতলী, নথুল্লাবাদ, লঞ্চঘাট, স্পিডবোট ঘাটসহ যাত্রীবহুল স্পটগুলোতে একইভাবে ওৎপেতে থাকাসহ মোবাইলেও রোগীদের মাধ্যমে রোগী বাগিয়ে নেয় কমিশনের লোভ দেখিয়ে। ২৩নং ওয়ার্ডের দরগাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা প্যাথ শামিমের ব্যাপারে একাধিক ভুক্তভুগী সূত্র জানায়, মেডিকেল এলাকায় রোগীর দালালীতো করেই এরপর এলাকায়ও সে চিহ্নিত মাদকসেবী ও সরবরাহকারী। শুধু তাই নয়, ২০১৮সালে একটি হত্যা মামলারও আসামি শামিম। এদিকে শাহিন নামে এক ভুক্তভোগী জানায়, আমাকে খুন করার জন্য গত মাসের ৩০ তারিখ বটতলা বাজার সংলগ্ন এলাকায় বগী ও রামদাসহ মটরসাইকেলযোগে মহড়া দেয়। কারন উল্লেখ করে শাহিন বলেন, আমার এক রোগীকেও ফাঁদে ফেলে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয় এবং এনিয়ে প্রতিবাদ করলে সে আমাকে খুন জখম করার জন্য খুঁজে বেড়াচ্ছে। এককথায় সে এখন নব্য ত্রাস নগরীতে। কিন্তু আপনি পুলিশের কাছে কেনো যাচ্ছেন না জানতে চাইলে ভুক্তভুগী শাহিন বলেন, কেমনে যাবো ওরাতো এলকায় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মটরসাইকেলযোগ মহড়া দেয় এবং আমাকে অনুসরণও করে। সূত্রে আরো জানা গেছে, পুলিশের তালিকায় সে প্যাথ শামিম, ও গুটি শামিম হিসেবেও চিহ্নিত। কারণ সম্প্রতি এই শামিম ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পরেছে। অপরদিকে, কোতয়ালী থানায় প্যাথ শামিমের বিরুদ্ধে গতকাল এক প্রবাসী একটি সাধারণ ডায়েরী করেছে। যার জিডি নং- ৩২৪, তারিখ ৮/৮/২০ইং। উক্ত জিডি সূত্রে জানা গেছে, জর্ডন রোড এলাকায় এক বাড়ির মালিক থেকে জোড়পূর্বক ভাড়া নিতে চায়। একপর্যায়ে ঐ বাড়িওয়ালা ডায়গনস্টিকের জন্য বাড়ি ভাড়া দিতে রাজি না হওয়ায় প্যাথ শামিম হুমকি-ধমকিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাড়ির সামনে মটরসাইকেলযোগে মহড়া দিতে থাকে। একপর্যায়ে এনিয়ে বাকবিতন্ডা হয় বাড়িওয়ালার সাথে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়ায় শামিমের বিরুদ্ধে জিডি করেন ওই প্রবাসী। এনিয়ে কোতয়ালী থানার এসআই ফিরোজ আল মামুন বলেন, আমি ওকে চিনতে পেরেছি এবং আগে থেকেই ও রেকর্ড খারাপ এবং অবশ্যই ওকে আমি আওতায় আনবো। উল্লেখ্য, জর্ডন রোড এলাকায় সম্প্রতি ভ্রাম্যমান আদালত একটি ডায়গণস্টিক সেন্টারকে সিলগালা করে বন্ধ করে দেয়। এনিয়ে এলাকায় বেশ চাঞ্চল্য তৈরী হলে বাসিন্দারা আতংক রয়েছে প্যাথ শামিমের সাইনবোর্ড সর্বস্ব আল ইসলামিয়া মেডিকেল সার্ভিসেস সেন্টারেও অনৈতিক কর্মকান্ডের কারণে বন্ধ করে দেয়ার আবেদন করেন যথাযথ কতৃপক্ষের কাছে।