বরিশাল সদর
নগরীতে ডিজিটাল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার স্বপ্নবাজ ট্রাফিক ডিসি জাকির
মোস্তাফিজুল আলম (সজিব) ॥ নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে পুরোমাত্রায় বাস্তবায়নকল্পে ডিজিটালাইজেশন ও রাজস্ব আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। আর এ কাজটি বেগবান করতে সচেষ্ট রয়েছেন ট্রাফিক ডিসি মোঃ জাকির হোসেন মজুমদার।
গত বছর মহামারী করোনার মাঝেও ৯ হাজার ২১৮টি মামলা হয়েছে। এতে জরিমানা করা হয়েছে প্রায় নয় কোটি টাকা। এর মধ্যে ৮ হাজার ৪৬১ টি মামলা নিষ্পত্তি হয়ে দুই কোটি ৪১ লাখ ৫ হাজার ৯০০ টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। আর চলতি বছরের এই তিন মাসে ইতিমধ্যে রাজস্ব আদায় করেছে অর্ধ কোটি টাকারও বেশি। শুধু তাই নয়, নতুন সড়ক আইনও বাস্তাবায়ন করা শুরু করেছে বিএমপি’র ট্রাফিক পুলিশ।
এ ব্যাপারে উপ-পুলিশ কমিশনার ট্রাফিক মোঃ জাকির হোসেন মজুমদার বলেন, ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর থেকে সড়ক পরিবহন আইন বলবৎ করা হলেও নতুন আইনে সাজার পরিমাণ বেশি হওয়ায় জনগণকে নতুন আইন সম্পর্কে সচেতন করার লক্ষ্যে প্রথম ৫/৬ মাস জনসচেতনতামূলক প্রচার প্রচারণা চালানো হয়েছে। এ সময়ে অল্প পরিসরে মামলা দেয়া হয়েছে। পরে মহামারী করোনার কারণে নানা রকম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করায় মামলার পরিমাণ কম হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রতিনিয়তই আমরা পরিবহনের চালক ও হেলপারদের নিয়ে সভা করে যাচ্ছি এবং গতকালও নথুল্লাবাদস্থ মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে সচেতনতামূলক সভা করেছি। তাছাড়া যানবাহনের চালক ও হেলপারদের ট্রাফিক আইনের আওতায় নিয়ন্ত্রিত রাখতে ট্রাফিক পুলিশ মামলাও অব্যাহত রেখেছে।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে পুরোপুরি ডিজিটালাইজড করার কার্যক্রম ইতিমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকার জেলখানার মোড়, হাতেম আলী চৌমাথা, নথুল্লাবাদ, আমতলার মোড়, রূপাতলী, কাশিপুর, কাকলির মোড়সহ প্রায় চল্লিশটি স্পটে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। আর পর্যায়ক্রমে পুরো বিএমপি এলাকাকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে বিষয়টি সময় সাপেক্ষ। কারণ এ প্রক্রিয়াটির সাথে কন্ট্রোল রুমের অবকাঠামো তৈরী ও পর্যাপ্ত টেকনিক্যাল জনবল অত্যাবশ্যক থাকায় কাজটি পুরোমাত্রায় শেষ করতে সময় লাগছে।
এসময় তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন ট্রাফিক স্পটে আমাদের জনবল ঠিকমতো ডিউটি করছে কিনা তা পুরোপুরি মনিটরিং করা যাচ্ছে। কারণ আমি আমার নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসেই শহরের বিভিন্ন স্পটের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার হালহকিকত দেখতে পাই। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট যেকোন কাজের জবাবদিহিতার ব্যাপারটা স্পষ্ট থাকে। আর এতে শুধু আমাদের জনবলদের সর্তক কিংবা মনিটরিং করার পাশাপাশি জনসাধারণের ট্রাফিক আইন মানার হালচালও পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে সরাসরি। সেক্ষেত্রে জনসাধারণ ও ট্রাফিক পুলিশ উভয়ের মধ্যেই একটি বাধ্যতামূলক স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে।
এছাড়া ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজড হওয়ার পর থেকেই ট্রাফিক মামলার জরিমানাও আমরা পজ মেশিনে (অনলাইন পেমেন্ট) আদায় করতে পারছি। অপরদিকে গাড়ির মালিকরা স্পটে থেকেই নিজ নিজ মামলার জরিমানা পরিশোধ করতে পারছে। তিনি আরো বলেন, নগরীর কতিপয় জনবহুল স্পটের যানজট দূর করার জন্যও আমরা কয়েকটি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এর মধ্যে রয়েছে হাতেম আলী চৌমাথা ও কাশিপুর সুরভি পাম্পের সামনে থেকে আমতলার মোড় পর্যন্ত আমরা ফোরলেনের অব্যবহৃত লেন চালু করেছি যাতে মেইন সড়কে থ্রিহুইলার চলাচল করতে না পারে। এর আগে ঢাকামুখী দূরপাল্লার গাড়িগুলোর সাথে থ্রিহুইলারে প্রায়ই সংঘর্ষ হতো এবং প্রাণহানীও ঘটতো।
একইসাথে জিলা স্কুলের সামনে থেকে জেলখানার মোড় ফুটপাত দখলমুক্ত রেখে যান চলাচল স্বাভাবিককরণসহ অন্যান্য স্পটগুলোতেও একমুখী চলাচলের জন্য বিকল্প লেন চালু করে দিয়েছি। যে কারণে নগরীতে এখন তেমন যানজট দেখা যায় না। আর যতটুকু দেখা যায় তাও থাকতো না যদি উচ্চতর ভবনগুলোর নিজ নিজ পার্কিং ব্যবস্থা থাকতো।
এছাড়াও আমরা ট্রাফিক পুলিশের উদ্যোগে জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা অব্যাহত রেখেছি। আমাদের চেকপোস্টগুলোতে প্রতিনিয়ত ট্রাফিক আইন মানার জন্য মোটিভেশনাল বিহেভ করা হয় যেমন যত্রতত্র পার্কিং না করা, হুটহাট গাড়ি থামিয়ে না দেয়াসহ অন্যান্য। এছাড়াও রয়েছে ব্যানার ও লিফলেট বিতরণ এবং রোডশো করাসহ মাস্ক পরিধানের নির্দেশনা সম্বলিত স্টিকার যানবাহনে লাগানো। চলতি বছরের তিন মাসে ইতিমধ্যে ৬৬ লাখ ৩৩ হাজার ৫শত টাকা জরিমানার মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করা হয়েছে।