সরকারের টাকা আত্মসাতের মাধ্যেমে সাব-রেজিস্ট্রারসহ অনেকে যেমন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন তেমনি নকল নবীশরা চাকুরী হারাতে বসেছেন। সরকারের ওই টাকা উদ্ধারে এখনও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি দুদক। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে দুর্নীতিবাজদের বাচাতে তদবিরের প্রক্রিয়া। দফায় দফায় চলছে নকল নবীশদের নিয়ে জেলা রেজিস্ট্রারের গোপন মিটিং। এমনও শোনা যায়, অফিসের দুর্নীতির বিষয়ে বাহিরের লোকে যেনো না জানে, এমনকি সাংবাদিকদের সাথে কেউ কথা না বলে তা নিয়ে সক্রিয় একটি মহল। তবে বরিশাল সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের অনিয়মের ব্যাপারে শুরু হয়েছে সাংবাদিকদের অনুসন্ধান।
নকল নবীশদের নামে ভুয়া বিলের প্রতিবাদ জানিয়েছেন ভুক্তভোগী নকলনবীশরা।তারা বলেন, আমাদের নামে ভুয়া বিল করে বছরে হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে অফিসের কিছু চিহ্নিত দুর্নীতিবাজরা। তারা বলেন, আমাদের নামে ভুয়া বিল হয় আমরা জানিনা। বরিশাল জেলা নকলনবীশ এসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুল ইসলাম ও সম্পাদক মাহবুব হোসেন বলেন, পেশকার শাহিন ভুয়া বিলের কাগজ তৈরি করে সকল নকলনবীশদের সাইন নেন আর এই কাগজ কম্পোজ করেন নকলনবীশ আসাদ ওরফে সোহেল। পেশকার শাহিন বলেন অফিস তাকে দায়িত্ব দিয়েছে নকলনবীশদের সাইন নিতে। আর এই সুযোগে নকলনবীশদের সাইন নিয়ে ইচ্ছামতো ভূয়া বিল বানিয়ে শাহিন ও আসাদ গং রা সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাট করেই চলেছেন। আশ্চর্য হলেও সত্যি পেশকার শাহিন প্রায় একযুগ যাবৎ নকলনবীশদের বিলে সাইন করানোর দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
অফিস সূত্রে জানা যায়, যে সকল নকলনবীশদের নামে ভুয়া বিল করা হয়েছে তাদের মধ্যে মনিকা রানী দাসের নামে ৯ শত টাকার বিলের পরির্বতে ৭ হাজার ৯শত টাকা বিল করা হয়েছে। একইভাবে জেমির নামে ১৯ শত টাকার পরির্বতে ১৯ হাজার টাকা, রোকছনার নামে ১২ শত টাকার পরির্বতে ১২ হাজার টাকা, রোকেয়ার নামে ৬ শত টাকার পরির্বতে ১৬ হাজার টাকা, মার্চ মাসে অফিস না করেও লিজা আক্তার মনির নামে ১২ হাজার টাকা, আছিয়ার নামে ২৬শত টাকার পরির্বতে ৪ হাজার ৮শত টাকার ভুয়া বিল দেখিয়ে উত্তোলিত কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এছাড়াও অনুপস্থিত কিছু নকলনবীশদের বেতন তাদের নাম দেখিয়ে আত্মসাত করা হয়েছে। এদের মধ্যে তাছলিমা আক্তারের ২৬৭৬৪ টাকা, রাসেল হাওলাদারের ২০২৫৬ টাকা, সালমা খানমের ২২৩৪৪ টাকা, লাভলী আক্তারের ২৩৭৬৭ টাকা এবং মোঃ গফফারের ৭১৫২ টাকা।
অনিয়মে অভিযুক্ত নকল নবীশ আসাদ হোসেন (সোহেল) পলাতক। তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পেশকার শাহিনের বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি নিয়মিত অফিস করছে। শাহিন বলেন, আমার কোনো বিল কাগজে স্বাক্ষর নেই। কোন প্রকার অভিযোগ মানতে নারাজ পেশকার শাহিন। নকলনবীশ থেকে শুরু করে দলিল লেখক পর্যন্ত শাহিনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। নিজেকে বাচাতে শাহিন নানান কৌশল অবলম্বন করেন। তবে সবাই শাহিনসহ দুর্নীতির সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবী জানিয়েছেন। অনিয়মের বিষয়ে জেলা রেজিস্ট্রার পথিক কুমার সাহা বলেন, আমরা দ্রুত তদন্ত কমিটি করে দুর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরোও বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ার সাথে সাথে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।