বরিশাল সদর
সাজাপ্রাপ্ত আসামী ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি
দুর্নীতির দায়ে বেতন বন্ধ প্রধান শিক্ষকের
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক ও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষক নিজামুল কাদিরের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ আত্মসাৎ ও কর্মচারী নিয়োগে অনিয়োমের অভিযোগ রয়েছে। এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। অপরদিকে মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামী হয়েও বহাল তবিয়াতে রয়েছেন ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এম. এ. রহমান। টাকা ধার নিয়ে পরিশোধ না করার অভিযোগ এনে চেক জালিয়াতির মামলায় তাকে সাজা প্রদান করে আদালত। শিক্ষা বোর্ড বলছে কোন সদস্য যদি কোন মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামী হয় তাহলে সে তার সদস্য পদ হারাবে। বর্তমানে পতালক রয়েছেন এম. এ. রহমান। তবে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি হলেও তাকে গ্রেপ্তার করছে না বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশ। হরহামেসাই পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে সে ঘুরে বেড়াচ্ছে। জানা গেছে, বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে স্কুল প্রতিষ্ঠাতা কুমুদ বন্ধু রায় চৌধুরির পরিবারের পক্ষ থেকে স্কুল প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১১ জুন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে প্রধানশিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করে প্রমাণ পায়। যার স্মারক নং ৩৭.০২.০০০০.১০৭.৯৯.৪৪৩.১৯/৭৮৯ কারণ দর্শনের জন্য বলা হয়েছে। সহকারি পরিচালক মাধ্যমিক উইং কাওছার হোসেন স্বাক্ষরিত ওই নোটিসে বলা হয়, বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক নিজামুল কাদিরের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন উৎস্য হতে প্রাপ্ত আয়সমূহ ব্যয়ের ক্ষেত্রে বিধি অনুসরণ না করা, চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী মো: শাহ আলম শরীফ এর পরিবর্তে শাজাহান শরীফকে চাকুরিতে রাখা এবং বিদ্যালয়ের আয় ব্যয়ের হিসাব সঠিকভাবে না করার অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। নোটিশে আরো উল্লেখ করা হয় তার বেতন ভাতা কেন স্থগিত করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। একি সাথে স্থায়ীভাবে তার বেতন ভাতা কেন বন্ধ করা হবেনা তারও কারণ জানতে চাওয়া হয়। অপরদিকে, বাকেরগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিন কমিটির সভাপতি এম. এ. রহমান এর বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবর বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে চেক জালিয়াতির অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন বরিশালের ভাটিখানা এলাকার শেখ মো: আল আমিন শেখ। যার মামলা নং সি আর ১৫৩/ ১৭ কাউনিয়া থানা। মামলা সূত্রে জানাযায়, ভাটিখানা এলাকার শেখ মো: আল আমিন শেখ এর সাথে শ্যামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এম. এ. রহমান ব্যবসায়ীক সম্পর্কে তাকে ৫ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা ধার হিসেবে দেয়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই বাদীর বাসায় গিয়ে ব্যাংক আল ফালাহ এর ৫ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা একটি চেক প্রদান করে। যার চেক নং ৪১১২০০৫ । চেক প্রদানের ৭ দিন পর টাকা দিয়ে চেক ফেরত নেয়ার কথাও জানান তিনি। সাত দিন পরেও টাকা পরিশোধ না করায় ব্রাক ব্যাংক বরিশাল এ একাউন্টের বিপরীতে অনলাইনে ক্যাশ করার জন্য জমা দেয় বাদী। চেকটি অনলাইনে ডিজঅনার হয়। বাদীর আইনজীবীর মাধ্যমে এম. এ রহমানকে লিগ্যাল নোটিশও প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে টাকা না পেয়ে বাদী একটি চেক প্রতারণা মামলা দায়ের করে। উক্ত মামলায় বিচার কার্য শেষে চলতি বছরের ১০ মার্চ বরিশাল যুগ্ম দায়রা জজ ২য় আদালত আসামী এম. এ. রহমান পিতা : মৃত: আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার, রঙ্গশ্রী ইউনিয়ন থানা বাকেরগঞ্জকে ১৩৮ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও চেকটিতে উল্লেখিত টাকার সমপরিমাণ ৫ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত করা হয়। একই সাথে আসামী এম. এ. রহমান এর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরেনায়ানা জারির নির্দেশ দেয় আদালত। মামলার রায় ঘোষনার আগ থেকেই আসামী এম. এ. রহমান পাতালক রয়েছে। এ বিষয়ে মামলার বাদী আল আমিনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আদালতের মাধ্যমে মামলার রায় ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পরও আসামী গ্রেপ্তার না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। একই সাথে আসামীকে গ্রেপ্তারের দাবিও জানান । এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিকক্ষের সাথে তার মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। পরে যোগাযোগ করা হলে শ্যামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দূর্নীতির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক নিজামুল কাদির এর বিরুদ্ধে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে কারন দর্শানোর বিষয়টি স্বীকার করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোশারেফ। তিনি বলেন নিজামুল কাদির নোটিশ পেয়েছেন এবং নোটিশের জবাবও পাঠিয়েছেন। তবে গত জুলাই মাসে এমপিও’র তালিকায় প্রধান শিক্ষকের নাম নেই। তার বেতন ভাতাও বন্ধ রয়েছে। একই সাথে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিন কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেননা বলে দাবি করেন। বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের স্কুল পরিদর্শক প্রফেসর মো: আব্বাস উদ্দিন জানান, ২০০৯ সালের শিক্ষা মন্ত্রাণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী ম্যানেজিং কমিটির কোন সদস্য যদি কোন মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামী হয় তাহলে সে তার সদস্য পদ হারাবে। এম. এ রহমানের বিষয়ে তিনি জানান, তার বিরুদ্ধে কোন মামলায় সাজা হয়ে থাকে আর সেই প্রমাণাদি বোর্ড কতৃপক্ষকে হস্তান্তর করা হলে বোর্ড শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। শ্যামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ও সাজার বিষয়ে বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আবুল কালাম জানান, তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।