বরিশাল সদর
বরিশাল নগরীর আছমত আলী খান (একে) ইনস্টিটিউশন
তুখোড় দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষক জসিমকে সাময়িক বরখাস্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল নগরীর আছমত আলী খান (একে) স্কুলের প্রধান শিক্ষক এইচ. এম জসিউদ্দিনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎসহ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি। একই সাথে তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাময়িক বরখাস্তের পর বিষয়টি গোপন থাকলেও গতকাল শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি প্রকাশ পায়। গত ১৫ ডিসেম্বর ম্যানেজিং কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। গতকাল শনিবার গণমাধ্যমে স্কুলটির অফিস সহকারি মো: জামাল হোসেন সন্নামত স্বাক্ষরিত এক খবর বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
অভিযোগের বিবরণ ও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি বছরের আগষ্ট মাসে আছমত আলী খান (একে) স্কুলে নতুন ম্যানেজিং কমিটি গঠিত হয়। এরপর থেকেই বেরিয়ে আসতে থাকে প্রধান শিক্ষক এইচ. এম জসিউদ্দিনের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি। গত ২ সেপ্টেম্বর স্কুলে বিভিন্ন অনিয়ম, বিধি-বহির্ভূত ব্যয় এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের ব্যাখ্যা চেয়ে একটি পত্র প্রদান করে নব-গঠিত ম্যানেজিং কমিটি। তবে প্রধান শিক্ষকের দেয়া জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আন্তঃঅডিটের সিদ্ধান্ত হয় ম্যানেজিং কমিটির সভায়। পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সাবেক সভাপতির স্বাক্ষর জালিয়াতি, ব্যাংকে গচ্ছিত শিক্ষকদের গ্র্যাচুইটি থেকে অর্থ উত্তোলন, করোনাকালীন প্রাপ্ত প্রণোদনা গ্রহণসহ ৬ টি আপত্তি উত্থাপিত হয় এই আন্তঃঅডিটে। আর এসকল ক্ষেত্রে বিধিমোতাবেক তদন্ত টিম গঠনের সিদ্ধান্ত নেন ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা।
৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির তদন্তে সাবেক সভাপতির স্বাক্ষর জালিয়াতি, বিধিবহির্ভূতভাবে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন, ভাড়াটিয়ার ২ মাসের ভাড়া মওকুফ দেখিয়ে ১ মাসের ভাড়া আত্মাসাত, বিধি বহির্ভূতভাবে বেস্ট ইলেকট্রনিক্স এর নামে দুই মাসের ভাড়া মওকুফের প্রত্যয়ন প্রদান, ২০২০ সালের ফেব্র“য়ারি-মার্চ মাসে অকৃতকার্য ছাত্রদের কাছ থেকে ৭২ হাজার ৫০০ টাকা সংগ্রহ ও আত্মসাত, প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন ৩নং স্টলের নাম বিধিবহির্ভূতভাবে পরিবর্তন ও লক্ষাধিক টাকা আত্মসাত এবং ১,৭৭,৮৮০ টাকা অতিরিক্ত ভাতা গ্রহণ, তদন্ত চলাকালে অবৈধভাবে বিদ্যালয়ের বিদ্যুতের তার বাসভবনে সংযোগ দিয়ে বিদ্যালয়ের আর্থিক ক্ষতিসাধন, ঈদগাহ মাঠে জমির অবৈধ ভাড়াটিয়া থাকাকালীন অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে দুই ব্যক্তির কাছে শুধুমাত্র আবেদিত কাগজে স্বাক্ষর করে ৪৮ হাজার টাকা আত্মসাতের বিষয়গুলো প্রমাণিত হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব অনিয়মের কারণে প্রধান শিক্ষক এইচ এম জসিমউদ্দিন’র বিরুদ্ধে অনাস্থাও দিয়েছেন বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক-কর্মচারীরা। একই সাথে প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে নবগঠিত ম্যানেজিং কমিটি।
তবে এ ব্যাপারে স্কুলটির প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিন বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে প্রতিটির বিপরীতে স্কুল কমিটির কাছে যথাযথ ডকুমেন্টস প্রদান করেছি। বরখাস্তের বিষয়টি দাপ্তরিক নিয়ম মেনে করা হয়নি। কারন নব-গঠিত এই কমিটি কোনভাবেই আমাকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ বাস্তবায়ন করতে পারে না। তারা স্কুলের বিভিন্ন বিষয়ে পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাতে পারবে কিন্তু কোনভাবেই তা বাস্তবায়ন করার ক্ষমতা কমিটির নেই। এছাড়াও আমার বিরুদ্ধে যে বিষয়গুলো বলা হয়েছে তা গঠনতন্ত্রও বিরোধী এবং আমার কাছে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি’র গঠনতন্ত্রের কপি আছে। আমি দেখেছি, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো ধোপে টিকবেনা এবং আমাকে যে বহিস্কার করা হয়েছে তা গঠনতন্ত্র পরিপন্থী।
অপরদিকে এ ব্যাপারে একে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হাসান মাহমুদ বাবু জানান, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন পূর্বেই অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে এসএমসি’র পরিপত্র মেনেই তাকে নোটিশ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে উল্লেখিত অভিযোগগুলোর ব্যাপারে জবাব চাওয়া হয়েছে। এরপর লিখিত কোন সদুত্তর না পেয়ে ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষকেরা সভা করে বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষকদের চাকুরির শর্ত বিধিমালা ১৯৭৯ এর ২ (এ) ও ১৩ (১) ধারা মতে প্রধান শিক্ষক এইচ. এম জসিউদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্তের অনুলিপি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি), বরিশাল শিক্ষা বোর্ড, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর প্রেরণ করা হয়। পাশাপাশি বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষকদের চাকুরির শর্ত বিধিমালা ১৯৮৯ এর ১৪ (২) ধারা অনুসারে তদন্ত কমিটি গঠন হয়। অভিযোগগুলোর সত্যতা মিললে প্রধান শিক্ষকককে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।