বরিশাল সদর
সিন্ডিকেট করে বরিশালে এবারই প্রথম কেজি দরে বিক্রি
তরমুজ বিক্রিতে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে ক্রেতা প্রতারণা
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ জরিমানার পরও তরমুজ বিক্রিতে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে ক্রেতা প্রতারণা। কেজিতে বিক্রয় পদ্ধতিতে ক্রেতাদের থেকে কয়েক গুণ বেশি দাম হাতিয়ে নিচ্ছে তরমুজ বিক্রেতারা। গত দুদিন ধরে নগরজুড়ে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হলেও থামছেনা কেজিতে তরমুজ বিক্রি।
সূত্রে জানা গেছে, প্রান্তিক কৃষক থেকে পিস হিসেবে তরমুজ কিনে এনে ওজন পদ্ধতিতে বা কেজি পদ্ধতিতে তরমুজ বিক্রি করছে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে। এতে একেকটি তরমুজের মূল দামের চেয়ে প্রায় কয়েক গুন বেশি দাম হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। কৃষকের কাছ থেকে পিস হিসেবে তরমুজ কিনে কেজিতে বিক্রি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। যেখানে আগে বরিশালের বাজারে তরমুজ বিক্রি হতো পিস হিসেবে। সেখানে এবারই প্রথম ব্যবসায়ীরা তা কেজি হিসেবে বিক্রি করছেন। প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা করে হওয়ায় ৪০০-৫০০ টাকার নিচে কোনো তরমুজ কিনতে পারছেন না ক্রেতারা।
এবার মৌসুমের শুরু থেকেই তরমুজের দাম চড়া। অভিযোগ উঠেছে, বরিশাল সহ সারাদেশে সিন্ডিকেট করে তরমুজের দাম বাড়ানো হয়েছে। রমজান ও ধারাবাহিক অধিক দাবদাহের কারণে একটু স্বস্তি পেতে এবার ক্রেতাদের কাছে তরমুজের চাহিদাও বেশি। এই চাহিদাকে কেন্দ্র করে অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। সিন্ডিকেটের অপতৎপরতায় তরমুজে হাতই দেওয়া যাচ্ছে না। আকাশ ছোঁয়া দামের কারণে এখন আর তরমুজের স্বাদ নিতে পারছেন না নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষেরা।
গত বছর যে তরমুজ বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা, এবার সেই তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। এমনকি তরমুজ ব্যবসায়ীরা আগের সব নিয়ম ভঙ্গ করে পিস হিসেবের পরিবর্তে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করছেন। তবে ক্রেতাদের সিন্ডেকেটের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা। লকডাউন ও ভালো ফলন না হওয়ার অজুহাত দেখাচ্ছেন তারা।
তবে এ ব্যাপারে বরিশাল ফল ব্যবসায়ী সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, কেজিতে তরমুজ বিক্রি করলে ক্রেতাদের জন্য সুবিধা বেশি। কারণ দোকানদার একটি নির্দিষ্ট দামে বিক্রি করতে বাধ্য হবে। তবে সেক্ষেত্রে দেখতে হবে কোন বিক্রেতা কেজি প্রতি দাম বেশি না হাকায়। আর অনুমান নির্ভর করে কিনতে গেলে দাম বেশি হবে। তাছাড়া সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন সেনাবাহিনী, পুলিশ একাডেমি সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কেজিতে তরমুজ সাপ্লাই করা হয়।
অপরদিকে কেজিতে তরমুজ বিক্রির ব্যাপারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়া ত্রিপুরা বলেন, আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত অব্যাহত রয়েছে এবং প্রতিদিনই নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে আদালত পরিচালিত হচ্ছে। একইভাবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল হাইও বলেন, অভিযান অব্যাহত রয়েছে, কোনভাবেই বাজার অস্থির করার সুযোগ নেই। তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মৌসুমের শেষে পাইকারি বাজারে দাম বেশি হওয়ায় খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়ছে। তবে পাইকাররা বলছেন, পাইকারি বাজার থেকে পিস হিসেবে নেয়া তরমুজ খুচরা বাজারে কেজিতে বিক্রি করার কারণেই ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়ছে তরমুজের।
পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে জানা গেছে, সরাসরি ক্ষেত থেকেও পাইকাররা তরমুজ কিনে আনেন, আবার অনেক চাষি তরমুজ নিয়ে পাইকারদের কাছে আসেন। তবে যেভাবেই হোক না কেন এ বাণিজ্যে পিস হিসেবেই তরমুজের বেচা-বিক্রি চলে। আবার পাইকাররাও এনে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে পিস হিসেবেই বিক্রি করেন এসব তরমুজ। কিন্তু খুচরা বাজারে গিয়ে সেটি কেজি হিসেবে কিভাবে বিক্রি হচ্ছে সেটা কারও বোধগম্য নয়।
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার তরমুজ চাষী শামছুল আলম, মজিবুর রহমান মিন্টুসহ আরও অনেকে জানান, এখন স্থানীয়ভাবে বাজারে পাইকারদের কাছে ১০ কেজি ওজনের তরমুজ শত হিসেবে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর কেউ কেউ ঢাকা, বরিশালসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা দরে বিক্রি করছেন। আবার হিসেব যাই হোক পাইকারদের কাছে ২ কেজি ওজনের তরমুজ পিস হিসেবে সর্বোচ্চ ৫০ টাকায় এবং ৭-৮ কেজি ওজনের তরমুজ ১শ’ টাকা দরেও বিক্রি হচ্ছে।
অথচ পরিবহন খরচের নামে এসব তরমুজ শহরে এসে দাম বেড়ে যাচ্ছে এবং খুচরা বাজারে গিয়ে কেজি হিসেবে ১০ কেজি ওজনের একেকটি তরমুজ সাড়ে ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যেখানে ক্রেতাদের অভিযোগেরও শেষ নেই।
তরমুজের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে নগরবাসী মনে করছেন, কেজি দরে বিক্রির কারণেই এমন দাম উঠেছে। এতো ভারী একটি ফল ছোট পরিবারের জন্য কিনতে গেলেও ৫ কেজির নিচে হয় না। এর মধ্যে রমজান আর বৈশাখের খরতাপকে কেন্দ্র করে সবুজ তরমুজেও আগুন লেগেছে। তরমুজের ক্ষেত্রে যেটা হচ্ছে সেটা অন্য কোন ফলের ক্ষেত্রে দেশের কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না বলে অভিযোগ করেন তারা।