বরিশাল
তদন্ত শেষ না হতেই বরিশালের সেই বিতর্কিত ওসি শিশিরকে শাস্তিমূলক বদলি
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা অথচ নিয়েছে মারধরের মামলা এমন অভিযোগ আমলে নিয়ে ঢাকা পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর একটি তদন্ত দল বরিশালের ঘটনাস্থল ঘুরে ঢাকায় না যেতেই বিতর্কিত সেই ওসি শিশির কুমার পালকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে জেলার বানারীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শিশির কুমার পালকে ঢাকা শিল্প পুলিশে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ সংক্রান্তে একটি আদেশ গত মঙ্গলবার বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে এসে পৌঁছেছে। জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেন। কিন্তু তাকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ওই পুলিশ কর্মকর্তা ইঙ্গিত করে বলেন, থানা থেকে সরিয়ে হঠাৎ করে ঢাকা শিল্প পুলিশে ন্যাস্ত করার এই আদেশ শাস্তিমূলক ভাবলেও ভাবতে পারেন। এর থেকে তিনি বিস্তারিত কিছু বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। তথ্য মতে, আগামি সপ্তাহের যেকোন দিন নতুন কর্মস্থলে শিশিরকে দেখা যেতে পারে। ওসি শিশির কুমার পাল মাত্র ৮ মাস পূর্বে ২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর জেলার উজিরপুর থানা থেকে পার্শ্ববর্তী বানারীপাড়া থানায় যোগদান করেন। উজিরপুরে থাকা অবস্থায় মাঠ পর্যায়ের এই পুলিশ কর্মকর্তা বহুমুখি অপরাধ-অনিয়মের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে বিতর্কের ষোলকলা পূর্ণ করেছিলেন। বারবার পত্রিকার শিরোনাম হলেও শিশির কুমারকে জেলা পুলিশের কোন এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সহায়তা দিয়ে রক্ষা করেন। কখনও কখনও বেগতিক পরিস্থিতিতে প্রদীপের ন্যায় জ্বালিয়ে রেখে ঘুরে-ফিরে বরিশাল জেলার বিভিন্ন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে রাখা হয়। ২০০২ সালে পুলিশ প্রশাসনে যোগদানের পর শিশির কুমার পাল একবারই প্রথম জেলার বাইরে পটুয়াখালির গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু সেখানেও তিনি পুলিশের সুনাম বিকিয়ে দেন। এক পর্যায়ে প্রত্যাহার করে পটুয়াখালি পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছিল। কৌশলি এই পুলিশ কর্মকর্তা একপর্যায়ে ফের বরিশাল এসে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিকেশনে (পিবিআই) যোগদান করেন। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, তার চাকরি জীবনে গলাচিপা থানায় ছিল বরিশালের বাইরে প্রথম কোন কর্মস্থল। বছর তিনেক পূর্বে তিনি বরিশালের উজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর একের পর এক খবরের শিরোনাম হতে থাকেন। নিরীহ মানুষের ওপর নির্যাতন, আইনের অপব্যবহারসহ আইনি সহায়তার বদলে ধোঁকাবাজি দেয়ায় শিশির হয়ে ওঠেন মূতিমান এক আতঙ্কের নাম। তার হাত থেকে সাংবাদিকও রেহাই পায়নি। তার অনিয়ম তুলে ধরায় একাধিক সংবাদকর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি এমনকি পিটিয়ে এলাকা ছাড়া করার অভিযোগও রয়েছে। এছাড়া বৃদ্ধাকে প্রহর করে ব্যাপক সমালোচিত এবং আদালত তলব করলেও তার অবস্থান টলানো যায়নি। উজিরপুরে দীর্ঘদিন থাকা অবস্থায় একপর্যায়ে নিজেই স্থানীয় ক্ষমতাসীন রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়ে পক্ষপাতিত্ব করায় অপরপক্ষ এই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। এর আগে অন্তত চারটি অনিয়মের ঘটনা গণমাধ্যমের কল্যাণে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স তদন্ত টিম গঠন করেছিল।