বরিশাল
তজুমদ্দিন হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নাজুক!
ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। জনবল সংকট ও ডাক্তারদের খামখেয়ালির কারণে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলাবাসী। হাসপাতালটিতে উপজেলা ছাড়াও বিভিন্ন চরাঞ্চল থেকে অনেক রোগী চিকিৎসা নিতে এসে পড়েন বিপাকে। কিন্তু চিকিৎসকসহ জনবল সংকটে পরিপূর্ণ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা।
সূত্রে জানা গেছে, উপজেলাসহ মেঘনার বুকে জেগে উঠা চরাঞ্চলের মানুষের চিকিৎসাসেবার একমাত্র ভরসা তজুমদ্দিন হাসপাতাল। গত বৃহস্পতিবার সরজমিনে হাসপাতাল গিয়ে দেখা যায় ডাক্তার শাহনাজ শারমিন ইমারজেন্সী রুমে বসে আউটডোরের রোগী দেখছেন। তাতে রোগীদের দীর্ঘ লাইন লেগে রয়েছে ইমারজেন্সীর সামনে। এ অবস্থায় ভোগান্তিতে পড়েন ১মাস বয়সি শিশুকে দেখা আসা শিশু মাসহ বয়স্ক রোগীরা। হাসপাতালটিতে একদিকে ডাক্তারসহ জনবল সংকট অন্যদিকে কর্তব্য কাজে অবহেলা সব মিলিয়ে চিকিৎসাসেবার বর্তমান অবস্থা একে বারেই নাজুক দাবি সেবা নিতে আসা রোগীদের।
হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, তজুমদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি শুরু থেকেই ৫০ শয্যা দিয়ে কার্যক্রম শুরু করলেও জনবল সংকট তখন থেকেই লেগে আছে। এই হাসপাতালে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, জুনিয়র কনসালটেন্ট এবং আবাসিক চিকিৎসাসহ ১৫টি পদের মধ্যে ৮টি শূন্য। নার্স, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরসহ ১১৬ পদের বিপরীতে ৫৩টি পদ শূণ্য রয়েছে।
শুরু থেকে হাসপাতালটিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদায়ণ না করায় গুরুত্বপূর্ণ অনেক ইউনিট চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে এলাকার সাধারণ রোগীরা চিকিৎসাসেবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সামান্য সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে আসলেও ডাক্তাররা রেফার করেন ভোলা সদর হাসপাতালে। জেলা সদরে গিয়ে ব্যয়বহুল খরচ করে অনেক রোগীর পক্ষে চিকিৎসা করানো সম্ভব হয় না। হাসপাতালটির দেয়ালে রোগীদের সরবরাহ করার জন্য ঔষধের বিশাল একটি তালিকা টানানো থাকলেও অধিকাংশ ঔষধই সরবরাহ থাকে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। হাসপাতালে আসা গরীব রোগীদের বাহির থেকে ঔষধ কিনার জন্য ডাক্তাররা একটি পেস্ক্রিপশন ধরিয়ে দেন। এ যেন গরীব রোগীদের জন্য মরার উপরে খড়ার ঘা’র মতো। এক কথায় বলতে গেলে তজুমদ্দিনে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, জনবল ও ওষধপত্রের সংকটে চিকিৎসাসেবা একেবারেই নাজুক হয়ে পড়ছে। মাত্র দুইজন ডাক্তার দিয়ে চলছে ইনডোর, আউটডোর ও ইমারজেন্সী বিভাগ। একজন ইনডোরে গেলে অন্যজনকে সামাল দিতে হয় আউটডোর ও ইমারজেন্সী বিভাগ। আর তখনই সৃষ্টি হয় আউটডোরে রোগীর বিশাল লাইন। লাইনে দাড়িয়ে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হয় বয়স্ক রোগী, শিশু ও নারীরা।
উপজেলার শম্ভুপুর ইউনিয়নের খাসেরহাট এলাকার রেখা বেগম বলেন, ‘আমার ১মাসের বাচ্চা অসুস্থ আউটডোরে টিকিট কেটে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েছি ডাক্তার দেখানোর জন্য। দীর্ঘ দেড় ঘন্টা লাইনে দাড়িয়ে ক্লান্ত হয়ে রোগীদের জন্য দেয়া চেয়ারে বসে আছি। কখন ডাক্তার দেখাতে পারবো তাও বলতে পারি না।
মায়ের চিকিৎসার জন্য আসা চাঁদপুর ইউনিয়নের রিনা বেগম বলেন, অসুস্থ মাকে ডাক্তার দেখাতে এসে দেখি হাসপাতালে একজন ডাক্তার ইমারজেন্সীতে বসে রোগী দেখেন। লাইনে দাড়িয়ে সে আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন।
জানতে চাইলে চাঁদপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বাসিন্দা ও চাঁদপুর নুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মোঃ মোতাহার হোসেন বলেন, আমার বাচ্চা নাফিসাকে হাসপাতালে ডাক্তার দেখাই। ডাক্তার তিনটি টেস্ট দেন । তখন আমি হাসপাতালের ল্যাবে টেষ্ট করাতে গেলে ল্যাব ট্যাকনিশিয়ান সারাদিনই অনুপস্থিত ছিলেন কিন্তু উত্তম কুমার নামে এক এনজিও কর্মীকে দিয়ে টেস্ট করানো হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে উত্তম কুমার ব্রাক এনজিও’র কর্মচারী । টেষ্ট শেষে এনজিও কর্মি উত্তম কুমার জানান টেস্টের রিপোর্ট প্রিন্টের কাগজ না থাকায় আপনি রিপোর্ট মোবাইলে ছবি তুলে নেন। তিনি আরও জানান, টেস্টের ফি নিলেও কোন রশিদ সরবরাহ করা হয়নি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা ডা. আব্দুল্যাহ আল মর্তুজাকে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় হাসপাতালে না পেয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি রাতে ডিউটি করছেন বলে বাসায় আছেন জানান। কি জন্য ফোন করছি জানতে চান। বিষয়বস্তু বলার পরে তিনি জানান এখন আসতে পারবেন না এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কিছুই বলতে পারবেন না। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ছুটি শেষ করে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। পরে সাংবাদিকরা অনুমতি নিয়ে হাসপাতালে থাকা একমাত্র ডাক্তার শাহনাজ শারমিনের কাছে জানতে চাইলে তিনিও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দোহাই দিয়ে ও অফিসের কথা বলে কৌশলে সব বিষয় এড়িয়ে যান। পরে অবশ্যই সাংবাদিকরা হাসপাতালে থাকতেই দুপুর ১টার দিকে তিনি বাসায় চলে যান।’