বরিশাল
সরকারি জায়গা সুরক্ষায় অবৈধ দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে তৎপর দৈনিক দেশজনপদ
টিকলোনা মাসতুতো ভাইদের অবৈধ দখলদারিত্ব
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ মাসতুতো ভাই সম্পর্কে দিন-দুপুরেই দখল হয়ে যাচ্ছে বরিশাল নগরীর সড়ক ও জনপদ সাবডিভিশন দপ্তরের সামনের জায়গা। প্রতিষ্ঠানটির একদম নাকের ডগায় অবৈধ দখলদার মোকসেদ গতকাল কাক ডাকা ভোর থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ইট-কাঠের স্থাপনা নির্মান করতে থাকে। এমন খবর সড়ক ও জনপদ দপ্তরে জানানোর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই অবৈধ স্থাপনার নির্মান কাজ বন্ধ করে দেয় দপ্তরটির নির্বাহী প্রকৌশলী। গতকাল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অফিস বন্ধ থাকায় সুযোগ কাজে লাগিয়ে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মান করছেন মোকসেদ। এমন খবরের ভিত্তিতে দেশ জনপদের প্রতিবেদক সরেজমিনে গেলে স্থানীয় একাধিক সুত্র জানায়, সড়ক ও জনপদ অফিসের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসেই গড়ে উঠছে এ ধরনের অবৈধ স্থাপনা। তারপরও চুপ থাকে মাসতুতো ভাই সম্পর্কের নীতিতে। আর সাপ্তাহিক বন্ধের দিনে সরকারি জায়গাগুলো দখল করে যাতে কেউ ফোন দিলে বা যোগাযোগ করলে বলতে পারে যে, ভাই আজতো আমাদের অফিস বন্ধ। এই সুযোগেই দখলদাররা স্থাপনার নির্মান কাজ শেষ করে ফেলে। সুচুতুর দখলদাররা সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে ২৪ ঘন্টা বেশি লেবার দিয়ে কাজ করায়। এক কথায় সড়ক ও জনপদ দপ্তর এবং অবৈধ দখলদারের মধ্যে একটি অলিখিত চুক্তি থাকে যাতে উভয়ই লাভবান হয়। সরেজমিনসূত্রে, সেতুর টোল ঘর সংলগ্ন সড়ক ও জনপদ সাবডিভিশন দপ্তরের সামনে প্রতিষ্ঠানটির জায়গায় অবৈধ স্থাপনা নির্মান করছেন অত্র এলাকার বাসিন্দা মোকসেদ। এনিয়ে সড়ক ও জনপদ দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মাসুদকে জানালে তিনি বলেন, আমি আমার উপ-সহকারী প্রকৌশলী এবং ওয়ার্ক এসিট্যান্ট(সড়ক) কে স্পটে পাঠিয়েছি। ঘটনার সত্যতা পেলে আমরা কাজ বন্ধ করে দেবো। এ ব্যাপারে উপ-সহকারী প্রকৌশলী অঞ্জনের মোবাইল ০১৬৭৪১৩৬৩৫৭ নম্বরে কল দিলে তিনি বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী স্যার আমাকে সকাল বেলা ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছে এবং আমি তাৎক্ষণিক ওয়ার্ক এসিট্যান্ট আবুল হোসেনকে পাঠিয়েছি। আর ঐ অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীকে কাজ বন্ধ করে দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, আমাদের জায়গায় তার যে নির্মান সামগ্রী ব্যবহার করেছে তা তার নিজ দায়িত্বে দ্রুত অপসারন করতে বলেছি অন্যথায় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছি। এদিকে বিষয়টি জানতে ওয়ার্ক এসিট্যান্ট আবুল হোসেনের এই নাম্বারে ০১৭১২৯৩৬৫১৬ কল করলে তিনি বলেন, আমি স্পটে গিয়েছি এবং আমাদের প্রতিষ্ঠানের সামনের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মান করতেছিলো এবং স্যারকে জানিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অপরদিকে এ দখলদারিত্বের ব্যাপারে স্থানীয় একাধিক সূত্র আরো জানায়, রুপাতলীস্থ কালিজিরা এলাকা এবং দপদপিয়া সেতুর নিচেরাংশসহ একাধিক জায়গা দখলদারদের কড়ায়াত্বে চলে গেছে। এগুলো একদিনে হয়নি। যখন সাংবাদিকরা একটু খোঁজখবর নেয় তখন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সাময়িকভাবে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। মুলত এদের সাথে যোগসাজ ছাড়া এভাবে সরকারি জায়গা দখল করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। শুধু তাই নয় মাসতুতো ভাই সম্পর্কে এদের যোগসাজ কতটা যে স্পষ্ট তা রুপাতলী সাবডিভিশন অফিসের নাকের ডগায় দখলদারির ঘটনাটি বোঝার জন্য যথেষ্ট। ঐ অফিসটিতে সবসময়ই ৩/৪জন স্টাফ থাকে তারা কেউই কোন প্রতিবাদ করেনি এমনকি উপরমহলেও জানায়নি। সাংবাদিকরা এ নিয়ে তৎপর হলে সড়ক ও জনপদ দপ্তর থেকে কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। অথচ দপ্তরটির জায়গা দখল হয়ে যাওয়া নিয়ে দৈনিক দেশ জনপদ পত্রিকায় খবর প্রকাশের পরেও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের টনক নড়েনি। যেকারণে খবর প্রকাশের ৩দিন পরেই দিনদুপুরে দপ্তরটির সাবডিভিশনাল দপ্তরের সামনের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। এদিকে সরকারি প্রতিষ্ঠানের জায়গা এভাবে দিনদুপুরে দখল হয়ে যাবার ব্যাপারে বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জায়গা রক্ষার জন্য স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান নিয়োজিত রয়েছে। এরপরও যদি কোন গাফলতি দেখা যায় তাহলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়াও সরকারি জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য উচ্ছেদ অভিযান চলমান থাকে এবং বছরজুড়েই কোন না প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে এ অভিযান পরিচালিত হয়। কিন্তু রুপাতলীস্থ ব্রিজের টোলঘর লাগোয়া সড়ক ও জনপদ দপ্তরের সাবডিভিশন অফিসের সামনে অত্র প্রতিষ্ঠানটির জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা দিনদুপুরে নির্মিত হবে এবং তা তারা বন্ধ করবেনা এটা কিভাবে দেখছেন জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, অবশ্যই এটি তাদেরই দ্বায়িত্ব তাদের প্রতিষ্ঠানেরই জায়গা এবং তাদের অফিসের সামনেই দখল হয়ে যাবে এটা হতে দেয়া হবেনা। এনিয়ে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার অমিতাভ সরকার বলেন, আমরা বিষয়টি মিটিংয়ে আলোচনা করবো এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশনা দেয়া হবে।