বরিশাল
জোয়ারে পানিতে ভাসছে উপকূলিও এলাকা গুলো
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ পূর্ণিমার জোয়ার ও লঘুচাপের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বাড়িঘরে পানি উঠে রান্নাবান্না বন্ধ হয়ে গেছে। পিরোজপুরে ভেসে গেছে পুকুর-মাছ। ভোলায় ১০ গ্রাম প্লাবিত, কলাপাড়ায় ১৭ গ্রাম প্লাবিত, আমতলীতে ডুবে গেছে আমনের বীজতলা, হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ প্লাবিত, বাকেরগঞ্জে ১০ নদী বিপদসীমার ওপরে।
ভোলা
সৃষ্ট নিম্নচাপ ও পূর্ণিমার প্রভাবে ভোলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। চরফ্যাশন উপজেলার সর্বদক্ষিণের সাগর মোহনার ঢালচর ইউনিয়নসহ মনপুরার ১০ গ্রাম অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে করে প্রায় ২২ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। চরম দুর্ভোগে রয়েছে ওই সব এলাকার মানুষ। চরফ্যাশনের ঢালচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম জানান, অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে প্রায় দেড় হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। সকাল ১০টা থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রায় ৮ ঘণ্টা জোয়ারের পানিতে ভাসতে হচ্ছে ঢালচরের মানুষকে। সেখানে গত তিনদিনের মধ্যে সব চাইতে বেশি পানি বৃহস্পতিবার সকালে উঠেছে। জোয়ারের ৪ থেকে ৫ ফুট পানিতে মানুষের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। বহু ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত হয়েছে।
গবাদি পশুর কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে- তা এখনও জানা সম্ভব হয়নি। চরম দুর্ভোগে রয়েছে সেখানকার বসবাসরত পরিবারগুলো। অপরদিকে, জেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরার কাউয়ারটেকে ঢাকাগামী লঞ্চঘাট এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ওই লঞ্চঘাট এলাকার ডিসি রোডের ওপর দিয়ে জোয়ারে পানি প্রবাহিত হয়। এ ছাড়াও বেড়িবাঁধহীন সদ্য ঘোষিত নতুন চর কলাতলী ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকায় ৫ ফুট জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে বলে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন কলাতলী চরের ইউপি সদস্য রহমান।
এ ছাড়াও বিচ্ছিন্ন চরনিজাম, বদনারচর, ঢালচর ও চর শামসুদ্দিন জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ওই সমস্ত চরে বসবাসরত ২০ হাজারের ওপরে মানুষ বুধবার ও বৃহস্পতিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে বলে জানান চরে বসবাসরত বাসিন্দারা।
পিরোজপুর
ইন্দুরকানীতে নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে ভারি বর্ষণ ও জোয়ারের প্রভাবে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পারের হাট, বন্দর, বাজার, টগড়া, ইন্দুরকানী, সেতিবাড়িয়া, কালাইয়া, চাড়াখালী, সাইদখালী, বালিপাড়া, চরবলেশ^র, কলারণ, খোলপটুয়া, চণ্ডিপুর, ভবানীপুর, পত্তাশীসহ এসব এলাকার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে জমির ফসল, মাছের ঘের ও পুকুর।
অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ ও রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে জোয়ারের পানিতে। গোখাদ্যের সঙ্কট দেখে দিয়েছে, আমন ধানের বীজতলা তলিয়ে গেছে। এভাবে পানি বাড়লে আমন চাষে ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেসা ইশা।
আমতলী, বরগুনা
পূর্ণিমার জো ও তিনদিনের ভারি বর্ষণে উপকূলীয় অঞ্চল আমতলী-তালতলী উপজেলার আউশ ধানের খেত ও আমনের বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। দুই উপজেলার ৫০ হাজার কৃষকের চাষাবাদ বন্ধ রয়েছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশন না হলে আমনের বীজ পচে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান কৃষকরা।
লেমুয়া গ্রামের ইসহাক হাওলাদার বলেন, ভারি বর্ষণে আমনের বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। পানির কারণে জমি চাষাবাদ করতে পারছি না। দ্রুত পানি সরে না গেলে আমনের বীজ পচে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম বলেন, ভারি বর্ষণে কৃষি জমি তলিয়ে যাওয়ায় চাষাবাদ বন্ধ থাকলেও কৃষকদের অনেক উপকারে আসবে। পানি সরে গেলে আমনের বীজের ক্ষতি হবে না।
হাতিয়া
নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপসহ নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। অস্বাভাবিক জোয়ারের নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের প্রধান সড়ক ও বাজারগুলো প্লাবিত হয়েছে। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। পানি ঢুকে পড়েছে বাড়িগুলোতে। বেড়িবাঁধ না থাকায় সহজে প্লাবিত হয় নিঝুমদ্বীপ। জোয়ারে আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। এদিকে, জোয়ারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপজেলার নলচিরা ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের বাইরে বসবাস করা লোকজন।
নলচিরার তুপানিয়া গ্রামের বেড়িবাঁধের বাইরের ২ শতাধিক পরিবারের বসতঘরে পানি উঠে গেছে। এতে রান্নাসহ দৈনন্দিন কাজে মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা। নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আফছার দিনাজ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নঝুমদ্বীপে প্রায় ৪০ হাজার লোকের বসবাস। ইউনিয়নটি সাগরের একেবারে কাছে হলেও নেই কোন বেড়িবাঁধ।
বাকেরগঞ্জ, বরিশাল
বাকেরগঞ্জ পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের আশপাশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। লঘুচাপ ও পূর্ণিমার প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে। জোয়ারের সময় উপকূলের নদ-নদীতে আগের চেয়ে বেশি পানি প্রবেশ করছে। এতে বেশিরভাগ নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের জলানুসন্ধান বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মাসুম জানান, বিভাগের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ ১০টি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৈরী আবহাওয়া, পূর্ণিমার প্রভাব এবং লঘুচাপ বিদ্যমান থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিকে বন্যা বলা যাবে না। এটি মৌসুমি পানিপ্রবাহ। আশা করা যাচ্ছে, দুইদিন পর নিরাপদ সীমায় নামবে নদীর পানিপ্রবাহ।
কলাপাড়া, পটুয়াখালী
পূর্ণিমার প্রভাবে কলাপাড়া উপকূলজুড়ে বইছে অস্বাভাবিক জোয়ার। জোয়ারের প্রভাবে বেড়িবাঁধের বাইরের জনপদের অন্তত ছয় হাজার পরিবারের বাড়িঘর প্লাবিত। বেড়িবাঁধ ভাঙ্গা থাকায় জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে রাবনাবাদ পাড়ের ১৭ গ্রাম। মানুষের বাড়িঘর, পুকুর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সব পানিতে ডুবে যায়। কোমর সমান পানিতে সব সয়লাব হয়ে যায়। আরও দুই-একদিন অস্বাভাবিক জোয়ার বইতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় মানুষ। মানুষের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে আছে। জোয়ারের ঝাপটায় কুয়াকাটা সৈকতের শত শত গাছপালা উপড়ে গেছে।