জাতীয়
জীবনের শেষ ১১ দিন রঙিন ছিল ফাহমিদার
নিজস্ব প্রতিবেদক॥ মেহেদি রাঙা হাত, বেনারসি লাল শাড়ি। নাকে অক্সিজেন নল নিয়ে হাসিমুখে স্বামীর সঙ্গে ফাহমিদা কামাল। এমন ছবি এখন শুধুই স্মৃতি। ভালোবেসে মেয়েটিকে বিয়ে করেছিলেন মাহমুদুল হাসান। তাদের ভালোবাসা জয়ী হলেও, জীবনযুদ্ধে ক্যানসারের কাছে হার মানলেন ২৬ বছর বয়সী ফাহমিদা। যে হাসপাতালে করেছিলেন বিয়ের মালাবদল, সেখানেই ঢলে পড়লেন মৃত্যুকোলে।
বিয়ের পরে ফাহমিদা কামাল ও মাহমুদুল হাসানের ক্ষণস্থায়ী সংসারজীবন কেটেছে হাসপাতালেই। বিয়ের পর মানসিকভাবে অনেক প্রাণবন্ত ছিলেন ফাহমিদা। বিয়েকে কেন্দ্র করে উৎফুল্ল ছিলেন তিনি, যার রেশ ছিল হাসপাতালের আইসিইউতে যাওয়ার আগেও।
চট্টগ্রাম মেডিক্যালের আইসিইউতে সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মারা যান ফাহমিদা। রোববার দুপুরে তাকে কেবিন থেকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।
ফাহমিদার চাচা ইউসুফ আলী বলেন, বিয়ের পরে মোটামুটি উৎফুল্ল ছিল মেয়েটি। প্রেশার কমে গেলেও, তার মনের জোর ছিল দুর্দান্ত। শরীরে বাসা বাঁধা ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল প্রতি মুহূর্তে। নাকে অক্সিজেনের নল ও হাতে একগাদা সুই নিয়েও হাসিমুখে কথা বলত সবার সঙ্গে।
বিয়ের পর থেকেই ফাহমিদার পাশে থেকে সেবা করে গেছেন তার স্বামী মাহমুদুল হাসান। মৃত্যুর শেষ মুহূর্তেও স্ত্রীর শয্যাপাশে ছিলেন মাহমুদুল।
তিনি বলেন, ‘ফাহমিদার মৃত্যুর পর শোকে মুহ্যমান স্বামী মাহমুদুল হাসান। ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে যেন ডানাহারা হয়ে গেছেন তিনি। ভালোবাসার মানুষটি অল্প কদিন বাঁচবেন জেনেও কেবল মৃত্যুর আগের দিনগুলোতে ফাহমিদার পাশে থাকার ইচ্ছা থেকেই বিয়ে করেন তিনি।
‘বিয়ের পর থেকে প্রতিদিন ফাহমিদার সেবাযত্ন করতেন। মৃত্যুর আগে শাশুড়ির আদর ভালোবাসাও পেয়েছেন ফাহমিদা। ক্ষণিকের সংসারজীবনে সবার ভালোবাসার মধ্যমণি হয়ে ছিল আমাদের মেয়ে ফাহমিদা।’
গত ৫ মার্চ ভারতের টাটা হাসপাতাল থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয় ফাহমিদাকে। তখন চিকিৎসকরা বলেছিলেন, সর্বোচ্চ ৭ দিন হয়তো বাঁচতে পারেন তিনি। কিন্তু সেই শঙ্কাকে মিথ্যা প্রমাণ করেন ফাহমিদা।
ফাহমিদার আত্মীয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন সাকী বলেন, ‘বিয়ের সময় ফাহমিদা মুমূর্ষু ছিল। নাকে অক্সিজেনের নল নিয়ে বধূ সাজে। লাল বেনারসিতে হাসিখুশি ছিল বেশ।
‘এরপর ১১ দিন কেটেছে। এতেই বোঝা যায় মনের যুদ্ধে এগিয়ে ছিল ফাহমিদা। শক্ত মনোবল ছিল বলেই আল্লাহ তার হায়াত বৃদ্ধি করেছিল। অথচ চিকিৎসকরা বলেছিল, তার আগেই সে আমাদের ছেড়ে যাবে। শরীর হারলেও হারেনি তার মন। ভালোবাসার শক্তিই তাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল এতদিন।’