বরিশাল
বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ
জনবল ও আর্থিক সংকটে প্রাথমিক শাখায় ভর্তি বন্ধ
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ জনবল ও আর্থিক সংকটের কারণে আগামী ২০২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে তৃতীয় শ্রেণিতে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। চলতি বছরের অনলাইন ভর্তির আবেদনপত্রে হঠাৎ করে প্রতিষ্ঠানের নাম না থাকায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে সংশয়। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, দীর্ঘদিনের শিক্ষক সংকট, আর্থিক ঘাটতি এবং পাঠদানে গুরুতর বাধা তৈরি হওয়ায় প্রাথমিক শাখায় ভর্তি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৭ আগস্ট একাডেমিক কাউন্সিলের ৫৭তম সভায় ২০২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রাথমিক শাখার তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি বন্ধের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ সিদ্ধান্ত চলতি বছরের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগেই প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমিক শাখার ভর্তি কমিটির সভাপতি ও বরিশালের জেলা প্রশাসককে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।
২০১৭ সালে জাতীয়করণের পর থেকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি চরম শিক্ষক সংকটে ভুগছে। তখন মাধ্যমিক শাখায় সহকারী শিক্ষক ছিলেন মাত্র ছয়জন। বর্তমানে গণিতের একজন শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত থাকায় সেই সংখ্যাটি কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচজনে। ফলে তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ১,৩০০ শিক্ষার্থীর পাঠদান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা একেবারেই দুরূহ হয়ে পড়েছে। মানবসম্পদের এই ঘাটতি শিক্ষার মানকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে।
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী শিক্ষক কর্মচারীসহ মোট ৩২টি পদ থাকা সত্ত্বেও বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে বর্তমানে শূন্য রয়েছে ২৭টি পদ। ফলে নিয়মিত পাঁচজন শিক্ষক দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি বাধ্য হয়ে ১৪ জন আমন্ত্রিত শিক্ষক দিয়ে ক্লাস পরিচালনা করছে। তবে আমন্ত্রিত শিক্ষকদের মাসিক সম্মানী প্রদানে বড় ধরনের সংকটে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে অত্যাবশ্যকীয় খাতে মাত্র ১৫ টাকা সংগ্রহ করা যায়। এ অল্প অর্থে আমন্ত্রিতদের সম্মানী পরিশোধ করা সম্ভব নয় বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
জানা গেছে, জাতীয়করণের আগে শিক্ষার্থীদের সেশন চার্জ ও বেতন বেশি ছিল। সেই অর্থ দিয়েই প্রাথমিক শাখায় আমন্ত্রিত শিক্ষক নিয়োগ করা হতো। কিন্তু সরকারিকরণের পর আগের মতো বেতন সেশন চার্জ নেওয়া সম্ভব নয়। এর ফলে প্রাথমিক শাখার ব্যয় টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাছাড়া একই ভবনে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শাখা থাকার ফলে শ্রেণি কার্যক্রমেও তৈরি হচ্ছে নানাবিধ সংকট।
কলেজ সূত্র জানিয়েছে, তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি বন্ধের পর আগামী বছরগুলোতে পর্যায়ক্রমে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ভর্তি কার্যক্রমও বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। কর্তৃপক্ষ মনে করছে, শিক্ষক নিয়োগ না হলে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শাখার পাঠদান ঝুঁকিতে পড়বে, তাই প্রাথমিক শাখা বন্ধ করা ছাড়া পথ নেই। কলেজ সূত্র বলছে, শিক্ষক সংকট নিরসনে গত দুই বছরের মধ্যে কয়েক দফায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছে শিক্ষক নিয়োগের আবেদন পাঠানো হলেও কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু মামুন বলেন, “দুই বছর আগে তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার শিক্ষক নিয়োগের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। আগের অধ্যক্ষও একই বিষয়ে আবেদন করেন। আমি নিজেও চলতি বছরের জানুয়ারিতে পদ সৃজন ও শিক্ষক নিয়োগের জন্য অধিদপ্তরে আবেদন করেছি। কিন্তু এখনো কোনো শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। ফলে আমন্ত্রিত শিক্ষকদের বেতন বহন করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। মাত্র কয়েকজন শিক্ষক দিয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শাখার সব শ্রেণি পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়েই আগামী ২০২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি বন্ধ রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, একই ভবনে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শাখা পরিচালিত হওয়ায় অবকাঠামোগত চাপও বাড়ছে। যথাযথ শিক্ষক নিয়োগ না হলে পর্যায়ক্রমে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ভর্তিও বন্ধ হয়ে যেতে পারে”।



