বরিশাল সদর
নেপথ্যে মদ-জুয়া-নারী সাপ্লাই
ছিঁচকে চোর থেকে কোটিপতি আল-আমিন
নিজস্ব প্রতিবেদ॥ ভূমিহীন দিনমজুর বাবার ছেলে আলামিন। অল্প বয়সে এলাকায় ছোটখাটো চুরির ঘটনায় জড়িয়ে পড়ায় ‘চোর’ হিসেবেই তাকে চিনত সবাই। বরিশাল নগরীর ভাটিখানা এলাকার এক সময়কার ছিঁচকে চোর আল-আমিন আজ হঠাৎ করেই যেন কোটিপতি।
বাটার দোকান থেকে জুতা চুরি, সাইকেল চুরি, একাধিক মোটরবাইক চুরির কারণে গণধোলাই খাওয়ার ঘটনা রয়েছে এই আল-আমিন খানের বিরুদ্ধে। চুরির অপরাধে একাধিকবার পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, মোটরবাইক চুরির মামলায় জেলও খাটতে হয়েছে অনেকদিন। জেল থেকে ছাড়া পাবার পর পুরনো অপকর্ম ছেড়ে দিয়ে শুরু করে মদ, নারী সাপ্লাই ও জুয়ার আসরের জমজমাট দালালী ব্যবসা। এতো অপকর্মের হোতা কে এই আলামিন খান?
অনুসন্ধান সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল নগরীর ভাটিখানার মৃত মোঃ হাফেজ খানের ছেলে আল-আমিন। বাবা হাফেজ খান চকবাজার এলাকায় ফুটপাতে দর্জির কাজ করে কোনো মতে সংসার চালাতেন। অর্থের অভাবে পড়াশোনা করাতে পারেননি সন্তানদের। আল-আমিনের বড় ভাই মামুন মাদক বাণিজ্যে জড়িয়েছে অনেক আগে থেকেই (বিস্তারিত থাকছে আগামী পর্বে)। আর আল-আমিন অল্প বয়সেই জড়িয়ে পরে চুরি ছিনতাইয়ে। যে কারণে ছোটবেলা থেকেই ছিচকে চোর হিসেবে পরিচিতি পায় তিনি।
গত কয়েক বছর যাবত জুয়ার আসর সহ নারী ও মদ সাপ্লাই দিয়ে রাতারাতি বিপুল পরিমাণ অর্থ বিত্তের মালিক বনে যান তিনি। এর সাথে রয়েছে তার অবৈধ মাদকের চালান পরিবহনের কাজ।
এদিকে সরেজমিনে এলাকাবাসী জানায়, বছর কয়েক আগেও চুরি ছিনতাই করে কোনোমতে জীবনযাপন করত আল-আমিন। কিন্তু বর্তমানে তার জীবনযাপন দেখলে যে কারোই চোখ কপালে উঠে যাবে। তারা জানায়, গত মাসে প্রায় পঞ্চাশ লাখ টাকা খরচ করে তার দুই ছেলের সুন্নতে খাতনা অনুষ্ঠান করিয়েছে। শুধু তাই নয়, অনুষ্ঠানে যোগদানকৃত সকল অতিথিদের জন্য পুরস্কারেরও ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এমন জাকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের পর পুরো ভাটিখানা জুড়ে আলোচনায় আসে আল-আমিন। বেরিয়ে আসে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরী ও কুয়াকাটাসহ বিভিন্ন স্থানে আল-আমিনের পরিচালনায় বসে জমজমাট জুয়ার আসর। তার রয়েছে নিজস্ব কয়েকটি আস্তানা। সেখানে কেবলই সুযোগ মিলে তার নির্দিষ্ট লোকজনের। আসরে জুয়াড়িদের কাছে চড়া সুদে টাকা খাটিয়ে অবৈধভাবে হাতিয়ে নেয় লক্ষ লক্ষ টাকা। নগরীর পুলিশ লাইন, কাশিপুরসহ কয়েকটি স্থানেই বসে তার জুয়ার আসর। এছাড়াও খুলনা ও ঢাকার সাভারে রয়েছে তার জুয়ার আস্তানা।
এছাড়াও দীর্ঘদিন যাবত নারী সাপ্লাইয়ের অন্যতম হোতা এই আল-আমিন। রয়েছে মদ সাপ্লাইয়েরও অভিযোগ। সরকারি-বেসরকারি বড় বড় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে রয়েছে তার সুসম্পর্ক। সেই সুবাদে এ ধরনের অবৈধ কাজ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে তিনি।
এ বিষয়ে বরিশাল নগর গোয়েন্দা শাখার মুখপাত্র মঞ্জুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই, তবে খোঁজখবর নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ডের ব্যাপারে জানতে চাইলে আল-আমিন বলেন, শত্রুতা করে অনেকেই এ ধরনের মিথ্যে কথা আপনাদের জানিয়েছে। আমার অনেক বন্ধুরা যারা আমার ভাল চায় না, তারা বিষয়টিকে আপনাদের কাছে অন্যভাবে উপস্থাপন করেছে। তবে একাধিক চুরির মামলা রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন।
এদিকে আল-আমিনের এসব অবৈধ কর্মকান্ড এবং অর্থ উপার্জনের বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্যও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন স্থানীয়রা। (চলবে)