পটুয়াখালী
চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লো হত্যা মামলার আসামি
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ঢাকা থেকে লঞ্চ যোগে বরিশালে আসার পথে এক সহযাত্রীর মানিব্যাগ চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে হত্যা মামলার এক আসামি।
শনিবার (০৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল সদর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসানাত জামান।
তিনি জানান, চুরির অভিযোগে আটক মিলন সিকদার ওরফে রিপন সিকদার (৩৮) নামে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতারের জন্য পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ুন কবির বরিশালে এসেছেন। তাকে নিয়মানুযায়ী মির্জাগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে মির্জাগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ুন কবির বলেন, মিলন ওরফে রিপন বরগুনার বেতাগী থানায় ২০১১ সালের একটি হত্যা মামলার আসামি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন।
বরিশাল নদীবন্দর ও নৌ পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাতে ঢাকা থেকে এমভি পারাবত-১২ লঞ্চে চেপে স্ত্রী তানিয়াকে নিয়ে বরিশালের উদ্দেশে রওয়ানা দেন মিলন সিকদার ওরফে রিপন সিকদার। পথে লঞ্চের দ্বিতীয় তলার ডেকের যাত্রী শহিদুল ইসলামের মানিব্যাগ খোয়া যায়। তিনি বিষয়টি লঞ্চের স্টাফদের জানালে তারা সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে দেখতে পান মিলন ওই ব্যক্তির মানিব্যাগটি কৌশলে চুরি করেছেন। বিষয়টি নিয়ে রিপনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি চুরি করার বিষয়টি স্বীকার করেন।
লঞ্চের যাত্রী ও ভুক্তভোগী শহিদুল ইসলাম বলেন, চুরি করার অপরাধে যখন যাত্রী ও স্টাফরা রিপনের ওপর ক্ষেপে যায় তখন তিনি নিজেকে পুলিশ পরিচয় দেন। আর তার স্ত্রী তানিয়াও তার পক্ষে সাফাই গাইতে থাকেন। সকালে লঞ্চ ঘাটে ভিড়লে রিপনকে নৌ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পারাবাত ১২ লঞ্চের সুপারভাইজার নজরুল ইসলাম বলেন, আটক রিপন এর আগে পুলিশ পরিচয়ে পারাবত-১১ লঞ্চে একই কাজ করেছিলেন। তবে প্রমাণ না থাকায় তখন তিনি পুলিশের একটি কার্ড দেখিয়ে পার পেয়ে যান। এবার মানিব্যাগ চুরির অভিযোগ নিয়ে গোটা লঞ্চে হৈ-চৈ পরে যায়। তখন পারাবাত-১১ লঞ্চের সাবেক এক কর্মচারী যিনি বর্তমানে পারাবত-১২ লঞ্চে চাকরি করছেন, তিনি এসে রিপনকে শনাক্ত করেন।
বরিশাল সদর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসানাত জামান বলেন, মানিব্যাগ চুরি নিয়ে হট্টগোলের বিষয়টি জেনে শনিবার (০৩ সেপ্টেম্বর) সকালেই নৌ পুলিশের সদস্যরা পারাবত-১১ লঞ্চে যান। সেখানে যাত্রী ও স্টাফরা রিপন ও তার স্ত্রী তানিয়াকে আটক করে রাখেন।
পরে তাদের নৌ-থানা পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়। তাদের সঙ্গে থাকা পুলিশ লেখা একটি ব্যাগ ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্যদদের ভিজিটিং কার্ডও পাওয়া গেছে তাদের কাছে।
ওসি হাসানাত জামান বলেন, থানায় নিয়ে এসে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের শুরু থেকেই রিপন ও তার স্ত্রী পরিচয় প্রদান নিয়ে নানান টালবাহানা শুরু করেন। পরে খোঁজ নিতে নিতে কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় জানতে পারি তিনি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। এরপর মির্জাগঞ্জ থানায় ফোন দিয়ে জানতে পারি রিপন কখনো নিজেকে রিপন সিকদার আবার কখনো মিলন সিকদার হিসেবে পরিচয় দেন। তার নামে পাশের বরগুনার বেতাগী থানায় একটি হত্যা মামলা রয়েছে।
ওসি আরও জানান, রিপন ওরফে মিলনকে আটকের বিষয়টি জানতে পেরে মির্জাগঞ্জ থানা পুলিশ বরিশালের উদ্দেশে রওয়ানা দেয়। তারা বরিশালে পৌঁছে তাকে শনাক্ত করেছে।
অন্যদিকে চুরির ঘটনায় সম্পৃক্ততা পাওয়া না যাওয়ায় এবং ভুক্তভোগী শফিকুল ইসলাম কোনো লিখিত অভিযোগ না দেওয়ায় রিপনের স্ত্রী তানিয়াকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। রিপনের বিরুদ্ধে আরও বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে বলেও জানান ওসি।
রিপন সিকদার ওরফে মিলন সিকদার পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের পায়রাগঞ্জ এলাকার সোহরাব সিকদারের ছেলে এবং তার স্ত্রী তানিয়া (১৯) একই উপজেলার নরিয়াবাদ এলাকার শাহিন মৃধার মেয়ে।