বরিশাল
বরিশাল সিটি নির্বাচন
‘চুপিসারে’ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে আলোচনায় শিল্পপতি মিজানুর
মিজানুর রহমান দেশের অন্যতম রপ্তানিকারক পাদুকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফরচুন সুজ এবং ফরচুন গ্রুপ অব কোম্পানিজের চেয়ারম্যান। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) ফরচুন বরিশাল দলের কর্ণধার।
পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে ইচ্ছুক ৪১ জন মেয়র পদে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। বুধবার আওয়ামী লীগ তাদের তালিকা প্রকাশ করেছে। সেখানে বরিশাল সিটি করপোরেশনে মনোনয়নপ্রত্যাশী সাতজনের মধ্যে ৪ নম্বরে মো. মিজানুর রহমানের নাম রয়েছে। তবে কে এই মিজানুর রহমান, তা নিয়ে ধোঁয়াশায় ছিলেন বরিশাল আওয়ামী লীগের নেতারাও।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য গোলাম আব্বাস চৌধুরী বলেন, ‘আমি মিজানুর রহমান নামের একজনের মনোনয়ন চাওয়ার বিষয়টি দুই দিন আগে লোকমুখে শুনেছি। কিন্তু কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি, তিনি কোন মিজানুর রহমান। এখন এটা নিশ্চিত হওয়া গেল।
মনোনয়নের বিষয়ে মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি প্রচারবিমুখ। তাই বিষয়টি আগেভাগে প্রকাশ করতে চাইনি। প্রিয় নেত্রী যদি আমাকে বরিশাল নগরবাসীর সেবা করার সুযোগ দেন, তাহলে তাঁর সম্মান আমি রাখব। বরিশালকে আমি আধুনিক, নান্দনিক নগর হিসেবে সাজাব। নগরবাসীর সম্মান, মর্যাদা ফিরিয়ে দেব। বেকার, তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিসহ জনকল্যাণমুখী একটি শহরে পরিণত করব বরিশালকে।’
বরিশাল সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচনে এবার শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে জল্পনাকল্পনা চলছে, যার সূচনা হয় বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতের মেয়র পদে মনোনয়ন চাওয়ার মধ্য দিয়ে। মিজানুর রহমান মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করার ঘটনা নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মিজানুর রহমান আওয়ামী লীগপন্থী ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত হলেও সরাসরি দলে তাঁর কোনো পদ-পদবি থাকার তথ্য নেই। অবশ্য আওয়ামী লীগ থেকে প্রকাশিত মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় তাঁর পদ বরিশাল মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক উল্লেখ রয়েছে।
মিজানুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সূত্র বলেছে, তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। ওই সময় তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। মিজানুর রহমানের সঙ্গে বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব বরিশালে আলোচিত। এ জন্য মিজানুর রহমান বরিশালে এলে সামনে-পেছনে আনসার বাহিনীর বিশাল নিরাপত্তাবহর নিয়ে চলাফেরা করেন। একজন সিআইপি (বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি) হিসেবে তিনি এই নিরাপত্তা নিচ্ছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বাদে যে ছয়জন এবার দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন, তাঁরা সবাই সাদিক আবদুল্লাহর বিরোধী হিসেবে পরিচিত। ফলে এই ছয়জন মনোনয়নপ্রত্যাশী এককাট্টা হয়েই মাঠে নেমেছেন বলে মনে করছেন নগরের রাজনীতি বিশ্লেষকেরা। তাঁদের মধ্যে আবার অনেকেই সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
এবারের নির্বাচনে মনোনয়নদৌড়ে বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জে পড়েছেন বলে মনে করছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বরিশাল মহানগরের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘এটা যেমন সাদিক আবদুল্লাহর জন্য বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ, তেমনি এটাকে আমরা ইতিবাচকও বলব। কারণ, প্রার্থী বেশি হলে দলের পক্ষে সুবিধা হবে ভালো ও যোগ্য প্রার্থী বাছাই করতে। গণতান্ত্রিক রীতিনীতিতে এমন চর্চা থাকা বাঞ্ছনীয়।’
এ প্রসঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম আব্বাস চৌধুরী বলেন, ‘এটাকে আমি মোটেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করছি না। বরং এটা একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমরা সাদিক আবদুল্লাহকে একক প্রার্থী হিসেবে প্রস্তাব করে কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। এর বাইরে কেউ মনোনয়ন চাইতে পারবে না—এমনটা নয়। আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। সেখানে অনেকেই মনোনয়ন চাইতে পারে, এটা অসম্ভব কিছু নয়।’ সূত্র: প্রথম আলো