চরফ্যাশন
চরফ্যাশনে করোনাকালীন সময়ে বাল্যবিবাহের মহোৎসব
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ভোলা চরফ্যাশন উপজেলায় করোনাকালীন সময়ে প্রায় ৫০টি বাল্যবিবাহ সম্পূর্ণ হয়েছে৷ এযেন মহোৎসবে পরিণত হয়েছে বাল্যবিয়ের৷
এর সাথে সমানতালে বেড়েছে আত্মহত্যা, নারী নির্যাতন, মামলা-হামলা ও হত্যার মত জঘন্য অপরাধ৷
জানা যায়, চরফ্যাশন উপজেলার আহাম্মদপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী, নুরাবাদ ইউনিয়ন ৬নং ওয়ার্ডে দশম শ্রেণীর ছাত্রী, হাজারীগঞ্জ ইউনিয়ন বাসিরদোন এলাকায় অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী, রসুলপুর ইউনিয়নে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী, চর মানিকা নবম শ্রেণির ছাত্র, জাহানপুর ইউনিয়নে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী, মাদ্রাজ ইউনিয়নের আফজাল গ্রামে দশম শ্রেণীর ছাত্রী সহ প্রায় ৫০টির ও বেশি বাল্যবিয়ে এ করোনাকালীন সময়ে খুব কৌশলে সম্পন্ন করা হয়েছে৷
অনুসন্ধানে দেখা যায়, করোনার এসময়ে বিভিন্ন দেশে কর্মরত অভিবাসী শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন নিজ বড়িতে আসা, গ্রামাঞ্চলে বিয়ের আগে মেয়েরা যাতে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে না পড়ে, পরিবারের সুনাম বজায় রাখতে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার পরিবার, সংসারের খরচ বাঁচাতে বা কন্যা সন্তানকে আপদ মনে করা, সন্তানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করারসহ নানা অজুহাতে কম বয়সে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। মেয়েরা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাল্যবিয়ের অভিশাপে স্বামীর সংসার করতে বাধ্য হচ্ছে। আবার কেউ কেউ হচ্ছে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে৷
আর এসব বাল্যবিয়ের কাজে সন্তানের পরিবারকে সাহায্য করছে, ঘটক, নিকাহ -রেজিস্টার, ইউনিয়ন চৌকিদার ও পরিষদের কিছু কর্মকর্তা৷ তারা জালজালিয়াতির মাধ্যমে সন্তানের বয়স বাড়িয়ে ভূয়া জন্ম নিবন্ধন দাখিল করে কাজির মাধ্যমে বিবাহ সম্পন্ন করে থাকেন৷ অভিভাবকরা এদের সহযোগিতায় বিভিন্ন কৌশলে তাদের কন্যা ও পুত্রসন্তানের বয়স লুকিয়ে বাল্যবিয়ে দিয়ে গোপনেই সারা হচ্ছে বিয়ের আয়োজন৷
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই বাল্যবিয়ে ঠেকানো না গেলে নারীর প্রতি সহিংসতা, মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি, অপরিণত গর্ভধারণ, প্রসবকালীন শিশুর মৃত্যুঝুঁকি, প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যা, স্কুল থেকে ঝরে পড়ার হার বৃদ্ধি, নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার ক্ষমতা ও সুযোগ কমে যাওয়াসহ নানাবিধ নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন জানান, বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে প্রশাসন জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছে। বাল্যবিবাহের খবর পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহন করছি আমরা৷ বাল্যবিয়ের খবর শুনলে উপজেলা প্রশাসনকে জানানোর অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি৷
জেলা রেজিস্টার সেলিম হাওলাদার জানান, নিকাহ রেজিস্টারদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নিকাহ রেজিস্টারদের কোন সহকারী নিয়োগ দেওয়ার বিধান নেই বলেও জানান তিনি।