বরিশাল
জিম্মি কলেজ কর্তপক্ষ
গোল বাবু’র কব্জায় সরকারী বিএম কলেজ
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল সরকারী বিএম কলেজের বিলুপ্ত কমিটির সদস্য হওয়ার পরও প্রভাব খাটিয়ে লুটপাট ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে আহসান উল্লাহ মিরাজ ওরফে গোল বাবু। ঐতিহ্যবাহী এ সরকারী কলেজটিতে অন্তত কয়েক ধরনের অবৈধ সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক হয়ে আছে এই গোল বাবু। শুধু তাই নয়, নিজের ফেইসবুক পেইজে নগরীর সিভিল সার্জন দপ্তরের চাকুরীজীবি বলে উল্লেখ করেছেন। যা ডাহা মিথ্যা বা প্রতারণা সামিল। এ নিয়ে বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন মনোয়ার হোসেন বলেন, আহসান উল্লাহ মিরাজ আমাদের কোন জনবল নন। আর ফেইসবুক পেইজে যদি সিভিল সার্জন দপ্তরের পরিচয় ব্যবহার করে তবে তিনি প্রতারণা করছেন। এ বিষয়ে তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দলীয় ছাত্র সংগঠনের ছত্রছায়ায় বিএম কলেজের ক্যাম্পাসে ক্রীড়া ক্লাব নামে একটি ভুইফোঁড় সংগঠন খুলে স্বঘোষিত নেতা বনে গেছেন গোল বাবু। বিএম কলেজের কেন্টিন, পুকুরসহ ছাত্রাবাসগুলোর ডায়নিংয়েও হস্তক্ষেপ রয়েছে তার। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে কারণ আদৌ ক্ষমতাসীন দলীয় ছাত্র সংগঠনের সাথে তার কোন যোগসাজোস নেই। এদিকে বিএম কলেজের একাধিক ছাত্রলীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিলুপ্ত হওয়া কমিটির সদস্য সচিব থাকা সত্বেও বর্তমানে নিজেকে ওই কলেজের বর্তমান ছাত্রলীগ নেতা দাবী করে নানা অপকর্ম করছেন তিনি। কলেজের উন্নয়নমূলক কাজগুলোতেও তার নগ্ন হস্তক্ষেপ রয়েছে। ছাত্র না হওয়া সত্ত্বেও ভূয়া সংগঠন খুলেছেন। সূত্রে আরো জানা গেছে, প্রথমে অবৈধভাবে এক শিক্ষক নেতার সহযোগিতায় কলেজের ইসলামী ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হয়েছেন তিনি। এরপরেই ক্রীড়া ক্লাব নামে একটি সংগঠন খুলে। শুধু তাই নয়, এই ক্লাবের নামে কলেজ ফান্ড থেকে কয়েক লক্ষ টাকা নেয়া হয়েছেও বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিএম কলেজের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিএম কলেজ শিক্ষক পরিষদের যে কমিটি চেইন না মেনে হয়েছিলো তাও বাবু’র বাসায় বসেই সিদ্ধান্ত হয়। কে কোন পদে থাকবেন তাও সিদ্ধান্ত নেয় বাবু। আর তার লোকজনকে শিক্ষক নেতার পদে বসিয়েই চালু হয় তার অপকর্ম। প্রথমত সে দখলে নেয় কলেজের ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক হলের সামনের পুকুরটি। পরে জীবনান্দদাশ হলের সামনের পুকুর এবং এরপরেই বাকসু ভবনের পাশের বৃহদাকার পুকুরটি পুরোপুরি দখলে নিয়ে নেয় এই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। তাছাড়া কলেজের ক্যাফেটরিয়া এবং বনমালী গাগুলী ছাত্রীনিবাসের ক্যাফেটরিয়াটাও রয়েছে তারই দখলে। সাবেক অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান সিকদার বাবু’র নির্দেশ অকপটেই পালন করে গেছেন কলেজ এড়িয়াতে। এই শিক্ষক আরো জানান, বলতে গেলে পুরো কলেজটিই তার নিয়ন্ত্রনে। শিক্ষকরা তো জিম্মিই। কলেজের কোনো সিদ্ধান্ত এই বাবুর কনসাল্ট ছাড়া হয় না। কয়েক মাস পূর্বে এক শিক্ষক নেতা মারও খেয়েছেন বাবু’র হাতে। তাছাড়া কলেজে যত উন্নয়নমূলক কাজ হয় তা সবই তার শেল্টারে এবং অন্য কেউ করলে তাকে পার্সেন্টিজ না দিয়ে কিছুই করতে পারে না। কিছুদিন পূর্বে কলেজে একটা সড়ক নির্মাণ নিয়ে দুর্নীতির যে অভিযোগ ওঠে তার সাথেও এই বাবু জড়িত রয়েছে। এসময় এক সংবাদকর্মীর ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টাও করে বাবুর লোকজন। ওই সময় জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত, আতিকুল্লাহ মুনিম, রইজ আহম্মেদ মান্না ও রাজীব হোসেন খান গিয়ে বিষয়টি রফাদফা করে। পরে তারা তাদের উর্ধ্বতন নেতার নির্দেশে পরের দিন ওই সড়কের কাজ বন্ধ রাখার জন্য বললেও কাজ থেমে থাকেনি এবং সড়কটি নিন্মমানের সামগ্রী দিয়েই নির্মাণ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে সে সময় কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. গোলাম কিবরিয়াও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। কিন্তু কোনো কিছুতেই কোনো কাজ হয়নি। শুধু তাই নয়, এই বাবু শিক্ষক নেতাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বলেও জানিয়েছেন কলেজের এক চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। কলেজের এক ছাত্রলীগ নেতা জানান, ২০০৩ সালে সরকারি ব্রজমোহন কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়। সে সময় গাজী আতাহার শুভকে আহবায়ক করে এই কমিটি ঘোষণা করে মহানগর ছাত্রলীগ। ওই কমিটিতে সদস্য সচিব ছিলেন আহসান উল্লাহ মিরাজ ওরফে গোল বাবু। ২০১৪ সালে বিএম কলেজসহ নগরীর ৪ কলেজের ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি জসীম উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক অসীম দেওয়ান। দীর্ঘদিন কোনো খোঁজ খবর না থাকলেও ২০১৮ সালের শেষের দিক থেকে হঠাৎ করে ছাত্রলীগের উঠতি নেতাকর্মীদের হটিয়ে অদৃশ্য ছোঁয়ায় কলেজের আধিপত্য নিয়ে নেয় গোল বাবু। ওই সময় সে অবৈধভাবে ভূয়া কাগজপত্র দিয়ে কলেজে ভর্তিও হন এবং খোলেন ক্রীড়া ক্লাব নামের সংগঠন। সেই থেকেই শুরু হয় তার দখলদারিত্ব। কলেজের সব কিছুতেই তার ভাগ থাকবে এমনটাই ঘোষণা তার। তার কারণে কোনঠাসা হয়ে পড়েছে ছাত্রলীগের ত্যাগী নেতারা। টাকা ভাগের সময় হঠাৎ হঠাৎ শো-ডাউনে কলেজ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাও পড়েছেন কোনঠাসা হয়ে।
ওই ছাত্রলীগ নেতা অরো জানান, এগুলো অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিৎ। আগে দেখতাম বিএম কলেজের উন্নয়মূলক কাজগুলো শিক্ষকদের সমন্বয়ে হয়ে থাকে। কিন্তু এখন দেখছি শিক্ষকদের কোনো গুরুত্বই নেই। সব কিছুতে তার ভাগ চাই। বিএনপি’র ঠিকাদারদের সাথে পার্সেন্টিজের হিসেবে কাজ বাগিয়ে দিচ্ছেন তিনি। কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দর আরো কঠোর হওয়া উচিৎ। তা না হলে ঐতিহ্যবাহী এই কলেজের নাম নষ্ট করবে এই বসন্তের কোকিলের মত লোকজন। রহমান সিকদার নামে কলেজের এক ছাত্র জানান, সব কিছুই তো বাবু ভাইর দখলে। যে দিকে তাকাই সেদিকেই বাবু ভাই। এর মধ্যে তো তার ওই ক্লাবের নামেও একটি টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছিলেন বিএম কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের মাঠে। কিন্তু করোনার কারণে তা হয়নি। শুনেছি ওই টুর্নামেন্টের নাম করে কলেজ ফান্ড থেকে ভালো টাকা হাতিয়েছেন তিনি। এসব অভিযোগের বিষয়ে আহসান উল্লাহ মিরাজ ওরফে বাবু বলেন, আপনার যা ইচ্ছে লিখুন আমি কোনো তথ্য দিতে বাধ্য নই। অপর এক প্রশ্নে সিভিল সার্জন অফিসের কোন পদে রয়েছেন জানতে চাইলে কোন সদুত্তর না দিয়ে সংযোগ বিছিন্ন করে দেন তিনি। অপরদিকে বিএম কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. গোলাম কিবরিয়া বলেন, ক্রীড়া ক্লাব নামে বিএম কলেজে কোনো সংগঠন নেই। এটা কারা কি করছে তাও কিছু জানি না। টুর্নামেন্টের বিষয়ও আমি কিছু জানি না এবং কার দখলে কি রয়েছে সে বিষয়টাও তিনি জানাতে পারেননি।