গলাচিপা
গোপাল সাধু ও অরুণ দাসের সন্ন্যাস জীবন
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ গোপাল সাধু (৬৫) ও অরুণ দাসকে (৫২) পটুয়াখালীর গলাচিপা পৌরসভায় চেনে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। উপরে বাম দিক থেকে ছবির প্রথম জন গোপাল সাধু আর দ্বিতীয় জন অরুণ দাস। দু’জনই গলাচিপা পৌরসভায় বসবাস করেন। গোপাল সাধু হলেন পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকার মৃত দিনেশ দাসের ছেলে। আর অরুণ দাস হলেন পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ধোপা বাড়ির মৃত অনিল দাসের ছেলে।
গোপাল সাধু ও অরুণ দাসের মধ্যে রয়েছে আত্মার সম্পর্ক। একজন আরেক জনকে দেখলেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠেন। দু’জনের জীবন-যাপনেও অনেক মিল। তাদের কেউই বিবাহ করে সংসার জীবন করতে পারেনি। দু’জনই মানুষের কাছ থেকে ১০/২০ টাকা নিয়ে দিনে ২/১ বার বুট-মুড়ি কিংবা অন্য কোন শুকনো খাবার খেয়ে কোন রকমে দিন কাটান। তারা তাদের আত্মীয় বা পরিচিত কারো ঘরের বারান্দায় কিংবা রান্না ঘরের পাশে অযত্ন অবহেলায় রাত কাটান। এভাবেই চলে তাদের জীবন-যাপন। এতেই তারা বেজায় খুশি।
গোপাল সাধু ও অরুণ দাস সর্বদাই হাসি-খুশি থাকেন। তারা কখনোই মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করেন না। এজন্য সকলেই তাদেরকে ভালবাসেন। দুষ্ট ছেলে-মেয়েরা অনেক সময় তাদের নিয়ে ঠাট্টা করেন।
মজার ব্যাপার হলো এই – গোপাল সাধু পরিচিত মানুষকে দেখে বলেন, ‘তুই বিয়া কইর্যা কী করলি? ভগবানেরে খোঁজ্, পাইয়া যাবি।’ আবার অরুণ দাস পরিচিত মানুষকে দেখে বলেন, ‘দোয়া করি, তুই ভাল থাহিস্। আশীর্বাদ করি, তুই ভাল থাহিস।’ কথাগুলো তাদের রীতিমতো অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। এগুলো এখন লোকমুখে ফেরে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোপাল সাধু এক সময় গলাচিপা পোস্ট অফিসের ডাক পিয়ন ছিলেন। চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পরেই তার এই সন্ন্যাস জীবন শুরু হয়েছে। জীবনে তিনি কেন বিবাহ করেননি তার প্রকৃত কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে অনেকের ধারনা, তিনি ছোটবেলা থেকেই আধ্যাত্মিকতায় আকৃষ্ট ছিলেন এবং সাদাসিধে জীবন-যাপন করতে পছন্দ করতেন। বেশিরভাগ সময়েই তাকে হাসপাতাল রোডে দেখা যায়।
অরুণ দাস এক সময় কাজ-কর্ম করে টাকা উপার্জন করতেন। প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি সব ধরনের কাজ-কর্ম করা থেকে বিরত রয়েছেন। তবে ক্ষুধার তাড়নায় অনেক সময় অন্যের দোকানে খাবারের পানি টেনে ১০/২০ টাকা পেয়ে তা দিয়ে তিনি কিছু শুকনো খাবার কিনে ক্ষুধা নিবারণ করেন। আত্মীয়-স্বজনরা তাকে দিয়ে কোন কাজ-কর্ম করাতে না পারায় তার আর বিয়েশাদি করা হয়নি। উদাসীনতার কারণেই তাকে এখন সন্ন্যাস জীবন বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। আপনজনরা বিরক্ত হয়ে তার কোন খোঁজই নেন না। বেশিরভাগ সময়েই তাকে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে দেখা যায়।