বরিশাল
খোকন সেরনিয়াবাত এর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হাতপাখা
গাজীপুরের মত বরিশালের ফলাফলে সৃষ্টি হতে পারে চমক
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ গাজীপুরের মতো বরিশালেও আওয়ামী লীগ বিভক্ত। দলীয় এই বিভক্তি বরিশাল সিটি নির্বাচনের ফলাফলে চমক সৃষ্টি হতে পারে এমনটি মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল যে তীব্র আকার ধারণ করেছে গাজীপুরের নির্বাচন তার প্রমাণ এবং বরিশালেও যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগকে তার কোন্দল মেটানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে সবার আগে। গাজীপুরের নির্বাচনে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ বিরোধী সবাই একাট্টা হয়েছিল জাহাঙ্গীরের মায়ের পক্ষে। বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল গাজীপুরে আওয়ামী বিরোধী প্রার্থী হিসেবে জায়েদা খাতুনকে ভোট দিয়েছে। বরিশালে এমনটি ঘটতে পারে বলে আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা আশঙ্কা করছেন।
তারা বলছেন, বিএনপি এই নির্বাচনে নাই বটে তবে তারা শেষ পর্যন্ত ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীকে গোপনে সমর্থন দিতে পারে এবং আওয়ামী বিরোধী ভোটগুলো মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিমের পক্ষে যেতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন। তাছাড়া এখানে আওয়ামী লীগের বিভক্তি থাকার কারণে আওয়ামী লীগের একটা অংশও গোপনে চাইবেন খোকন সেরনিয়াবাদকে হারাতে। গত দুই বছরের নির্বাচনগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় অধিকাংশ স্থানেই হাতপাখা প্রতীক নিয়ে ইসলামী আন্দোলন হয় তৃতীয় না হলে চতুর্থ হয়েছে। গড় ভোট পেয়েছে ২০ হাজারের কাছাকাছি। গাজীপুর সিটি করপোরেশেনের নির্বাচনে হাতপাখা প্রতীক নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী তৃতীয় হয়েছেন। ভোট পেয়েছেন ৪০ হাজারের বেশি। এটি রাজনীতিতে একটি নতুন মেরুকরণ বলে মনে করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত এর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হাতপাখা। সেখানে ইসলামী আন্দোলনের দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ইসলামী আন্দোলনের মূল নেতা মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম প্রার্থী হয়েছেন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হলেও অবাক হবার কিছু হবে না বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
ইসলামী আন্দোলন নির্বাচনের রাজনীতিতে আস্তে আস্তে বড় একটি শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। চরমোনাইয়ের পীর কেন্দ্রিক এই রাজনৈতিক দলটি ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল এবং জামাত বিরোধী হিসেবে পরিচিত। আর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করতে চাইছে এবং তার অন্যতম উদ্যোক্তা ইসলামী আন্দোলন এবং হাতপাখা। যারা এই পর্যন্ত অন্তত ১৫ টি ইসলামী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলেছে। তাদেরকে এক ছাতার নিচে নিয়ে এসে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করার বিষয়টি বিবেচনা করছে।
বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সব জেলাতেই ইসলামী আন্দোলন এর সংগঠন বিস্তৃত করা হয়েছে এবং সংগঠনকে শক্তিশালী করার একটি প্রতিযোগিতা দেখা যাচ্ছে। এই দক্ষিণপন্থী মৌলবাদী রাজনৈতিক দলটির কর্মীরাই আবার তারাই নির্বাচন কেন্দ্রগুলো পাহারা দিচ্ছে বিভিন্ন ভোটে। যার ফলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভরাডুবি হলেও ভোট সংখ্যা কমে গেলেও হাতপাখা প্রতীক নিয়ে ইসলামী আন্দোলন নির্বাচনে একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক ভোট পেয়ে যাচ্ছে।
গত বছরের ২০টি নির্বাচন পর্যালোচনা করে দেখা যায় এর মধ্যে ১১টি নির্বাচনেই হাতপাখা প্রতীক নিয়ে ইসলামী আন্দোলন জাতীয় পার্টিকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। তাহলে আগামী নির্বাচনে কি ইসলামী আন্দোলন নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে? এর সঙ্গে যদি আবার অন্যান্য ইসলামী দলগুলো যুক্ত হয় তাহলে সেটি একটি বড় শক্তি হিসেবে কাজ করবে। কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন ইসলামী আন্দোলনকে সরকারই পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। শেষ পর্যন্ত যদি আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করে তাহলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচন করবে এবং সেই নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ করা হবে। আর তাতে ইসলামী আন্দোলনের মতো রাজনৈতিক দলগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পর আস্তে আস্তে জামাত কোণঠাসা হয়ে পড়েছে এবং ইসলাম পছন্দ অনেক ব্যক্তি ইসলামী আন্দোলনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এই কারণেই ২০০৯ এর পর থেকে ইসলামী আন্দোলন আস্তে আস্তে বিকশিত হচ্ছে। তবে দলটির নেতাকর্মীরা তা মনে করে না। তারা মনে করে যে উদারনৈতিক ইসলামের প্রচার করে তারা জনগণের কাছাকাছি যাচ্ছে এবং তাদের সংগঠনকে বিস্তৃত করছে। আওয়ামী লীগ যতই জনপ্রিয় থাকুক এবং আওয়ামী লীগ নির্বাচনের জন্য যতই প্রস্তুতি নিক, অভ্যন্তরীণ কোন্দল আওয়ামী লীগের জন্য এক ধরনের বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। আর সে কারণেই গাজীপুরের মত বরিশালের ফলাফলে যদি চমক সৃষ্টি হয়, তাহলে অবাক হবার কিছু নাই-বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।