গলাচিপা
গলাচিপায় ঘূর্ণিঝড়ের ১২ দিন পরও বিদ্যুৎ সংযোগ পায়নি বিদ্যালয়সহ অর্ধশতাধিক গ্রাহক
নিজস্ব প্রতিবেদক : ঘূর্ণিঝড় রেমাল অতিবাহিত হওয়ার ১২ দিন পরও গলাচিপা উপজেলার এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগ পায়নি বলে অভিযোগ তোলেন ভুক্তভোগীরা। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ পল্লী বিদ্যুৎ এর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেও মেলেনি বিদ্যুৎ সরবারহ। জানা গেছে, উপজেলার সদর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া বাঁধ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ এখনো দেয়া হয়নি। বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের গাফিলাতির কারণে এটি ঘটেছে বলে অভিযোগ করছে ভুক্তভোগীরা।
আরো বিদ্যালটিতে ২২১ জন ছাত্র-ছাত্রী আর শিক্ষক রয়েছে পাঁচজন। গত রোববার প্রলঙ্করী ঘূর্ণিঝড় রেমাল আছড়ে পড়ে উপকূলজুড়ে। ওই দিনই উপজেলার সর্বত্র বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তবে, ১২ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সরবারহ লাইন ছিড়ে পড়ে আছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানোর পরও এর কোনো সুরাহা হচ্ছে না।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক ও সহকারী শিক্ষিকা জান্নাত চৌধুরী জানায়, ‘তীব্র গরমে বিদ্যুৎ ছাড়া শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে মনোযোগ দেয়া যাচ্ছে না। এতে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী মুমিন ইসলাম ও সাওদা মনি, দ্বিতীয় শ্রেণির হুমায়রা ও আবির হোসেন, তৃতীয় শ্রেণির বুশরা এবং পঞ্চম শ্রেণির মারিয়াসহ আরো অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এছাড়া বিদ্যুৎ না থাকায় ওয়াশ ব্লকে পানি উঠানো যাচ্ছে না। যাতে করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’
বোয়ালিয়া নিবাসী ওই বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য নাসির উদ্দিন জানান, ‘টানা ১৬ ঘণ্টা ঘূর্ণিঝড়টি স্থায়ী হয়। ঝড়টি থামার সাথে সাথেই বিদ্যালয়ের কাছাকাছি অহিদ গাজী ও নিয়ামত মিয়ার দু’টি বরফকলে বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়ে যায়। এত তাড়াতাড়ি বিদ্যুৎ কিভাবে পেল এর রহস্য কী। কিন্তু তারও দু’দিন পরে স্কুল পার্শ্ববর্তী বোয়ালিয়া বাজারে বিদ্যুৎ সরবারহ দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিদ্যালয়টিতে এখনো বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।’
এ দিকে, উপজেলার পক্ষিয়া গ্রামের রেজাউল মৃধা ও আনছার মৃধা ও চিনারা বেগমের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ পায়নি। মিটার ভেঙে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে দু’জনের কাছে ২৪০০ টাকা দাবি করেছে বলে জানালেন স্থানীয় তালেব মৃধা। পানপট্টি ইউনিয়নের তুলারাম গ্রামে এখনো ১২টি পরিবার বিদ্যুৎ সংযোগ পায়নি।
কলাগাছিয়া গ্রামের এবাদুল হক বাদল, রতনদী তালতলী গ্রামের কাছারিকান্দা গ্রামের নিঠুর চন্দ্র পাল, গোলখালী ইউনিয়নের বলইবুনিয়া গ্রামের আলামিন পাহলান বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ ঠিক করে না দেয়ায় পরিবারগুলো অন্ধকারে আছে।
এছাড়াও গলাচিপা উপজেলা বিদ্যুৎ অফিসে বিরুদ্ধে রয়েছে আরো অনেক অভিযোগ। নতুন লাইন সংযোগ ও মিটার পাওয়া অথবা যেকোনো সমস্যার জন্য অফিসে গেলে টেবিল নিয়ে বসে থাকে ইলেকট্রিশিয়ানরা। এ সকল সমস্যার সমাধান ইলেকট্রিশিয়ানদের মাধ্যমে করতে হয়। এই ইলেকট্রিশিয়ানদের মাধ্যমে গলাচিপা পল্লী বিদ্যুৎ অর্থ লেনদেন করে থাকে। এছাড়া সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অধিক অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন সুবিধা গ্রহণ করতে হয় জনগনকে।
ইলেকট্রিশিয়ানরা তাদের মোটরসাইকেল সামনে পটুয়াখালী পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির জরুরী বিদ্যুৎ স্টিকার লাগিয়ে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরতে দেখা যায়। এ ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞেস করলে প্রতিবেদককে জানান, ‘তারা এই প্রতিষ্ঠানের কেউ না।’
গলাচিপায় বিদ্যুৎ বিল নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। বিদ্যুৎ বিলের কাগজগুলো ইউনিয়নগুলোতে বাড়ি বাড়ি না গিয়ে এক জায়গায় দিয়ে আসে। বিলের টাকা জমা দেয়ার মেয়াদ শেষ হবার মাত্র এক দুই দিন আগে বিলের কাগজগুলো গ্রাহকদের কাছে পৌঁছায়। এতে করে অনেক সময় গ্রাহকরা জরিমানাসহ বিলের টাকা গুনতে হচ্ছে।
গলাচিপা পল্লী বিদ্যুৎ ডিজিএম মো: মাইনুদ্দিন গলাচিপা অবস্থান না করায় মুঠোফোনে অর্থ লেনদেন ও বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ না দেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে নিউজ না করার জন্য প্রতিবেদককে অনুরোধ করেন।