বরিশাল
মূল হোতা কাজল গং
কালোবাজারে সরকারি ফার্মের ডিম
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নগরীতে সরকারি মুরগির ফার্মের ডিম কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে হরদম। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ২৫ বছর কর্মরত থেকে এমএলএসএস কাজল তৈরী করেছে এই সিন্ডিকেট। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ডিম কালোবাজারে বিক্রি করতে গিয়ে একাধিকবার হাতেনাতেও ধরা পড়েছে কাজল। শুধু তাই নয়, কাক ডাকা ভোরে কিংবা রাতে ঝোঁপ বুঝে কোপ মেরে কালোবাজারের ক্রেতাদের কাছে ডিম বিক্রি করা হয়। সূত্রে জানা গেছে, নগরীর আমানতগঞ্জস্থ সরকারি মুরগির ফার্মে খামারিদের সুলভ মূল্যে বাচ্চা ও ডিম সংগ্রহ করা হয়। পাশাপাশি খামার তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানসহ টার্গেটের বেশি উৎপাদিত ডিম বাজার দরের চেয়ে কম মূল্যে বিক্রি করার নিয়ম রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। কিন্তু উৎপাদিত ডিম সাধারণ মানুষের মধ্যে বিক্রি না করে বাজার রোডস্থ পাইকারদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করা হয়। বর্তমানে বাজারে ডিমের হালি ৩৬ টাকা। কিন্তু জনগণের মধ্যে বিক্রি করতে গেলে ফার্ম কর্তৃপক্ষকে বিক্রি করতে হয় ২৭/২৮ টাকা। তাই এই ডিম যদি কালোবাজারের পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হয় তাহলে ৩০/৩১ টাকায় বিক্রি করা যায়। সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে সরকারি ডিম পাইকারি বাজারে বিক্রি করছে কাজল গংরা। শুধু তাই নয়, সরকারি মুরগির ফার্মের ডিম দেখতে দেশী মুরগির মতো হওয়ায় এটিকে দেশী মুরগির ডিম বলে বিক্রি করতে সক্ষম হয়। আর এতে ক্রেতাদের কাছে হালি প্রতি দাম হাকানো হয় ৩৮/৪০ টাকা। সপ্তাহে ৪/৫ দিন ডিম বিক্রি করা হয় ফার্মটি থেকে। সূত্রে আরো জানা যায়, মুরগির ফার্মটিতে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে মুরগির বাচ্চা উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ৫০ হাজার। আর ডিম উৎপাদন লক্ষমাত্রা রয়েছে ২লাখ ৭০ হাজার। পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিত চরাঞ্চলের জনবলদের সাবলম্বী হওয়ার জন্য প্রকল্পর মাধ্যমে ৯০ টাকা দরে ৭ হাজার মুরগি দেয়া হবে। এছাড়া ফার্মে উৎপাদিত লেয়ার মুরগি ৭২ সপ্তাহের পর বিক্রি করে দেয়া হয় কারণ তখন ওজন বেড়ে যায় খাবার বেশি লাগে এবং ডিম তেমন দেয় না। আর এই ধরনের মুরগি বিক্রি করা হয় ১২০ টাকা দরে আর ২-২৮ দিনের বাচ্চা বিক্রি করা হয় ৬০ টাকা দরে। লেয়ার মুরগি মূলত ডিম উৎপাদনের জন্যই পালন করা হয় এবং ৭৫ সপ্তাহ পর্যন্ত এর জীবনকাল ধরা হয়। আর এই সময়ে একেকটি লেয়ার মুরগি ৪শ’ টি পর্যন্ত ডিম দেয়। এদিকে স্থানীয় একাধিক ভুক্তভোগী সূত্র জানায়, আমরা খেটে খাওয়া মানুষ বাজার দরের চেয়ে একটু কম দামে ডিম পেয়ে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে পারি। অথচ আমরা যখন ডিম কিনতে যাই তখন জনপ্রতি সর্বোচ্চ ১/২ ডজন ডিম নিতে পারি এবং এরপরই বলা হয় ডিম নেই। অথচ ওদের কালোবাজারি সিন্ডিকেটের লোকজনকে কায়দা বুঝে হাজার হাজার ডিম দিয়ে দেয়। এ নিয়ে কয়েকবার হাতেনাতেও ধরা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির এমএলএসএস কাজলকে। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। এ ব্যাপারে ফার্মের এমএলএসএস কাজলের ০১৯৩৩৫১৭৬৩২ নম্বরে ফোন দিলে তিনি বলেন, ভাই অফিসে আসেন কথা বলি। এরপর বলেন, অনেকেইতো ডিম নিতে আসে এবং আপনারাওতো ডিম নেন। শুধু শুধু কেন নিউজ করবেন? ডিম কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগের ব্যাপারে তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, আমাদের এডি স্যারের সাথে কথা বলেন আমি এখন গোসলে যাবো বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। সূত্রে জানা যায়, এমএলএসএস কাজল প্রায় ২৫ বছর ধরে একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকার পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ে এক আত্মীয় বড় পদে চাকুরী করার সুবাদে একটি প্রভাব বলয় তৈরী করে কালোবাজারি সিন্ডিকেট বহাল রেখেছেন। কাজলের এমন কাজের ব্যাপারে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে তিনি বলেন, আপনারা কিছুই করতে পারবেন না, গোঁড়ায় আমার লোক আছে। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এডি. মো: অব্দুল হান্নান বলেন, আপনাদের কোন তথ্য জানার দরকার থাকলে আমাদের তথ্য কর্মকর্তার কাছ থেকে জেনে নিবেন। কিন্তু এহেনো দুর্নীতির ব্যাপারে কথা বলতে তিনি রাজি হননি তিনি। সরকারি মুরগির ফার্মের ডিম কালোবাজারে সিন্ডিকেটের ব্যাপারে একাধিক সূত্র আরো জানায়, মূলত সরকারি এ মুরগির ফার্মটি আগাগোড়া একটি সিন্ডিকেট। আর সামনের সাড়িতে এমএলএসএস কাজলকে রাখা হয়েছে মার্কেট ম্যানেজ করার জন্য। নগরীর বাজার রোডসহ বিভিন্ন বাজারের ডিমের আড়ত ও হোটেলগুলোই কাজল গংদের ডিমের অন্যতম ক্রেতা।