বরিশাল
বরিশালে বহিস্কৃত বিএনপি নেতা মন্টির ত্রাস!
বরিশাল বিএনপির বহিস্কৃত নেতা সাগর উদ্দিন মন্টির বিরুদ্ধে এবার আপন ভাতিজির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখল চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই দখলসন্ত্রাসে তিনি ব্যর্থ হয়ে পিতৃহারা ত্রিশোর্ধ্ব সুরমা আক্তারসহ স্বজনদের মারধর করাসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করে আসছেন। এবং সর্বশেষ বরিশাল সদর রোডস্থ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখল করে নেওয়ার চেষ্টাসহ ভাড়াটিয়াদের হুমকি-ধামকি দেন, দিচ্ছেন। নির্দয় বিএনপির নেতার সন্ত্রাসে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে ভাইয়ের মেয়েরা সোমবার আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। অবশ্য এর আগে বিএনপি নেতা মন্টির বিরুদ্ধে ভাতিজি সুরমা আদালতে একটি নালিশি করেছেন।
আলোচিত সাগর উদ্দিন মন্টি বরিশাল মহানগর বিএনপির ১৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভুত্থ্যানে আওয়ামী লীগ শাসনের পরিসমাপ্তি ঘটলে তিনি ক্ষমতার ভারসাম্য ধরে রাখতে পারেননি। ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে তিনি
বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সৈয়দ গোলাম মাসউদ বাবলুকে মারধরসহ অপহরণের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হলেও বিষয়টি তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি করে। এবং
ওই ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পাশাপাশি হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে শহরে মানববন্ধন হয়। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে মন্টিকে দল থেকে বহিস্কার করতে বাধ্য হয় বরিশাল মহানগর বিএনপি।
সেই বিতর্কিত বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে এবার আপন বড় ভাইয়ের মেয়েদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখল এবং তাদের মারধরের ঘটনা খোদ সংবাদকর্মীদের হতবাক করে দিয়েছে। সোমবার বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ভাতিজিদের একজন সুরমা আক্তার মিডিয়াকর্মীদের কাছে ছোট চাচার কুকীর্তি তুলে ধরেন।
তিনি অভিযোগ করেন, পৈত্রিক সূত্রেপ্রাপ্ত ১ শতাংশ ভূমিতে যমুনা ব্যাকের শাখাসহ একটি ‘জুস বার’ রয়েছে, যা থেকে উপার্জিত অর্থ দুই বোন ভাগাভাগি করে নেন। এবং এ থেকে একটি অংশ ফরায়েজ আইন মোতাবেক ছোট চাচা বহিস্কৃত বিএনপি নেতা সাগর উদ্দিন মন্টিও পেয়ে থাকেন। আরও তিন ফুফুর ছেলেসন্তান না থাকায় তারাও মন্টিকে ফরায়েজ দিয়ে যাচ্ছেন। প্রত্যাশিত টাকা নেওয়ার পরেও তিনি প্রতিমাসে ভাড়াটিয়াদের গালিগালাস করাসহ ভাইয়ের মেয়েদের শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করে আসছেন।
অভিযোগ আছে, বিএনপি নেতার নির্যাতনে ওষ্ঠাগত হয়ে বছর দুয়েক পূর্বে তার বিরুদ্ধে বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালি মডেল থানায় চাঁদাবাজি মামলা করতে বাধ্য হন ভাইয়ের মেয়ে সুরমা আক্তার। তখন গ্রেপ্তার আতঙ্কে মন্টি কিছুদিন আত্মগোপনে থেকে আত্মীয়-স্বজনদের হাতে-পায়ে ধরে ভাতিজিকে ম্যানেজ করেন। এবং আগামীতে কোনো প্রকার হয়রানি বা চাঁদাবাজি করবেন না মুচলেকা দিলে চাচাকে ক্ষমা করে দিয়ে মামলাটি তুলে নেন সুরমা।
সুরমা আক্তারের অভিযোগ, গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতন হলে চাচা সাগর উদ্দিন মন্টি ফের চোখ রাঙানো শুরু করেন এবং তাদের দুই বোনকে ভয়ভীতি দেখানোসহ ভাড়াটিয়া অভিজিৎ দত্তের কাছে প্রায় সময়ই অর্থ দাবি করেন। প্রথম প্রথম তার চাহিদা ১০ হাজার, ২০ হাজার থাকলেও এখন জুসবারের পুরো ভাড়া কব্জা করতে চাইছেন। এনিয়ে গত ২৬ জুলাই দোকান মালিক অভিজিৎ দত্তের সাথে তর্কে জড়িয়ে তাকে হেনস্থাও করেন। খবর পেয়ে সুরমা আক্তার ঘটনাস্থলে ছুটে গেলে তাকেও গালাগালি করাসহ শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন বহিস্কৃত বিএনপি নেতা সাগর উদ্দিন মন্টি। এই তথ্যের সত্যতা জুসবার মালিক অভিজিৎ দত্ত নিশ্চিত করেন।
সুরমা আক্তারের ওই সংবাদ সম্মেলেন তার মৃত চাচা কবির উদ্দিনের স্ত্রী মহসিনা কবিরও উপস্থিত ছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন, ছেলেসন্তান না থাকায় মন্টিকে তিনিও আইন মোতাবেক ফরায়েজ দিচ্ছেন। কিন্তু এতেও মন্টি তুষ্ট নন, প্রতিনিয়ত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে ঝামেলা করছেন এবং তাদের হুমকি-ধামকি দেন।
বহিস্কৃত বিএনপি নেতা সাগর উদ্দিন মন্টির সন্ত্রাস থেকে রেহাই পেতে সংবাদ সম্মেলনের আগে সেমাবার বেলা ১১টার দিকে বরিশাল আদালতে একটি নালিশি করেন ভাতিজি সুরমা আক্তার। সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক নালিশি অভিযোগটি আমলে নিয়ে বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
পিতৃহারা ভাতিজিদের মারধর এবং হয়রানি করার বিষয়টি সম্পর্কে জানতে বহিস্কৃত বিএনপি নেতা সাগর উদ্দিন মন্টির ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে, বিতর্কিত মন্টি সোমবারও সদর রোডের বাসায় অবস্থান করেন। এবং তার বিরুদ্ধে ভাতিজিদের করা সংবাদ সম্মেলন সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, সংবাদ সম্মেলনের তার বিরুদ্ধে আনীত সন্ত্রাসী কার্যকলাপ নিয়ে সাংবাদিকেরা তাকে প্রশ্ন করতে পারেন এমনটা ভেবেই তিনি কারও ফোন ধরছেন না।’
তবে দলের নাম ভাঙিয়ে প্রভাব বিস্তার করে আত্মীয়-স্বজনদের হয়রানি করাসহ কোনো প্রকার অবৈধ কার্যকলাপ সহ্য করা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার। এই বিএনপি নেতা জানান, বিতর্কিত কর্মকান্ডের অভিযোগে তাকে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের শেষান্তে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। এরপরে বিএনপির নাম ব্যবহার করে তার কোনো কিছু করার সুযোগ নেই। যদি এরপরেও করে থাকে এর প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।’