বরিশাল
বাকেরগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেত্রীর দখলে পৌর গোরস্থান, দখলমুক্ত করার দাবি
বরিশালের বাকেরগঞ্জে ১৯৯০ সালে পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপরে প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় প্রতিষ্ঠিত হলেও উন্নয়নের দিক দিয়ে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা জায়, ১৯৯৭ সালে তৎকালীন পৌর চেয়ারম্যান মাহবুব আলমের উদ্যোগে পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডে মৃত মোসলেম আলী বেপারীর কাছ থেকে ৮০ শতাংশ জমি ক্রায় করে পৌর কর্তৃপক্ষ। এরপর সেখানে পৌরসভার কেন্দ্রীয় গোরস্থান নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। প্রথমেই পৌর চেয়ারম্যান মাহবুব আলম গোরস্থানের জমিতে একটি মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু করন। নির্মানাধীন পৌর গোরস্থানের উপর নজর পড়ে আওয়ামী লীগ নেত্রী নারী কাউন্সিলর আয়নোর। এরপর তার লোকজন দিয়ে ওই মসজিদ দখল করে একটি গৃহ নির্মাণ করে সেখানে বসবাস শুরু করে। এরপর ধারাবাহিকভাবে পৌরসভার ৮০ শতাংশ পুরো জমি দখলে নিয়ে নেয় এই আওয়ামী লীগ নেত্রী নারী কাউন্সিলর আনোয়ারা বেগম আয়নো।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ নেত্রী আনোয়ারা বেগম আয়নো তার মৃত্যু পিতা আব্দুর রশিদ দরবেশের নামে ওই সম্পত্তি কবুলিয়ত মূলে মালিকানা দাবি করে আদালত একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলাটি দীর্ঘ সময় পড়ে সুপ্রিম কোর্ট থেকে রায় পেলে পরবর্তীতে পৌরসভার তৎকালীন মেয়র লোকমান হোসেন ডাকুয়া পৌর গোরস্থানের পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এরপর পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডের বেশ কিছু মৃত ব্যক্তিদের ওই গোরস্থানের দাফন দেয়া হয়। এমনকি সাবেক পৌর মেয়র লোকমান হোসেন ডাকুয়ার নিজ অর্থায়নে ওই গোরস্থানে একটি মসজিদ নির্মাণ কাজ হাতে নেয়। সাবেক পৌর মেয়র লোকমান হোসেন ডাকুয়া ২০২২ সাল থেকে পৌরসভার কেন্দ্রীয় গোরস্থানের উন্নয়ন কাজ শুরু করলে আবারো মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী নারী পৌর কাউন্সিল আয়নো বরিশাল আদালতে আবার একটি মামলা দায়ের করে উন্নয়ন কাজে বাধা সৃষ্টি করেন। এরপর আবারও পৌর গোরস্থান নির্মাণ কাজ অন্ধকারে ঢাকা পড়ে যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের কেন্দ্রীয় গোরস্থানটি বর্তমানে দখলদারদের কবলে পড়ে চরম অব্যবস্থাপনায় পরিণত হয়েছে। মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রী নারী কাউন্সিলর আয়নো দীর্ঘদিন ধরে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মাধ্যমে গোরস্থানের জমি দখল করে বসত ঘর, গোয়ালঘর নির্মাণ করে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করছেন। এবং ওই গোরস্থানে থাকা পৌর কর্তৃপক্ষের বাগানের গাছ অনেক আগেই বিক্রি করে আত্মসাৎ করেছেন। এতে কবরস্থানটির পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং মৃত ব্যক্তিদের দাফনেও দেখা দিচ্ছে সমস্যা। গোরস্থানের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত হয়ে বৃষ্টির পানি জমে রয়েছে। গোরস্থানের মধ্যে থাকা কবর গুলো জঙ্গলে ঢাকা পড়েছে।
সরেজমিনে পৌর গোরস্থানে গেলে দেখা যায় জলিল হাওলাদার নামে এক ব্যক্তি পৌর গোরস্থানের মধ্যে বসতঘর ও গোয়ালঘর নির্মাণ করে বসবাস করে আসছেন।
এ সময় জলিল হাওলাদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আয়নোর কাছ থেকে ছয় হাজার টাকায় মৌখিকভাবে তিনি জমি ক্রয় করেছিলেন। তার জমি সে বুঝে না পেলে গোরস্থানের জমি দখল করে রেখেছেন।
তবে এ বিষয়ে পৌরসভায়ে জমি বিক্রেতা মোসলেম আলী বেপারীর স্ত্রী রোকেয়া বেগম জানান, এখানে জলিল কোন জমি ক্রয় করেনি। আওয়ামী লীগ নেত্রী আয়নোর নেতৃত্বে তিনি পৌরসভার জমি অবৈধভাবে দখল করে বসতঘর নির্মাণ করে রেখেছে।
এলাকাবাসী জানায়, গোরস্থানে প্রবেশের রাস্তা থেকে শুরু করে ভেতরের অনেক অংশই আগাছায় ঢেকে গেছে। কোথাও কোথাও আবার দখলদারদের স্থাপনা নির্মাণ করায় গোরস্থানের মূল সৌন্দর্য ও পবিত্রতা নষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থায় কবর রক্ষণাবেক্ষণেও পরিবারগুলো ভোগান্তিতে পড়ছে। গোরস্থানের সীমানা প্রাচীর না থাকায় অবাধে প্রবেশ করছে দখলকারীরা। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেত্রী আয়নোর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এই সম্পত্তি কবুলিয়ত রয়েছে তার বাবার নামে। তাই তিনি আদালতে মামলা করেছেন।
এ বিষয়ে পৌর প্রশাসক রুমানা আফরোজ বলেন, পৌর গোরস্থান উন্নয়ন কাজে কিছুটা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মামলা। আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির মাধ্যমে পৌরসভার একমাত্র গোরস্থান উন্নয়ন করার।