সারাদেশ
ছাদে টিকটক করার সময় বিদ্যুতায়িত মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে মায়ের মৃত্যু
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বাড়ির ছাদে টিকটক করার সময় বিদ্যুতায়িত মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে মায়ের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছে আরও দুজন। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার ছোট বিনাইরচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রোজিনা আক্তার টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানার কামারপাড়া এলাকার সোহের মিয়ার স্ত্রী। আড়াইহাজারে বিনাইচর এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন।আড়াইহাজার থানার ওসি খন্দকার নাসির উদ্দিন গণমাধ্যমকে এ ঘটনা নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, গত এক মাস আগে সোহেল মিয়া তার পরিবার পরিজন নিয়ে আড়াইহাজার বিনাইচর এলাকায় শফিকুল ইসলাম ভাড়া বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। সোহেল স্থানীয় একটি কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন।
সম্প্রসারণ কাজ চলায় ওই বাড়িটির ওপর দিয়ে বিদ্যুতের কভারবিহীন তারের সংযোগ লাইন যায়। ছাদ থেকে তারের দূরত্ব শরীরে স্পর্শ করে করলে বাড়ির মালিক স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসে কভার তার অথবা সংযোগ অন্যত্র দিয়ে ঘুরিয়ে নেওয়ার জন্য বার বার বললেও কর্তৃপক্ষ লাইনগুলো সরিয়ে নেয়নি। এর ফলে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে ছাদে ওঠানামা করতে হয়।
এদিকে সোহেল মিয়ার মেয়ে পুরুলিয়া আক্তার প্রায় সময়ই বাড়ির ছাদে গিয়ে টিকটক করেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে টিকটক করতে গিয়ে তারের সঙ্গে সুরভী আক্তারের শরীর স্পর্শ হয়ে যায়।
বিষয়টি দেখতে পেয়ে মা রোজিনা আক্তার ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে গিয়ে নিজেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। এ সময় বাঁচাতে তার দাদি মাসুদা বেগম (৬০) আহত হন। এ সময় তিনজনকে আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নেওয়া হলে চিকিৎসক রোজিনা আক্তারকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
স্বজনরা জানান, সুরভী আক্তার ও মাসুদা বেগমকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে ভর্তি করতে বলেন। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাড়ির মালিক শফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, বারবার পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে লাইনগুলো ঘুরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হলেও তারা কর্ণপাত করেননি। পল্লী বিদ্যুতের গাফিলতিতে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে।
নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিটি-২ এর আড়াইহাজার জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার টি এম মেসবাহ উদ্দীন বলেন, ‘দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বিদ্যুৎ অফিস থেকে একটি টিম পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তদন্ত রিপোর্টে ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যখন বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয় ভবনটি ছিল একতলা। পরে ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করায় বিদ্যুতের তারের দুরত্ব কমে যায়। তাই ওই এলাকায় আরও বড় বিদ্যুতের খুঁটি বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। ভিকটিমের বাড়ির এক পাশে খুঁটি বসানো গেলেও প্রতিবেশীদের বাঁধায় অন্যপাশে খুঁটি স্থাপন করা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। জটিলতা নিরসন করে দ্রুততম সময়ে খুঁটি বসানো হবে।’