ভোলা
ছাত্রদল কর্মী ইপ্সিতার মৃত্যু: অভিযুক্তদের খুঁজছে পুলিশ, তদন্তে অগ্রগতি নেই
ভোলা সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল কর্মী সুকর্ণা আক্তার ইপ্সিতার মৃত্যুর চার মাস পেরিয়ে গেলেও আজও মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।
এ বিষয়ে ভোলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরীফুল হক সম্প্রতি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘কলেজছাত্রী সুকর্ণা আক্তার ইপ্সিতার মৃত্যুটি নদীর মাঝে ঘটেছে। এ ছাড়া তাঁর মরদেহ উদ্ধার করেছে লক্ষ্মীপুর নৌ পুলিশ। সুতরাং, তারাই মামলার তদন্ত করছে। এ ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির বাড়ি ভোলা হওয়ায় আমরা শুধু একটি ছায়া তদন্ত করতে পারি। এ ছাড়া লক্ষ্মীপুর নৌ পুলিশ আমাদের কাছে সহযোগিতা চাইলে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’
চার মাসেও পুলিশ ইপ্সিতার মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন করতে না পারায় অনেকটা হতাশাগ্রস্ত ইপ্সিতার পরিবার।
ইপ্সিতার বাবা আজ মঙ্গলবার জানান, তাঁর মেয়ের মৃত্যুর ঘটনায় প্রথমে লক্ষ্মীপুর নৌ পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করলেও বর্তমানে সেই মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পিবিআইয়ের (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) ওপর। তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা থেকে পিবিআইয়ের একজন কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছেন, মেয়ের ডিএনএ টেস্ট করতে। ফলে আমরা ডিএনএ টেস্ট করিয়েছি। কিন্তু ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট এখনো আমরা হাতে পাইনি। ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট এবং লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এখনো পাওয়া যায়নি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর সদরের মজু চৌধুরীঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পুলিশ পরিদর্শক) ও মামলার বাদী মো. আজিজুল হক আজ রাতে বলেন, মামলাটি পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারাই মামলাটি তদন্ত করছে। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
পিবিআই নোয়াখালীর পুলিশ সুপার ফয়জুর রহমান বলেন, ‘মামলাটি তদন্ত করছেন পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক কামাল আব্বাস। এ ঘটনার তথ্য-উপাত্ত নিয়ে আমরা কাজ করছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ মামলার অগ্রগতি হবে বলে আশা করছি।’
উল্লেখ্য, গত ১৭ জুন ভোলা-ঢাকাগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ কর্ণফুলী-৪ থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ হয় ভোলা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল কর্মী সুকর্ণা আক্তার ইপ্সিতা। নিখোঁজের চার দিন পর লক্ষ্মীপুরসংলগ্ন মেঘনা নদী থেকে উদ্ধার করা হয় তাঁর মরদেহ।
চার দিন ধরে পানিতে থাকায় লাশটি অর্ধগলিত হয়ে গেছে। তাই, বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে ইপ্সিতার লাশ ২২ জুন সকালে দাফন করা হয়। ইপ্সিতার বাবা মো. মাসুদ রানা খবর পেয়ে মেয়ের লাশ শনাক্ত করেন।
নিহত ইপ্সিতার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত ১৭ জুন সকালের দিকে বাসা থেকে প্রাইভেট পড়ানোর কথা বলে বের হন ইপ্সিতা। পরে আর তিনি বাসায় ফেরেননি। পরদিন ইস্পিতার বাবা মাসুদ রানা ভোলা সদর মডেল থানায় নিখোঁজ দাবি করে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এ ঘটনায় ওই সময়ে ইপ্সিতার সহপাঠীদের ভেতরে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তাঁরা অনেকে এ ঘটনাকে একটি হত্যা উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশাসনের কাছে তদন্ত দাবি করে পোস্ট দেন। সুকর্ণা আক্তার ইপ্সিতা কলেজ ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল ইপ্সিতা হত্যার প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন ও শাস্তির দাবি জানিয়েছিল।