বরিশাল
হিজলায় গণছুটিতে পল্লী বিদ্যুতের কর্মীরা, ভোগান্তিতে গ্রাহক
বরিশালের হিজলায় চার দফা দাবিতে গণছুটিতে গেছেন পল্লী বিদ্যুতের কর্মীরা। কর্মী না থাকায় বিভিন্ন স্থানে বিকল হয়ে পড়া ট্রান্সফর্মার মেরামত করা যাচ্ছে না। এতে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অনেক এলাকা। বিদ্যুৎ না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন উপজেলার পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকেরা।
হিজলা পল্লী বিদ্যুতের উপ-আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে জানা গেছে, গতকাল রোববার সকাল থেকে কর্মীরা গণছুটিতে যান। কার্যালয়ের মাত্র ছয়জন কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত আছেন। তবে তাঁরাও বিদ্যুৎ বিভাগের কোনো কাজে অংশগ্রহণ করছেন না বলে জানিয়েছেন।
কাউরিয়া, মেমানিয়া ও হিজলা সদরে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্যে পল্লী বিদ্যুতের কার্যালয়টিতে ৫৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১৮ জনই লাইনম্যান। এসব লাইনম্যান বিদ্যুতের নতুন মিটার সংযোগ, মিটার পরিবর্তন, বিকল ট্রান্সফর্মার পরিবর্তন, ছেঁড়া তার জোড়া লাগানোসহ গ্রাহকসেবার বেশির ভাগ কাজ করে থাকেন। গতকাল ১০ জন লাইনম্যান বরিশাল পল্লী বিদ্যুতের মহাব্যবস্থাপক বরাবর ছুটির আবেদন করে কার্যালয় ত্যাগ করেন। দুজন আগে থেকে ছুটিতে রয়েছেন, দুজন প্রশিক্ষণে এবং চারজন কার্যালয়ে থাকলেও কোনো কাজ করেননি।
হিজলা পল্লী বিদ্যুৎ উপ-আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রকৌশলী ফাইজুল ইসলাম বলেন, পল্লী বিদ্যুতে অব্যবস্থাপনার অবসান, বদলির নামে হয়রানি বন্ধ, অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুতি ও বরখাস্তদের পুর্নবহাল এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য গণছুটি ও কর্মবিরতি পালন করছেন। কর্মীরা গণছুটি ও কর্মবিরতিতে থাকায় গ্রাহকদের কোনো সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অনেক গ্রাহক কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করলেও তাঁদের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। কর্মীরা কবে কাজে ফিরবেন, তা বলা যাচ্ছে না।
মেমানিয়া গ্রামের পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহক আব্দুল বাতেন বলেন, বাড়ির পাশে ট্রান্সফর্মার বিকল হওয়ায় তাঁদের এলাকায় ১০টি বাড়িতে বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ রয়েছে। এসব বাড়ির শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ফ্রিজের খাবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কবে নাগাদ বিদ্যুৎ পাওয়া যেতে পারে, তাও বলতে পারছেন না কর্মকর্তারা। এভাবে চলতে থাকলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।
কাউরিয়া বন্দরের পোলট্রি ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক বলেন, বাজারের একটি পোলট্রি খামারের বিদ্যুৎসংযোগ বন্ধ থাকায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। গ্রাহকদের জিম্মি করে পল্লী বিদ্যুতের কর্মীরা তাঁদের দাবি আদায়ের চেষ্টা করছেন। বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন। গ্রাহক অসন্তোষ তীব্র পর্যায়ে পৌঁছলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হিজলা উপ-আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) শ্যামল মণ্ডল জানান, পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকসেবার মূল চালিকাশক্তি হচ্ছেন লাইনম্যান। তাঁরা অনুপস্থিত থাকায় সেবা দিতে না পারায় গ্রাহকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। ১৮ জন লাইনম্যানের মধ্যে ১০ জন বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) বরাবর ছুটির আবেদন করে গণছুটি কর্মসূচি পালন করছেন। এ ছাড়া অন্য কাজে যোগদান করছেন না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং ছুটিতে থাকা কর্মীদের কাজে ফিরিয়ে গ্রাহকসেবা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।