বরিশাল
চরমোনাইতে চাঁদা না দেয়ায় ব্যবসায়ীকে নির্মম নির্যাতন, পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাইতে পিকনিকের জন্য দাবিকৃত চাঁদা না দেয়ায় মামুন হাওলাদার (৩০) নামের এক ব্যবসায়ীকে নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বরিশাল বিজ্ঞ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে ব্যবসায়ী মামুন বাদী হয়ে নামধারী পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন (যার নং-সি.আর ১৫৫২)। এরআগে শনিবার (১৯ জুলাই) রাতে চরমোনাই ইউনিয়নের শালুকা মীরা বাড়ি বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
মামলার আসামিরা হলেন- চরমোনাই ইউনিয়নের চরখানম এলাকার আদম আলী শিকদারের ছেলে শাহ আলম শিকদার, এফাজ উদ্দিন হাওলাদারের ছেলে নিজামুল হক হাওলাদার, আব্দুল হাকিম শরীফের ছেলে বাহাদুর শরীফ, মোখলেছুর রহমান খানের ছেলে আয়নাল হক খান, মৃত আফসের হাওলাদারের ছেলে হারুনুর রশিদ হাওলাদার। এছাড়া অজ্ঞতনামা ৪/৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে আসামিরা চাঁদাবাজির ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুরে মামলার বাদী মামুন হাওলাদার, মামলার সাক্ষী আকিব হোসেন ওরফে আপেল এবং মেহেদী হাসান চৌধুরীর বিরুদ্ধে এক সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শাহ আলম জানান, তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা বিভ্রান্তকর তথ্য প্রচারসহ পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক উপযুক্ত বিচারের দাবি জানান। তবে সংবাদ সম্মেলন করে সত্য ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়া যাবে না, এমনটাই জানান বাদী মামুন হাওলাদার।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডস্থ ফরফরিয়া তলা গ্রামের হারুন হাওলাদারের ছেলে মামুন হাওলাদারের সালুকা মীরা বাড়ি বাজারে ডেকোরেটার ও টেলিকমের ব্যবসা রয়েছে। গত ১৯ জুলাই পিকনিকের জন্য মামুনের দোকানে আসামি শাহ আলম শিকদারসহ অন্যান্যরা ১০ হাজার টাকা ও ডেকোরেটারের মালামাল দাবি করেন। তবে মামুন ডেকোরেটারের মালামাল দিতে রাজি হলেও টাকা দিতে রাজি হননি। এদিকে দাবিকৃত চাঁদা না পেয়ে ওই দিন রাত সাড়ে ১০ টার দিকে দোকান বন্ধ করে মামুন বাড়ি ফেরার পথে আসামী শাহ আলম শিকদার, নিজামুল হক হাওলাদার, বাহাদুর শরীফ, আয়নাল হক খান, হারুনুর রশিদসহ ৪/৫ জন অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র দা, লোহার রড, হকিষ্টিক, লাঠিসোটা নিয়ে তার পথরোধ করে পুনঃরায় ১০ হাজার টাকা ও ডেকোরেটারের মালামাল দাবি করেন। তখন দোকান বন্ধ করায় ডেকোরেটরের মালামালও দিতে অস্বীকার করলে মামুনকে তারা এলোপাথারী মারধর করে বাজারের একটি খুটির সাথে বেঁধে রাখে। এ সময় শাহ আলম শিকদারের হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে মামুনের চোখের নিচে পিটিয়ে জখম করে। এরপর নিজামুল হক হাওলাদার মামুনের পেটের নিচে কিডনী বরাবর লাথি মেরে গুরুতর জখম করে। পরে বাহাদুর শরীফ ক্ষিপ্ত হয়ে আয়নাল হক খান ও হারুনুর রশিদের সহায়তায় মামুনের শরীরে পয়জন ইনজেকশন পুশ করে। তখন মামুন প্রচন্ড ব্যাথায় কাতরাতে থাকলে তার পকেটে থাকা ব্যবসায়ের নগদ ২০ হাজার টাকা ও ১৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি স্যামসাং মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায় তারা। পরে স্থানীয়রা মামুনকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
ভূক্তভোগী মামুন বলেন- আমি একজন অসহায় ব্যবসায়ী। আমার আর্থিক অবস্থা তেমন সচ্ছল নয়। চাঁদা না দেয়ায় আমার উপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শাহ আলম শিকদার বলেন- ব্যবসায়ীদের মধ্যে তর্ক-বির্তকের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা বিভ্রান্তকর তথ্য প্রচারের পাশাপাশি আমাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র চলছে। সকল ব্যবসায়ীর সর্বসম্মতিক্রমে এক নৈশ ভোজের আয়োজন করা হয়। নৈশভোজের লাইটিং এর দায়িত্ব দেওয়া হয় বাজারের ডেকোরেটর ব্যবসায়ী মামুন হাওলাদারকে। সন্ধ্যায় লাইটিং সিস্টেমে সমস্যার সৃষ্টি হয়। বাজার ব্যবসায়ী মো. বাহাদুর শরীফ লাইটিং সিস্টেমের সমস্যা সমাধান করতে বলে মামুনকে। বিষয়টি নিয়ে দুই জনের মধ্যে তর্ক-বির্তকের একপর্যায় মামুন ইট দিয়ে আঘাত করলে বাহাদুর শরীফের ডান হাতের কব্জি রক্তাক্ত জখম হয়। পরে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে বিষয়টি সমাধান করা হয় এবং পরবর্তীতে সকলে মিলে একত্রে রাতের খাবার খাই।
এদিকে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার জোড় দাবি জানিয়েছেন ভূক্তভোগীর স্বজনরা।