বরিশাল
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চার মাসে ৩ প্রক্টর বদল, উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর পদে ঘন ঘন পরিবর্তন এক অনিশ্চিত প্রশাসনিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। দায়িত্ব পালনের মাত্র চার মাসের ব্যবধানে তিনজন প্রক্টর পরিবর্তনের ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্থিতিশীলতা ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সর্বশেষ সোমবার (২১ জুলাই) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রাহাত হোসাইন ফয়সালকে পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর আগে নানা বিতর্ক, পদত্যাগ ও দায়িত্বগ্রহণ না করার ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে প্রক্টরের চেয়ার বারবার পরিবর্তিত হয়, যা শিক্ষার্থীদের মাঝে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে পুনরায় দায়িত্ব পান কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রাহাত হোসাইন ফয়সাল। সোমবার (২১ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহসিন উদ্দীন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বিষয়টি জানানো হয়।
গত বছর ২৯ সেপ্টেম্বর ড. রাহাত হোসাইন ফয়সাল প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ১ মাস ২৯ দিনের মাথায় (গত বছর নভেম্বর মাসে) তিনি অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন। এরপরে ঐদিন প্রক্টর হিসেবে সাময়িক দায়িত্ব পান উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এ টি এম রফিকুল ইসলাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত প্রক্টর হিসেবে পরিচিত লাভ করেন উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সোনিয়া খান সনি। ড. সোনিয়া খান সনি গত বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব পান। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্কিত সাবেক রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়েছিল।
গত ৩০ এপ্রিল উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে প্রতীকী কফিন মিছিল ও গায়েবানা জানাজা আয়োজন করেন শিক্ষার্থীরা। সে-সময় এই প্রক্টরকে ‘মৃত’ ঘোষণা করেন তারা। ১৩ মে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনকে অব্যাহতি প্রদান করলেও স্বপদে বহাল থেকে যান ড. সোনিয়া খান সনি। এরপর ১৬ই জুলাই সাবেক এই প্রক্টরকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন।
এদিকে সম্প্রিতি দায়িত্ব পাওয়ার ৪ দিনের মাথায় প্রক্টরের পদ হারান বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন। যা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এক বিরল ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার ড. মোছা. সানজিদা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে গত ১৭ জুলাই সাবেক এই প্রক্টরকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
পরবর্তীতে গণমাধ্যমে সাবেক এই প্রক্টরের বিরুদ্ধে “নৌকার নির্বাচনী কমিটির সদস্য ছিলেন ববির নতুন প্রক্টর” শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে তিনি দায়িত্বে যোগদান না করার পরিপ্রেক্ষিতে ২১ জুলাই পুনরায় দায়িত্ব পান অধ্যাপক ড. রাহাত হোসাইন ফয়সাল।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বারবার পরিবর্তনের ফলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। উদ্বেগ বাড়ছে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং প্রশাসনিক স্থিতিশীলতায়। ঘন ঘন প্রক্টরের পরিবর্তন প্রশাসনিক কার্যক্রমেও ঘটছে ব্যাঘাত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো.সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রক্টরের প্রদান কাজগুলোর মধ্যে একটি হল শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। প্রক্টর ঘন ঘন পরিবর্তন হলে শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা বা অভিযোগের দ্রুত ও কার্যকর সমাধান নাও মিলতে পারে। যা তাদের নিরাপত্তা ও অধিকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, আমি মনে করি।’
আরেক শিক্ষার্থী ভিকারুল ইসলাম ভুবন বলেন, ‘এতবার প্রক্টর পরিবর্তনের ফলে প্রশাসনিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। নতুন প্রক্টরের নীতিমালা এবং কার্যপদ্ধতি ভিন্ন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অভিন্ন ও স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখা কঠিন হতে পারে।